টলিপাড়ায় ফের অভিনেত্রীকে হেনস্থার অভিযোগ প্রযোজকের বিরুদ্ধে। প্রতীকী ছবি।
রুপোলি পর্দার দুনিয়ায় একের পর এক হেনস্থার অভিযোগ উঠছে। মালয়ালম ছবির জগতে হেনস্থা নিয়ে হেমা কমিটি এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তার পরই বাংলা চলচ্চিত্র জগতেও একের পর অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন অভিনেত্রীরা।
দিন কয়েক আগেই পরিচালক অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ করেন তাঁরই একটি সিরিজ়ে কর্মরতা অভিনেত্রী। পর অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন এক মডেল। আর এক প্রযোজকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন অরিন্দম শীল পরিচালিত ‘মিতিনি মাসি’ ছবির এক অভিনেত্রী। হোয়াট্সঅ্যাপে ওই অভিনেত্রীকে যৌনাঙ্গের ছবির পাঠানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। আর কী ঘটেছিল তাঁর সঙ্গে? আনন্দবাজার অনলাইনকে জানালেন অভিনেত্রী।
ছবিতে অভিনয়ের পাশপাশি মডেলিংও করেন তিনি। কলকাতার নামী এক স্বর্ণবিপণির মুখ ছিলেন। বছর তিনেক আগে একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করতে গিয়েই মুখোমুখি হয়েছিলেন ওই প্রযোজকের। কলকাতা ও মুম্বইয়ে কাজ করা ওই প্রযোজকের সংস্থার তরফে ফোনেই যোগাযোগ করা হয় অভিনেত্রীর সঙ্গে। শুটিং হয় কলকাতায়। তার পর একদিন অভিনেত্রীকে তিনি প্রস্তাব দেন বাইরে কোথাও দেখা করার। অভিযোগ, তার পরেই শুরু হয় হেনস্থা।
অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘শুটিং ভাল ভাবেই মিটেছিল। তার পর একদিন কফির আমন্ত্রণ জানালেন। আমিও গেলাম। তখন থেকেই একটা অস্বস্তি শুরু হয়। কী যেন একটা খটকা লাগছিল! তার পর চলতি বছর মার্চ মাসে একদিন নিজের যৌনাঙ্গের স্বল্প ভিডিয়ো পাঠান।” অভিনেত্রীর দাবি, ওই ভিডিয়ো তাঁকে পাঠানো হয়েছিল বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যাতে এক বারের বেশি সেটি দেখা না যায়। কিন্তু অভিনেত্রীর প্রথমেই সন্দেহ হওয়ায় তিনি ওই ভিডিয়োর প্রতিছবি নিয়ে রাখেন। তাঁর অভিযোগ, ভিডিয়ো পাঠানোর পর বেশ কিছু বার্তাও পাঠান ওই প্রযোজক। উপেক্ষা করেন অভিনেত্রী। কিন্তু, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ফের তাঁকে ভাল থাকার শুভেচ্ছা-সহ একটি বার্তা পাঠান। সে দিন অভিনেত্রী লেখেন, “ভাবলেন কী করে ওই ছবি পাঠানোর পরও কথা বলব!”
অভিযোগ, এর পরেও পিছু হটেননি প্রযোজক। তিনি পাল্টা দাবি করেন, ‘‘ও আচ্ছা! এটা করবে আমি বুঝিনি। যাক গে ভাল থেকো।” শুধু তা-ই নয়। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, সম্প্রতি তাঁর ইনস্টাগ্রামে ফের যোগযোগ করার চেষ্টা করছেন প্রযোজক। ওই প্রযোজকের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন অভিনেত্রী। যদিও এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হননি। খানিকটা সঙ্কোচ করেই আইনি পদক্ষেপ করেননি বলে জানিয়েছেন। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘আমার মনে হয় এখন মুখ খোলা উচিত। কারণ, যদি এখনও আমরা চুপ করে থাকি তবে হয়তো এটা কখনওই বন্ধ হবে না। আসলে ধরেই নেওয়া হয়, অভিনেত্রী মানেই সহজে হেনস্থা করা যায়। খুব বেশি প্রতিপত্তি নেই, এমন প্রযোজকও যদি এই ব্যবহার করেন, তা হলে বোঝাই যায় দীর্ঘ দিন ক্ষমতাভোগ করেছেন যাঁরা, তাঁরা কী করছেন!’’
আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অভিযুক্ত প্রযোজকের সঙ্গেও। তিনি বলেন, ‘‘আমি ভাবতেই পারি না এ রকম অভিযোগ উঠতে পারে আমার বিরুদ্ধে! ওই অভিনেত্রী তো আমার বন্ধুও নন, পরিচিতি রয়েছে মাত্র। আর এমন ভিডিয়ো যদি পাঠিয়ে থাকি, তা হলে কি আবার কুশল সংবাদ নিতে যোগাযোগ করতাম!।” এরই পাশাপাশি ওই প্রযোজক দাবি করেন, তাঁর মোবাইল ওই দিনই হয়তো হ্যাকড হয়েছিল। অভিযোগ হয়তো সেই সময়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই। প্রযোজক বলেন, “আমি সত্যি বুঝতে পারলাম না কেন এই অভিযোগটা আনা হল?’’