পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
লোকে কী ভাবছে, লোকে কী বলবে? এই ভেবেই একটা প্রজন্মের যৌবন কেটেছে। তবে পরিস্থিতিও সময়ের সঙ্গে বদলেছে। কারও চোখে ভাল সাজা নয়, বরং নিজেকে ভালবাসার উদ্যাপন করছে এই প্রজন্ম। সম্প্রতি মেয়েদের শাড়ি পরা, আঁচল ইত্যাদি নিয়ে মমতা শঙ্করের মন্তব্যে বেশ কিছু সময় ভাবিয়ে তুলেছিল নেটপাড়াকে। এ বার অন্তর্বাস কেমন পরা হবে, সেই নিয়ে চলে আসা ছুতমার্গ কাটিয়ে সাহসী হলেন গায়িকা পরমা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় ২০ বছরের কাজের জীবনে একাধিক বাংলা আধুনিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন পরমা। ‘রোজগেরে গিন্নি’র মতো জনপ্রিয় টেলিভিশন শো-এর সঞ্চালিকা তিনি। যদিও এখন সে সবের থেকে খানিক দূরে। উদ্যোগপতি হিসেবে নাম ডাক হয়েছে তাঁর। পরমার শাড়ি নিয়ে ব্যবসা। তবে শাড়ির ব্লাউজের ফাঁক দিয়ে ‘ব্রা’ দেখা গেলেই যে ফিসফিসানি একটা সময় হত, সেই সংস্কার ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। গায়িকা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘আমাদের বেড়ে ওঠার দিনগুলিতে, শাড়ির ব্লাউজ় বা স্লিভলেস টপের অংশ থেকে ‘ব্রা’-এর স্ট্র্যাপ উঁকি দিলেই শুরু হত নিন্দেমন্দ। বাড়ির বয়স্ক কাকিমা, মাসি বা হয়তো কোনও দিদি আপনার কাছে ছুটে আসবে এবং খানিক গোপনীয়তা বজায় রাখার ভঙ্গিমাতে আলতো করেই সেই অন্তর্বাস ঢুকিয়ে দেবেন।’’
২০২৪ দাঁড়িয়ে গোপনীয়তার আগল ভেঙেছে। গায়িকা নিজে জানিয়েছেন সারা জীবন হাতকাটা পোশাক এড়িয়ে চলেছেন, পাছে অন্তর্বাস প্রকাশ্যে দেখা যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে ধীরে ধীরে নিয়মের বাঁধন থেকে মুক্ত হতে পেরেছেন মেয়েরা। পরমা বলেন, ‘‘২০২৪ এসে আমি দেখছি এখনকার সময়ে পোশাক তৈরি করা হচ্ছে এমন ভাবে যে, যে কোনও দিক থেকেই দেখা যাবে অন্তর্বাসের ফিতে। শুধু তা-ই নয়, আমাদের সময় যাঁরা বিদেশি অন্তর্বাস কেনার সামর্থ্য রাখতেন তাঁরা নানা ধরনের নকশা করা অন্তর্বাস পরতেন। বাকিদের ক্ষেত্রে রং সীমাবদ্ধ ছিল সাদা, কালো অথবা ঘিয়ে রঙের অন্তর্বাসে।’’
কিন্তু নতুন প্রজন্মের সাহসী পদক্ষেপে মুগ্ধ তিনি। জামার সঙ্গে নানা রঙের অন্তর্বাস পরলে তা একেবারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই প্রকাশ্যে আনার সাহস পেয়েছে এই প্রজন্ম। নিজের ৫০ বছর বয়সে এসেই সব তরুণীকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন গায়িকা। পরমার কথায়, ‘‘আমার জীবনের ৫০-এ এসে যখন আত্মবিশ্বাসী যুবতীদের সাহসী স্লিভলেস টপ পরতে ও রঙিন অন্তর্বাসের বাহারি ফিতে প্রদর্শন করতে দেখি, আমার মনে হয় এই গরমে এমন পোশাক বেশ আরামদায়কই।’’ সম্প্রতি সমাজমাধ্যমের পাতায় এমনই একটি ছবি দিয়ে সেই বার্তা দিয়েছেন গায়িকা। যদিও তাঁকে পুরানো দিনের ছুতমার্গ থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছেন তাঁর দুই ছেলে ও স্বামী।
কিন্তু বর্তমান সময়ে কোনও কিছু সমাজমাধ্যমে দিলেই নিমেষে তা নিয়ে বিতর্কের সম্ভাবনা থাকে। তবে সে সব বিতর্ক নিয়ে খুব বেশি ভাবছেন না তিনি।পরমা আনন্দবাজার অনলাইনকে বরং বলেন, ‘‘ফেসবুক ভর্তি অশিক্ষিত লোকজন। আমি ভাইরাল করার জন্য কোনও কিছু পোস্ট করি না। আমার ফেসবুকের বন্ধুতালিকায় খুব নির্বাচিত লোকজনই থাকেন। আমার আসলে ফেসবুকবাজি একেবারেই পছন্দ নয়। এখন অনেক লোকেই ইংরেজি বা বাংলা কোনওটাই বোঝে না।শুধু ছবি দেখে।’’ যদিও তাঁর বন্ধুরা এই পোস্ট দেখে বেশ মজাই পেয়েছেন বলে জানালেন পরমা।