পণ্ডিত জসরাজ।
ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক পণ্ডিত জসরাজের জীবনাবসান হয়েছে। নিউজার্সিতে আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আজ প্রয়াত হন এই সঙ্গীত সাধক। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মেওয়াতি ঘরানার গুরু পণ্ডিত জসরাজ সঙ্গীতকেই জীবনের মন্ত্র করে নিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “সঙ্গীত সাধনায় চড়াই, উৎরাই পেরিয়ে এসে আমি সুর-লয়েই খুঁজি ঐশ্বরিক মায়াজালকে। কখনও খুব কাছে চলে যাই, কখনও বুঝতেই পারি না, অদৃশ্য সেই শক্তি আমাকে কোথায় নিয়ে চলেছে। আমি কী দিয়েছি, কি দিইনি জানি না। মনে হয়, সবই তো তাঁরই (ঈশ্বর) খেলা।”
হরিয়ানার ফতেহাবাদের শাস্ত্রীয় সাঙ্গীতের পরিবারে জন্ম তাঁর। ছেলেবেলায় বাবা চেয়েছিলেন ছেলে বড় তবলাবাদক হবে। জসরাজও তেমন ভাবেই তালিম নিচ্ছিলেন। কিন্তু একদিন কিংবদন্তি বেগম আখতারের কণ্ঠে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শুনে বদলে ফেলেন সিদ্ধান্ত; তিনিও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইবেন। তখনকার দিনে সারেঙ্গি, তবলাবাদকদের মূল্যায়ন-ই নাকি হত না। জসরাজ প্রতিজ্ঞা করেন, মঞ্চে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইতে না পারলে তিনি চুল কাটবেন না। তার জন্য অবশ্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। দুবছরের মাথায়, মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইতে শুরু করলেন।
আরও পড়ুন: এক সপ্তাহ পরেও স্থিতিশীল প্রণববাবু, রয়েছেন ভেন্টিলেশনে
এক পর্যায়ে তিনি ক্ল্যাসিক্যালের পাশাপাশি সেমি-ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে কাজ শুরু করেন। বেশক’টি চলচ্চিত্রের সংগীতায়োজনও করেছিলেন তিনি, এগুলোর মধ্যে ষাটের দশকের ‘লড়কি সাহ্ইয়াদ্রি কি’,‘বীরবল মাই মাদার’, ‘ওয়াদা তুমসে হ্যায় ওয়াদা’, ‘১৯২০’ চলচ্চিত্রগুলো রয়েছে।
পণ্ডিত জসরাজ বলেছিলেন, “তবলা ছেড়ে কণ্ঠসঙ্গীতে চলে আসাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। তবে এখনও কিন্তু গীত রচনা করতে গেলে আমি তবলার বোলচালগুলো মনে করি। সত্যিই খুব ভাল তবলা বাদক ছিলাম আমি।”
বেশ কিছু দিন আগে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পণ্ডিত জসরাজের নামে একটি ছোট গ্রহের নামকরণ করে। প্রথম ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে এই দুর্লভ সম্মান পেলেন পণ্ডিত জসরাজ। তাঁর নামে গ্রহটির নাম দেওয়া হয়েছে 'পণ্ডিত জসরাজ (৩০০১২৮)'।