(বাঁ দিকে) আদিপুরুষ ছবির পোস্টার। চন্দ্রযান ৩ (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া অন্যতম বড় বাজেটের ছবি ওম রাউতের ‘আদিপুরুষ’। প্রভাস ও কৃতি শ্যানন অভিনীত এই ছবি তৈরিতে খরচ হয়েছিল প্রায় ৭০০ কোটি টাকা। গল্পের বাঁধন যত না আঁটসাঁট, তার থেকে বেশি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ভিড়। বড় বাজেটের ছবি, তার উপরে ছবির মুখ প্রভাসের মতো এক সর্বভারতীয় তারকা। ছবির বক্স অফিস ব্যবসা নিয়ে নির্মাতাদের প্রত্যাশা ছিল আকাশছোঁয়া। সেই প্রত্যাশার সিকিভাগও বাস্তবায়িত হয়নি। মুক্তির আগে যে ভাবে বিতর্ক ঘিরে ধরেছিল ছবিকে, তাতে মনে করা হয়েছিল, ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাওয়া মাত্রই টিকিটের কাউন্টারে লম্বা লাইন পড়বে দর্শকের। তা তো হয়ইনি , উপরন্তু প্রথম সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই মাছি মারছিলেন প্রেক্ষাগৃহ মালিকরা। বক্স অফিসে বেনজির ভরাডুবি হয়েছে ‘আদিপুরুষ’-এর। দেশে টেনেটুনে ৩০০ কোটির ব্যবসাও করতে পারেনি প্রভাসের বিগ বাজেট ছবি।
এ দিকে ২৩ অগস্ট চাঁদের পা রেখেছে ভারত। চন্দ্রযান ৩-এর সফল অবতরণের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে নজির গড়েছে দেশ। সেই মিশনের বাজেটের অঙ্ক মাত্র ৬১৫ কোটি টাকা! যা, ‘আদিপুরুষ’-এর বাজেটের থেকে প্রায় ১০০ কোটি কম! ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজ়েশন তথা ইসরোর আগের দুই চন্দ্রাভিযানের থেকেও কম খরচে দেশের ঝুলিতে এসেছে এই অবিস্মরণীয় সাফল্য। তাতেই চাঙ্গা নেটাগরিকরা। ‘আদিপুরুষ’ তৈরি করে ৭০০ কোটি টাকা যে জলে দিয়েছেন ছবির নির্মাতারা, তা নিয়ে আগে কম চর্চা হয়নি সমাজমাধ্যমের পাতায়। মাত্র ৬১৫ কোটি টাকায় চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্য এ বার যজ্ঞে প্রায় ঘৃতাহুতির মতো। নেটাগরিকদের দাবি, ‘‘স্বঘোষিত তারকাদের পিছনে এত টাকা খরচ না করে বিজ্ঞানীদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হলেই দেশ অগ্রগতির পথে এগোবে।’’ অনেকে আবার মন্তব্য করেছেন, ‘‘কেন যে এ দেশে নায়ক-নায়িকাদের এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়! সমাজের আসল ‘হিরো’রাই তাতে পাত্তা পান না।’’ নেটাগরিকদের একটা বড় অংশের মতে, ‘‘অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ছেড়ে দেশের বিজ্ঞানীদের ‘সুপারস্টার’ তকমা দেওয়া উচিত।’’
প্রসঙ্গত, আমেরিকা, রাশিয়া ও চিনের পরে ভারতই চতুর্থ দেশ যার তৈরি মহাকাশযানের চাকার ছাপ পড়ল চাঁদের বুকে। তবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখার ক্ষেত্রে ভারতই প্রথম দেশ। চন্দ্রযান ৩-এর চাঁদের অবতরণের মাত্র এক দিন আগেই রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা-২৫ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি এক জায়গায় নামতে গিয়ে ভেঙে পড়ে। রাশিয়ার সেই লুনা-২৫ অভিযানে খরচ হয়েছিল প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা। ভারতের চন্দ্রযান-৩ অভিযানের দ্বিগুণেরও বেশি। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, চন্দ্রযান-৩ অভিযানে রোভার ও প্রোপালশন মডিউল মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। উৎক্ষেপণ যানে খরচের অঙ্ক ৩৬৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে চন্দ্রযান ৩-এর মোট খরচ ৬১৫ কোটি টাকা— যা চন্দ্রযান-১ ও চন্দ্রযান-২-এর থেকেও কম। চন্দ্রযান-২ অভিযানে ইসরোর খরচ হয়েছিল ৯৭৮ কোটি টাকা।