অভিনয়ের জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দিয়েছিল। অথচ সেই নায়িকাকেই নাকি চড় খেতে হয়েছিল মহেশ ভট্টের হাতে। সেই তাঁকেই আবার রাত কাটাতে হয় আমেরিকার মানসিক হাসপাতালে!
তাঁর ঝুলিতে যতগুলি ছবিতে অভিনয় করার রেকর্ড রয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তাঁকে ঘিরে থাকে বিতর্ক, সমালোচনা। স্বর্ণকার বাবা এবং শিক্ষিকা মায়ের সন্তান মীরাকে পাকিস্তানের ললিউড থেকে আমেরিকার মানসিক হাসপাতালে রাত কাটাতে হল কেন?
তাঁর আসল নাম ইরতিজা রুবাব। তবে ললিউড এবং বলিউডের কাছে তিনি মীরা। জনপ্রিয় পাকিস্তানী অভিনেত্রী এবং টেলিভিশন পরিবেশক। উর্দু, পঞ্জাবি এবং হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
মীরার জন্ম ১৯৭৭ সালের ১২ মে। ৪৪ বছরের মীরা কেরিয়ার শুরু করেন ১৯৯৫ সালে। তবে অভিনয়ের জন্য প্রশংসা পান ৪ বছর পরে, ১৯৯৯ সালে।
ওই বছর ‘খিলোনা’ নামে এক পাক ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকের নজর কাড়ে। ওই ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি পাকিস্তানের ‘নিগর পুরস্কার’ও পান। পরের বছর ফের আরও একটি ছবি তাঁকে ওই পুরস্কার এনে দেয়।
ললিউডে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকেন মীরা। অভিনয়ে তো তিনি দক্ষ ছিলেনই। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। সব সময় খবরের শিরোনামে থাকা। বিতর্ক যেন মীরার ছায়াসঙ্গী ছিল। তিনি যেখানেই গিয়েছেন, যা করেছেন সবেতেই কোনও না কোনও বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
নয়ের দশকে ললিউডের একেবারে প্রথম সারির নায়িকা হয়ে গিয়েছিলেন মীরা। ২০০৫ সালে তিনি ভারতে আসেন। ভেবেছিলেন ভারতীয়দের কাছেও একই জনপ্রিয়তা অর্জন করবেন। কিন্তু ঘটেছিল অন্য রকম।
মাত্র ৩টি বলিউড ছবিতে সুযোগ পান তিনি। এই ৩টির কোনওটিই বক্স অফিসে প্রভাব ফেলতে পারেনি। উপরন্তু মহেশ ভট্টের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় তাঁর বলিউড কেরিয়ার ওই ৩টি ফিল্মেই শেষ হয়ে যায়।
২০০৫ সালে ‘নজর’ ছবিতে সুযোগ পান। তার পর ‘কসক’ এবং বলিউডে তাঁর শেষ ছবি ছিল ‘পাঁচ ঘণ্টে মে পাঁচ করোড়’। এই ৩টি ছবিই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। তবে মীরা নজর কাড়েন পরিচালকদের। সে সময় বলিউডের অনেক বড় মাপের পরিচালকই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কিন্তু মহেশ ভট্ট তাঁকে আর কোনও পরিচালকের অধীনে ছাড়তে রাজি ছিলেন না। মীরা না জানিয়ে এক পরিচালকের সঙ্গে দেখা করেছেন জানতে পেরে তাঁকে নাকি চড় মেরেছিলেন মহেশ।
‘চড়’ বিতর্ক তাঁকে ফের শিরোনামে আনে। তখন মীরার প্রতি মহেশের বিশেষ অনুভূতির কথাও সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন মীরা। কিন্তু সব সময় যে বিতর্ককে সঙ্গী করে শিরোনামে থাকা যায় না সে দিন বুঝেছিলেন মীরা। প্রভাবশালী পরিচালক মহেশের বিরুদ্ধে মুখ খোলায় চিরতরে তাঁর বলিউড কেরিয়ারই শেষ হয়ে যায়।
মীরাকে ফিরে আসতে হয় পাকিস্তানে। সেখানে তখনও আগের মতোই জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ফের ছবির প্রস্তাব আসতে শুরু করে তাঁর কাছে। ললিউডের পাশাপাশি পাক ধারাবাহিকে এখনও চুটিয়ে অভিনয় করে চলেছেন তিনি। কিন্তু এর মাঝে একটি খবর পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যমকে নাড়িয়ে দেয়।
আমেরিকার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে মীরাকে! সুস্থ নায়িকা অমেরিকার মানসিক হাসপাতালে কী করে গেলেন? কী ভাবেই বা তিনি সেখানে পৌঁছলেন? এ সব প্রশ্ন নিয়ে যখন উত্তাল পাক সংবাদ মাধ্যম তখন আসল কারণ সামনে আসে।
মীরা আসলে একটি কাজে আমেরিকায় গিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি আমেরিকার একটি বেসিরকারি হাসপাতালে কোভিড ১৯-এর প্রতিষেধক নিতে যান। প্রতিষেধক নিয়ে ফিরে এলে বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকত। হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে গল্প জুড়তে গিয়েই সমস্যার সূত্রপাত।
মীরার ইংরাজি উচ্চারণ মারাত্মক। মীরা তাঁর সেই ভুলে ভরা ইংরাজিতে কথা বলে নাকি চিকিৎসক-নার্সদের আপ্লুত করতে চেয়েছিলেন। তিনি যে এক জন তারকা এবং তাঁর সঙ্গে যেন সকলে তারকার মতো আচরণ করেন তা বোঝাতে গিয়েছিলেন।
মীরার ইংরাজি শুনে তাঁকে তারকা না ভেবে উল্টে মানসিক ভারসাম্যহীন ভেবে বসেন চিকিৎসকরা। প্রতিষেধক কেন্দ্র থেকে সোজা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে।
ক’দিন সেখানেই ছিলেন। যত চিৎকার করে নিজেকে সুস্থ প্রমাণের চেষ্টা করেছেন তত সকলের কাছে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে উঠেছেন। শেষে চিকিৎসকদের অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে যোগাযোগ করেন মীরা। তাঁর মা পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার পরই আমেরিকার পাক দূতাবাস তাঁকে মানসিক হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দেশে ফেরে।