নুসরত, সৃজিত, মিথিলা এবং মহুয়া। ফাইল চিত্র।
অষ্টমীর সকালে পুজো মণ্ডপের ‘নো এন্ট্রি জোনে’ ঢুকে অঞ্জলি দিয়ে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে পারেন সাংসদ-অভিনেত্রী নুসরত জাহান, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রাফায়েত রশিদ মিথিলা। সাংসদ মহুয়া মৈত্রকেও সপ্তমীর দিন মণ্ডপ ঢুকে অঞ্জলি দেওয়ার কারণে আইনি নোটিস পাঠানো হতে পারে বলে খবর।
শনিবার সকালে নিউ আলিপুরের সুরুচি সঙ্ঘের পুজোয় অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলেন নুসরত, সৃজিত, মিথিলা। ছিলেন নুসরতের স্বামী নিখিল জৈনও। ওই পুজোটি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের পুজো বলেই সমধিক পরিচিত। প্রতিবারই সেখানে বিভিন্ন সেলিব্রিটিরা যান অঞ্জলি দিতে এবং ঢাকের তালে নাচতে। কিন্তু এ বারের পরিস্থিতি আলাদা। এ বার করোনা পরিস্থিতির কারণে কলকাতা হাইকোর্ট সমস্ত পুজো মণ্ডপ ‘দর্শকশূন্য’ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুজোর উদ্যোক্তা ছাড়া কেউ ‘নো এন্ট্রি জোনে’ ঢুকতে পারবেন না। তাঁদের সংখ্যাও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, ‘বহিরাগত দর্শকদের’ প্রবেশ নিষিদ্ধ।
প্রসঙ্গত, কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়াকেও তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিভিন্ন মণ্ডপে ঘুরে অঞ্জলি দিয়েছেন বলে তাঁর ফেসবুক পেজে দেখা গিয়েছে বলে একাংশের বক্তব্য। মহুয়া অবশ্য জানিয়েছেন, নদিয়ার করিমপুরে তাঁর বাড়ি আছে। সেই বাড়িরই একেবারে লাগোয়া একটি মণ্ডপ রয়েছে তিনি সেখানেই সপ্তমীর দিন অঞ্জলি দিয়েছেন তাও সেখানে পুরোহিত ছাড়া আর কেউই বিশেষ ছিলেন না। বাকি কোথাও তিনি অঞ্জলি দেননি। কয়েকটি মণ্ডপে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু সেগুলি সবই বাড়ির পুজো। বারোয়ারি পুজো নয়। সেখানেও তিনি প্যান্ডেলের বাইরেই বসেছিলেন। অর্থাৎ , বহিরাগত দর্শক হিসেবে তিনি কোথাও যাননি।
আইনি নোটিস নিয়ে মহুয়া কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে তিনি তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে কিছু ভিডিও পেশ করেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, আইনি কোনও নোটিস এলে তিনিও আইনের পথেই হাঁটবেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, নুসরত-সৃজিতরা অঞ্জলি দিয়েছেন হাইকোর্ট নির্ধারিত মণ্ডপের ‘নো এন্ট্রি জোনে’। সেখান থেকেই জন্ম হয়েছে বিতর্কের। কারণ, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, মণ্ডপের চারদিকে ব্যারিকেড করে তৈরি করতে হবে ‘নো এন্ট্রি জোন’। সেই ‘নিষিদ্ধ’ এলাকায় পুজোর উপাচারের প্রয়োজনে উদ্যোক্তাদের তরফে আদালতের ঠিক করে দেওয়া সংখ্যার কয়েকজন ঢুকতে পারবেন বলে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
আরও পড়ুন: অষ্টমীতে সুরুচি সংঘে ‘চতুষ্কোণ’, ঢাক বাজালেন, অঞ্জলি দিলেন সৃজিত-মিথিলা, নিখিল-নুসরত
সূত্রের খবর, আদালতের ‘নির্দেশ’ ভেঙে নুসরতদের ওই মণ্ডপে ভিড় করার ঘটনাকে আদালতে ‘হাতিয়ার’ করতে চলেছেন পুজো মামলার আইনজীবীরা। মামলার আবেদনকারীর আইনজীবীদের বক্তব্য স্পষ্ট— আদালতের নির্দেশ সকলের জন্যই প্রযোজ্য। সেক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ম মানার ক্ষেত্রে আরও ‘সদর্থক এবং ইতিবাচক’ ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়নি।
নুসরত-ঘনিষ্ঠদের অবশ্য দাবি, তিনি গত কয়েকবছর ধরেই ওই ক্লাবের সদস্য।তাই তিনি কর্মকর্তাদের তরফে ‘নো এন্ট্রি জোনে’ ঢুকতেই পারেন। একই ভাবে সৃজিতকেও ‘ক্লাব সদস্য’ বলেই বর্ণনা করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা। কিন্তু নুসরতের স্বামী নিখিল এবং সৃজিতের স্ত্রী মিথিলা সম্পর্কে তা বলা যায় কি না, তা নিয়ে তর্কের অবকাশ রয়েছে। মিথিলা আদতে বাংলাদেশের নাগরিক। সৃজিতের সঙ্গে মাত্রই কয়েকমাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তিনি। তিনি কি ওই ক্লাবের সদস্য হতে পারেন?নুসরতের স্বামী নিখিলকে নিয়েও একই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
রবিবার আনন্দবাজার ডিজিটালকে সৃজিত জানিয়েছেন, তিনি সুরুচি সঙ্ঘের পুরোন সদস্য। প্রতিবারই সেখানকার পুজোয় যান। মিথিলা গতবছরও সেখানে অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলেন। সৃজিতের কথায়, "সদস্য হিসেবে আমি আমার স্ত্রী-কে নিয়ে আমার ক্লাবের পুজোয় যেতেই পারি। বহিরাগত দর্শক হয়ে তো যাইনি!"
লক্ষীপুজোর পর আবার ওই মামলার শুনানি। তার আগে আদালতের নির্দেশ কতটা পালন করা হল, সে বিষয়ে আদালতে হলফনামা জমা দিতে হবে রাজ্যকে। পুজো মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের তরফে ইঙ্গিত মিলছে যে, পরবর্তী শুনানির সময় এদিনের অঞ্জলি দেওয়ার ঘটনাকে হাতিয়ার করতে পারেন মামলাকারী। তবে এখনই মামলাকারী নুসরতদের আইনি নোটিস পাঠাবেন কি না, তা নিয়ে কোনও নিশ্চিত জবাব পাওয়া যায়নি।