দেবশ্রীর জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে কলম ধরলেন চিরঞ্জিৎ
দেবশ্রী রায়। আমার অনেক ছবির নায়িকা। প্রত্যেকটা ছবিই জনপ্রিয়। কী সুন্দরী! টানা টানা চোখ, নাক, মুখ। হাসিটাও মিষ্টি। সব মিলিয়ে অনবদ্য। তা বলে শুধুই দর্শনধারী নয়। চুমকি খুব ভাল অভিনেতা। আর পরিচালকের অভিনেতা। ওকে পরিচালনা করে তৃপ্তি আছে। আমার পরিচালনায় ‘ভয়’ ছবির নায়িকা চুমকি।বিপরীতে আমিই নায়ক। মনে আছে পাহাড়ি অঞ্চলে শ্যুট করছি। ভোর চারটেয় কল টাইম। আমি পরিচালক হয়েও ঘুম থেকে উঠতে পারিনি। চুমকি দেখি তৈরি হয়ে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে।
আরও একটা ভাল গুণ, একটুও অহঙ্কারী নয়। সাদামাঠা, সহজ ব্যবহার। জাতীয় পুরস্কার পাওয়া অভিনেত্রী। কোনও গর্ব নেই তাই নিয়ে! ছোট থেকে পরিশ্রম করে বড় হয়েছে বলেই হয়তো। তবে একটি জিনিস কিছুতেই চুমকির আয়ত্তে এল না। সেটা রাজনীতি। আমিও ভাল বুঝি না, ও-ও না। যদিও আমি এখনও রাজনীতিতেই। মনে পড়ে, বিধানসভায় আমরা পাশাপাশি বসতাম। এখন অবশ্য আমার বসার বেঞ্চ বদলে গিয়েছে। কোনও দিন জিন্স পরে আসত। কোনও দিন শাড়ি। যে দিন যে পোশাকে সুন্দর লাগত, অকপটে জানাতাম। হাসি-ঠাট্টা চলত। খুব মজা করতে ভালবাসত। তখনই মাঝেমধ্যে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলত। শুনেছিলাম, বিজেপি-তেও নাকি যোগ দিতে পারে। সেটা যদিও বাস্তব হয়নি।
বদলে ১০ বছর পরে আবার অভিনয়ে দেবশ্রী রায়। ছোটপর্দায় ধারাবাহিক ‘সর্বজয়া’তে নায়িকা হয়ে। ধারাবাহিকটি দেখতাম। বেশ লাগত। টিআরপি-ও ভালই ছিল। তার পরেও শুনেছি, চুমকিকে নাকি অনেক ভাল-মন্দ শুনতে হয়েছিল। আমার মনে হয়, বয়সটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বয়স অনুযায়ী চরিত্র বাছলে হয়তো এ রকম কথা শুনতে হত না। আবার এটাও ঠিক, অকারণে কথা শোনানোর জন্য কিছু লোক তো মুখিয়ে থাকবেই। আসলে কি জানেন, ‘দেহপট সনে নট সকলি হারায়’— কথাটা এখনও বিনোদন দুনিয়ায় খাটে। কম বয়সে যদি অভিনয়ে ছেদ পড়ে সমস্যা নেই। বয়স বেড়ে গেলেই সমস্যা। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি, বাংলায় এখনও নায়িকাদের চাহিদা, জনপ্রিয়তা নির্ভর করে তাঁদের বয়সের উপরে!
তার পরেও বলব, চুমকি অভিনয়েই থাকুক। পাশাপাশি, ছবি পরিচালনাও করতে পারে। অর্পণা সেনের মতো। এক এক সময় মনে হয়, টলিউডের সঙ্গে বলিউডেও যদি সমান তালে অভিনয় করতে পারত, অভিনয় দুনিয়ায় যোগ্য সম্মান পেত। বেশ কয়েকটি ছবিও করেছে। কিন্তু জায়গা করতে পারেনি। আসলে, বলিউডে বাঙালি অভিনেতা, অভিনেত্রীদের পার্শ্বচরিত্রের জন্য কদর রয়েছে। উত্তমকুমার, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, রঞ্জিত মল্লিক— সবাই চেষ্টা করেছিলেন, হয়নি। ব্যতিক্রম বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মিঠুন চক্রবর্তী। এখনও বলিউড কুর্নিশ করে এঁদের।