কঙ্গনা রানাউত। ‘ফ্যাশন’, ‘কুইন’ ও ‘তনু ওয়েডস মনু রিটার্নস’-এর দৌলতে যাঁর দখলে রয়েছে তিনটি জাতীয় পুরস্কার। তবে শুধু অভিনয়ের জন্যই নয়, বেশির ভাগ সময় কঙ্গনা প্রচারের আলোয় থাকেন বিতর্কের জন্য।
সম্প্রতি নিজের নতুন সিনেমা ‘জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া’-র প্রচারে গিয়ে এক সাংবাদিককে ‘মণিকর্ণিকা’-র নেতিবাচক রিভিউ দেওয়ায় তীব্র আক্রমণ করেন। কঙ্গনার এই আচরণে সাংবাদিকদের একাংশ তাঁকে বয়কট করেন। প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়াও সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে।
বলিউডে কঙ্গনা ও বিতর্ক প্রায় সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিনয় জগতে পা রাখার শুরু থেকে আজ অবধি নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। কিন্তু দমেননি একটুও। মুখ সামলে কথা বলা তার ধাতে নেই। বাকি অভিনেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে তিনি ও তার বোন রঙ্গোলি যেন সদা প্রস্তুত।
কঙ্গনার জীবনে বিতর্কের শুরু আদিত্য পাঞ্চোলির হাত ধরে। বলিউডে পা রাখার সময় কঙ্গনার ঠাঁই হয়েছিল তাঁর থেকে বয়সে অনেক বড় আদিত্য পাঞ্চোলির বাড়িতে। বলিউডে গুঞ্জন ওঠে, বিবাহিত আদিত্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের। পাঁচ বছর পর এই সম্পর্কে ইতি পড়লে কঙ্গনা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আদিত্যের বিরুদ্ধে। দাবি করেন, তাঁকে মারধর করেছেন পাঞ্চোলি।
অধ্যয়ন সুমনের সঙ্গে ‘রাজ-দ্য মিস্ট্রি কনটিনিউজ’ সিনেমার শুটিং চলাকালীন সম্পর্কে জড়ান কঙ্গনা। তাঁদের ব্রেক আপের পর অধ্যয়ন সুমন এক সাক্ষাত্কারে বলেন, কঙ্গনা তাঁকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করতেন। নিয়মিত তাঁকে গালিগালাজ ও লাঞ্ছনার শিকার হতে হত। এমনকি ‘কালা জাদু’ করার অভিযোগও করেন কঙ্গনার বিরুদ্ধে।
কর্ণ জোহরের টক শোয়ে গিয়ে সরাসরি কর্ণকে আক্রমণ করে কঙ্গনা বলেন, বলিউডে স্বজনপোষণের পতাকাধারী তিনি। ট্যালেন্টের বদলে তিনি স্টারকিডদেরই অভিনয়ের সুযোগ দেন। এরপর চুপ থাকেননি কর্ণও, তিনিও কঙ্গনাকে বরাবর ‘আক্রান্ত’, ‘শোষিত’-র অভিনয় থেকে দূরে থাকতে বলেন।
‘গাল্লি বয়’-এর প্রচারে রাজনীতি সম্পর্কে আলিয়া ভট্ট ও রণবীর সিংহ কিছু বলতে না চাইলে কঙ্গনা তাঁদেরও কথা শোনাতে ছাড়েননি। আলিয়ার প্রেমিক রণবীর কপূরকেও আক্রমণ করে তিনি বলেন, “এঁরা সবাই দায়িত্বহীন। বাড়িতে জল আর কারেন্ট আসছে বলে রাজনীতি সম্পর্কে কোনও আগ্রহ থাকবে না! ”
শাবানা আজমির মতো বর্ষীয়ান অভিনেতাও কঙ্গনার তোপ থেকে বাঁচেননি। তিনি পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া বাতিল করলে তাঁকে দেশদ্রোহীর তকমা দেন কঙ্গনা। তিনি বলেন, “শাবানা আজমিদের মতো মানুষদের জন্যই ‘ভারত টুকরো হবে’ স্লোগান শোনা যায়।” তাঁর ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে রাজি হওয়াই উচিত ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তার সিনেমা ‘মণিকর্ণিকা’ মুক্তি পাওয়ার সময় বিতর্ক তৈরিতে পরিচালক থেকে শুরু করে অভিনেতা কাউকে ছাড়েননি। পরিচালকের কৃতিত্বে ৭০ শতাংশের দাবি করেন কঙ্গনা। বলিউডের তরফ থেকে তেমন সমর্থন না পাওয়ায় তিনি আলিয়া ভট্টকে মেরুদণ্ডহীন বলতেও ছাড়েননি। কঙ্গনার বাজে ব্যবহারে সিনেমা থেকে সরে যান সোনু সুদ।
কঙ্গনার নতুন সিনেমা ‘জাজমেন্টাল হ্যায় ক্যায়া’ সিনেমার ট্রেলারের প্রশংসা করেও বিপাকে পড়েন বরুণ ধওয়ন এবং তাপসী পান্নু। কঙ্গনার বোন রঙ্গোলি দু’জনকেই বলেন যে, শুধু ট্রেলারের নয়, কঙ্গনার অভিনয়ের প্রশংসাও করা উচিত ছিল। যদিও বরুণ বা তাপসী দু’জনই সিনেমার সকল অভিনেতাদের প্রশংসা করছিলেন ব্যক্তিগত ভাবে কারও নাম না করে।
বলিউডের একাংশের মতে, কঙ্গনা প্রচারের আলোয় সর্ব ক্ষণ থাকতে চান বলেই এই ধরনের কথা বলেন। অন্য দিকে গায়িকা সোনা মহাপাত্রের মতে, “যে রাক্ষসদের সঙ্গে লড়াই করে কঙ্গনা আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, নিজেই ধীরে ধীরে সেই রাক্ষসে পরিণত করছেন। বাকি অভিনেতাদের নীচে নামিয়ে নিজেকে সবার উপরে রাখার চেষ্টা করেন কঙ্গনা।”