তারকার সন্তান হয়েও বলিউডে প্রতিষ্ঠা পাননি। ইন্ডাস্ট্রিতে এমন নজির বিরল নয়। ব্যর্থ তারকাপুত্রদের মধ্যে একজন পুরু রাজকুমার। নিজের নামের পাশে বাবার পরিচয় উজ্জ্বল হয়ে ছিল বরাবর। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে বাবার জনপ্রিয়তার ধারেকাছেও যেতে পারেননি ছেলে।
অতীত দশকের সুপারস্টার রাজকুমার নিজের নাম পরিবর্তন করেছিলেন। কুলভূষণ পণ্ডিত থেকে অভিনয়জীবনে তিনি পরিচিত হন রাজকুমার নামে। ঠিক সেরকমই রুপোলি দুনিয়ায় পা রাখার সময় তাঁর ছেলে পুরু কুলভূষণ পণ্ডিত হয়ে গেলেন পুরু রাজকুমার।
পুরুর জন্ম ১৯৭০ সালের ৩০ মার্চ। উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে। পেনসিলভেনিয়ার গেটিসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বিষয় ছিল অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান এবং নাটক।
১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় পুরুর প্রথম ছবি ‘বালব্রহ্মচারী’। নায়িকা ছিলেন করিশ্মা কপূর। পুরুর প্রথম ছবি মুক্তির মাত্র দু’মাস আগে মারা যান রাজকুমার। নায়কের ভূমিকায় ছেলেকে তিনি দেখে যেতে পারেননি।
প্রকাশ মেহরার পরিচালনায় বড় ব্যানারের এই ছবি নিয়ে আশাবাদী ছিল ইন্ডাস্ট্রিও। কিন্তু বক্স অফিসে লক্ষ্মীলাভ অধরাই থেকে যায়। তবে নবাগত হিসেবে দর্শকদের নজর কাড়তে পেরেছিলেন পুরু।
প্রথম ছবির পরে চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল পুরুকে। ২০০০-এ মুক্তি পায় তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘হমারা দিল আপ কে পাস হ্যায়’। সে বছর মুক্তি পেয়েছিল তাঁর আরও একটি ছবি ‘মিশন কাশ্মীর’। কিন্তু দু’টির কোনওটিতেই নায়কের ভূমিকায় ছিলেন না পুরু।
পারিবারিক পরিচয় বা অভিনয় প্রতিভা, কোনওটির জোরেই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম সারির নায়ক হয়ে উঠতে পারেননি পুরু। বছরে তাঁর একটি বা দু’টি ছবি হয়তো মুক্তি পেত।
২০০১ থেকে ২০০৬ অবধি ‘খতরোঁ কে খিলাড়ি’, ‘দুশমনি’, ‘এলওসি কার্গিল’, ‘জাগো’, ‘উমরাও জান’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করেন পুরু। কিন্তু কোনও ছবিতেই একক নায়ক হয়ে ওঠা হয়নি। তারকাখচিত ছবির একটি মুখ হিসেবেই খুশি থাকতে হয়েছে তাঁকে।
২০০৬-এর চার বছর পরে আবার অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। ‘বীর’ ছবিতে দেখা যায় পুরুকে। এরপর আবার কর্মহীন। আরও চার বছর পরে, ২০১৪-এ মুক্তি পায় ‘অ্যাকশন জ্যাকসন’। এখনও অবধি এটাই তাঁর কেরিয়ারের শেষ ছবি।
নায়ক হিসেবে খ্যাতি না পেলেও বিতর্ক সঙ্গী হয়েছে পুরুর। সলমন খানের আগে তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন ‘হিট অ্যান্ড রান’ মামলায়। অভিযোগ, ১৯৯৩ সালে মুম্বইয়ের বান্দ্রায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে পুরু আহত করেছিলেন আট ফুটপাতবাসীকে।
আহতদের মধ্যে পরে তিন জন প্রাণ হারান। এই ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু পরে তিনি ছাড়া পেয়ে যান। তখনও তিনি অভিনেতা হননি। ফলে বিতর্কিত এই ঘটনা নিয়ে খুব বেশি জলঘোলাও সে সময় বা পরবর্তীতে হয়নি।
২০১১ সালে ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগ্রেবে বিয়ে করেন পুরু। তাঁর স্ত্রী কোরালিজিকা ক্রোয়েশিয়ার মডেল।
অভিনয়ের পাশাপাশি পুরুর আগ্রহ বিভিন্ন স্পোর্টসে। টেনিস ও স্কোয়াশ তাঁর পছন্দের খেলা। পাশাপাশি ভালবাসেন হর্স রাইডিং, স্কুবা ডাইভিং, রক্ ক্লাইম্বিংয়ের মতো অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসও।
পুরুর বোন বাস্তবিকাও বলিউডে পা রেখেছিলেন। তিনিও সাফল্য পাননি নায়িকা হিসেবে। পরে বিভিন্ন বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি।
পুরু অভিনীত বেশ কিছু ছবি শেষ অবধি মুক্তি পায়নি। সে প্রসঙ্গে আক্ষেপও করেছেন তিনি। তবে বাবার মতো তারকা হতে না পারায় তাঁর দুঃখ নেই। জীবনে চলার পথে যা পেয়েছেন, তা-ই নিয়ে খুশি থাকতে চান। ইন্ডাস্ট্রির চোখে ‘ব্যর্থ অভিনেতা’ হলেও পুরু তৃপ্ত নিজের পরিসরে।