‘পঞ্চায়েত’ –এর পর ‘পঞ্চায়েত-২’। ওয়েব সিরিজের দ্বিতীয় পর্বেরও ভূয়সী প্রশংসা করছেন দর্শক থেকে সমালোচকরা। এর মধ্যে সিরিজের পরিচালকের পরিচয় পেয়ে প্রায় চক্ষুচড়কগাছ অনেকের। কে ইনি?
বছর কয়েক আগে ‘রোডিজ’ নামে একটি রিয়্যালিটি শো জনপ্রিয় হয়েছিল। এখনও শো-টি চলছে। তবে জনপ্রিয়তা কমেছে। এই শো থেকে উঠে এসেছেন আয়ুষ্মান খুরানার মতো অভিনেতা।
রঘুরাম, রণবিজয় সিংহের মতো বিচারকদের চোখা চোখা কথাবার্তা, তাঁদের দেওয়া কঠিন এবং অদ্ভুত সমস্ত হার্ডল পেরিয়ে প্রতিযোগীকে ছিনিয়ে নিতে হয় ‘রোডিজ’ তকমা। এখন অবশ্য বিচারকদের অদলবদল হয়েছে। তবে রঘুরামের কথা (কোনও কোনও সময় গালিগালাজ) না কি ছিল এই শোয়ের ‘টিআরপি’-র অন্যতম কারণ।
এই ‘রোডিজ’ -এর প্যারডি করে আবার প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল টিভিএফের একটি শো। আজও ইউটিউবে ওই শোয়ে ‘নকল’ রঘুরামকে দেখে হেসে খুন হন দর্শকরা।
হ্যাঁ। ‘রোডিজ’-এর ‘নকল’ রঘুরামই ‘পঞ্চায়েত-২’ ওয়েব সিরিজের পরিচালক। আর এই তথ্য জানার পরেই বিস্মিত নেটাগরিকরা।
কেউ বলছেন, তিনি ভাবতেই পারেননি এমন এক জন অভিনেতা এমন একটি সুন্দর ওয়েব সিরিজ উপহার দিতে পারেন। কারও আবার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না টিভিএফের ‘রঘুরাম’ আসলে দীপককুমার মিশ্র।
শুধু রঘুরাম সেজে অভিনয় নয়, এর আগে আরও দু’টি জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ এবং ‘পার্মানেন্ট রুমমেটস’-এও কাজ করেছেন দীপক। সবই টিভিএফ বা ‘দ্য ভাইরাল ফিভার প্রোডাকশন’-এর অধীনে। তিনি নিজেও টিভিএফের ‘ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর’।
দীপকের পড়াশোনা বারাণসীর সেন্ট জনস্ স্কুলে। তার পর ইঞ্জিনিয়ারিং। আইআইটি বম্বে থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জানিয়ারিং করা দীপক হাত পাকান ছবি বানানোয়।
আইআইটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেও দীপকের মন পড়ে থাকত সিনেমার দিকে। ইঞ্জিনিয়ারের কাজ না খুঁজে কী ভাবে মুম্বই যাওয়া যায় সেই ভাবনায় মশগুল হলেন।
মুম্বইকে বলা হয় স্বপ্নের শহর। কিন্তু স্বপ্ন ছোঁয়া কি অতই সোজা? রাত দিন ঘুরে বেড়িয়ে ছোটখাট কাজ করেছেন দীপক। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে এল সুযোগ।
সিনেমার হিরো স্বয়ং শাহরুখ খান। পরিচালক ফারহা খান। ছবির নাম? ‘ওম শান্তি ওম’। ২০০৭ সালের হিট এই সিনেমার সহকারী পরিচালক ছিলেন দীপক।
আইআইটি ইঞ্জিনিয়ার কী ভাবে অভিনয় জগতে এসে পড়লেন? আইআইটি বম্বেতে পড়তে পড়তে থিয়েটারের প্রতি দারুণ আকর্ষণ জন্ম যায় দীপকের। অভিনেতা কিংবা অভিনয় জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার ইচ্ছের সেই শুরু। আইআইটি কলকাতার একটি থিয়েটার উৎসবে যোগ দেওয়ার পর দীপক সিদ্ধান্ত নিলেন এই জগতেই থাকবেন। এ কাজই তিনি করতে চান।
‘টিভিএফ রোডিজ’-এর পর বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন দীপক। তবে তাঁর চিনতে পারার মতো কাজ আরও আছে। ২০১৮ সালে শাহরুখ খানের ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ সিনেমার সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনিই।
দীপকের পরিচিতি আরও বাড়ে ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ এবং ‘বাপ বাপ হোতা হ্যায়’-এর মাধ্যমে। ফারহা খান থেকে অনুরাগ কশ্যপ, বলিউডের নামী পরিচালকদের বিশেষ পছন্দ দীপকের কাজ। তাঁদের বক্তব্য, কোনও ভাবনাকে দর্শকের সামনে অভিনব ভাবে উপস্থাপিত করতে পারেন দীপক। এটাই তাঁর ‘এক্স ফ্যাক্টর’।
‘পঞ্চায়েত’ ওয়েব সিরিজের ভাবনা কী ভাবে এল? দীপকের কথায়, ‘‘ছোট থেকে ‘মালগুড়ি ডে’জ’, ‘পঞ্চতন্ত্র’ ইত্যাদি পড়ে এবং টিভিতে দেখে বড় হয়েছি। সেই প্রভাবটা থেকে গিয়েছে।’’ প্রযোজকদের কাছে কাহিনি নিয়ে গিয়ে ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন ওয়েব সিরিজের নাম রাখতে চান ‘পঞ্চায়েত’।
‘পঞ্চায়েত’ পরিচালক দীপক একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘ভারতের গ্রামাঞ্চলের জীবন ঠিক কেমন, সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছি ‘পঞ্চায়েত’-এ। গ্রামীণ জীবনের সহজ-সরল সংস্কৃতিকে সহজ ভাবেই উপস্থাপিত করতে চেয়েছি আমার কাজে।’’
‘পঞ্চায়েত’ এর পর ‘প়ঞ্চায়েত ২’ এর অসাধারণ সাফল্যের পর পরিচালক ‘মিশ্রাজী’র কথায়, ‘‘মাতৃভূমির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য পঞ্চায়েত নামটাই যথেষ্ট। সিরিজের নাম থেকেই আকর্ষিত হয়েছেন দর্শকরা।’’