অরুণিমা ঘোষ।
১২ মাসের ১৩ পার্বণের অন্যতম পয়লা বৈশাখ। আমার চোখে দুর্গাপুজোর ছোট সংস্করণ। কেন? এই ২ উৎসবেই নতুন জামা হয় তাই। ছোটদের আসল আনন্দই তো নতুন জামা ঘিরে। আমি আবার গুণতে বসতাম। এক, দুই, সাড়ে তিন...।
আমার দাদুর প্রেস ছিল। ছাত্রবন্ধু পড়ে বড় হয়নি এমন ছাত্রছাত্রী কলকাতায় নেই। আমাদের ছাপাখানা থেকে ওই সহায়িকা বইটি বের হত। ফলে, পয়লা বৈশাখে প্রচুর অতিথি আসতেন। ভিড় হত। খাওয়াদাওয়া হত। সব মিলিয়ে জমজমাট অনুষ্ঠান। বাড়তি সংযোজন দোকানে দোকানে হালখাতা। আমার লাভ একটি করে মিষ্টির বাক্স আর ক্যালেন্ডার। বাক্সে মিষ্টির সঙ্গে সিঙাড়া আর গজার যুগলবন্দি। বাড়ি ফিরে সমস্ত প্যাকেট খুলে দেখতাম, কোনটায় কী দিয়েছে! সেই উত্তেজনা আজও রয়ে গিয়েছে। নববর্ষে যে কটা মিষ্টির বাক্স আর ক্যালেন্ডার আসবে সব কটা আগে স্যানিটাইজ করা হবে। তার পর আমি খুলে খুলে দেখব। বাচ্চাবেলার মতো। আর সব বাক্স থেকে একটা করে মিষ্টি খাব। আমার সবচেয়ে পছন্দের মিষ্টি লাড্ডু আর জিভে গজা।
এই প্রসঙ্গে জানাই, ছোট থেকে বড্ড খেতে ভালবাসি। রোজই ভালমন্দ খাওয়া হচ্ছে বাড়িতে। তার পরেও ভাল পদের প্রতি ঝোঁক। উৎসব মানেই ভরপেট পেটপুজো। সকালের জলখাবারে লুচি, সাদা তরকারি। দুপুরে পোলাও, মাংস। রাতে আমার পছন্দের বিরিয়ানি নয়তো ফ্রায়েড রাইস, চিলি চিকেন। তাই শুধু নববর্ষ নয়, যে কোনও উৎসব এলেই আমি খুশি। যদিও গত বছর থেকে করোনা থাবা বসিয়েছে সেই আনন্দে। অনেকেরই কাজ নেই। রাস্তায় বেরোনো নেই। রোজগার নেই। আনন্দও নেই।
রাস্তা বেরোনো বলতেই চৈত্র সেলের কথা মনে পড়ল। আমরা তখন উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। সেলের কেনাকাটা সারব বলে রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিট থেকে গড়িয়াহাট আসতাম! এখন আমি গড়িয়াহাটের বাসিন্দা। অথচ চৈত্র সেল এলেই কেমন যেন কুঁকড়ে যাই। কী ভিড়! কী ভিড়! তেমনি যানজট। মনে হয় যেন পালাতে পারলে বাঁচি। গত বছর থেকে সেই ভিড়ও হাল্কা। খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু হতে পারছি না। মনে হচ্ছে, কোভিড যাক। ভিড়টাই আবার ফিরুক।
এ বছরেও আত্মীয়রা আসবেন। বাড়ি লোকজনে ভরে উঠবে। ভালমন্দ খাওয়াও হবে। উপহার বিনিময় হবে। সঙ্গে শঙ্কাও থাকবে। মন খুব চাইছে, নতুন বছরে পরিস্থিতির যেন উন্নতি হয়। আর একটা জিনিস চাইব নতুন বছরের কাছে? আমি ভীষণ ‘খুঁতখুঁতে’ তো! তাই ঠিকঠাক একটাও প্রেম হয়নি।
পয়লা বৈশাখ, আমায় টাটকা একটা প্রেম উপহার দেবে?