Gourab Chakrabarty

ছোট বেলায় বাবার শেখানো রীতি, পয়লা বৈশাখ এলেই পোস্ট কার্ডে লিখতাম চিঠি

বিয়ের পর থেকে মা-বাবা তাঁদের মতো। আমি-ঋদ্ধিমা আলাদা। মা বলে দিয়েছিলেন, এটা মানলে সম্পর্ক ভাল থাকবে। এখনকার নববর্ষ কাটে দুই বাড়ির মা-বাবার সঙ্গে।

Advertisement

গৌরব চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৩৩
Share:

গৌরব চক্রবর্তী

জানি, কেউ বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু আমার পয়লা বৈশাখ এটাই। তখন আমি আর অর্জুন খুবই ছোট। হালখাতার ব্যাপার আমাদের ছিল না। নতুন জামা-কাপড় ছিল। পাজামা-পাঞ্জাবিতে সাজিয়ে দিতেন মা। আমরা দুই ভাই মিলে বড়দের প্রণাম করতাম। আর বাবার শেখানো ওই বিশেষ অভ্যেস, পোস্ট কার্ডে চিঠি লিখতাম দূরে থাকা বাড়ির বাকি বড়দের। মজা লাগত। এখন আফসোস হয়। কী ভাল ছিল সেই সব দিন!

Advertisement

আমি ইংরাজি মাধ্যমের ছাত্র। বাংলা নববর্ষের সময় হয় পুরনো শিক্ষাবর্ষ শেষ হত, অথবা নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হত। একটা দিনের জন্য হয়তো স্কুল ছুটি দিত। ফলে বাবার সঙ্গে কোথাও যে বেড়াতে যাব, সেই উপায়ও থাকত না। নববর্ষ তাই পুরোপুরি বাড়িতে। আটপৌরে, ছিমছাম ভাবে নিজেদের মতো করে ৪ জনে কাটাতাম। তবে ওই দিন খাওয়াদাওয়া মন্দ হত না। পছন্দের সমস্ত রান্না মা রাঁধতেন। ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, ভাজা, তরকারি, মাছ বা মাংস। আর মাংস মানেই মাটন। চিকেন নয়। শেষ পাতে মিষ্টি দই। তাও আবার স্পেশ্যালি আমার জন্য!

বিয়ের পর থেকে মা-বাবা তাঁদের মতো। আমি আর ঋদ্ধিমা আলাদা বাড়িতে। মা বলে দিয়েছিলেন, এটা মানলে সম্পর্ক ভাল থাকবে। তাই আমাদের এখনকার নববর্ষ কাটে দুই বাড়ির মা-বাবার সঙ্গে। সকালে আমার মা-বাবাকে সময় দিলে রাতে ঋদ্ধিমার মা-বাবার সঙ্গে ডিনার ডেটিং। খাওয়াদাওয়া সেই পুরনো রীতি মেনেই। এখনও শেষ পাতে মিষ্টি দই থাকে। শুধু আমার কথা ভেবে।

Advertisement

বিশেষ দিন এলেই উপহার দিতে হবে, এমনও চল নেই আমাদের মধ্যে। পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে ঋদ্ধিমাকে একটা শাড়ি কিনে দিলাম—হয়ইনি আজ পর্যন্ত। এমনিতেই কোনও অনুষ্ঠান বাড়ি ছাড়া ও খুব বেশি শাড়ি পরে না। বাড়িতে তো নয়ই। আমার চোখও অভ্যস্ত নয় ওকে সেই সাজে দেখতে। তাই পয়লা বৈশাখ হোক বা দোসরা বৈশাখ, মনে হয় যেমন আছে তেমনিই থাক ঋদ্ধিমা।

নববর্ষ নিয়ে ছোটবেলার আরও একটা মজার ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই সময় নতুন বাংলা বা ইংরেজি বছরে ঘটা করে প্রতিজ্ঞা করতাম, সারা বছর এটা করব সেটা করব। তার পর বছর শেষের মুখে দেখতাম, পুরো ভাবনাটাই কখন যেন মন থেকে মুছে দিয়েছে ৩৬৫ দিন! প্রতিজ্ঞা তার মতো মনের এক কোণে পড়ে। আমি আমার মতো। একটু বড় হওয়ার পর আর তাই প্রতিজ্ঞা করি না। বরং প্রত্যেক দিন যাতে ভাল করে কাটাতে পারি, সেই চেষ্টা করি মন থেকে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement