Dev

করোনা-আমপান: দাঁড়িপাল্লায় মিমি-নুসরতরা কে কোথায় দাঁড়িয়ে

পকেটে টান পড়া, রুজি-রুটি হারানো, দুর্বিষহ জীবনযাপন বয়ে নিয়ে চলা অসংখ্য মানুষকে সুরাহার পথ দেখাতে পারবেন এই সাংসদরা?

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২০ ১২:১২
Share:

গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।

ইনস্টাগ্রামে পছন্দের রেসিপি শেয়ার করলেন অভিনেত্রী সাংসদ নুসরত জাহান। দিনটা ২৯ মার্চ। ওই একই দিনে করোনায় সামজিক দূরত্ব নিয়ে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করলেন অভিনেত্রী সাংসদ মিমি চক্রবর্তী। যেখানে দেখা যায় বাজারে সামাজিক দূরত্ব কেমন করে বজায় রাখা হবে সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতেই নিজের ছবির একটি ক্লিপিংসে ডায়লগ বসিয়ে অভিনব কায়দায় সতর্কবার্তা দিলেন অভিনেত্রী। ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়।

Advertisement

আবার, মিমি যেখানে ইনস্টাগ্রামে একের পর এক পোস্টে জনসচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন, এলাকার সাংসদ হিসেবে মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ত্রাণ পাঠাচ্ছেন, সেখানে নুসরত কোনও দিন কেক বানাচ্ছেন, কোনও দিন লিখছেন সাজপোশাক নিয়ে, কোনও দিন (১৩ ও ১৪ মে) আবার নিজের নানা মুডের ছবি দিয়ে ভরিয়ে তুলছেন ইনস্টার দেওয়াল।

দু’জনেই অভিনেত্রী। দু’জনেই নির্বাচনে প্রথম বার জিতে সাংসদ। বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে দু’জনেই এসেছেন এক সময়ে। দু’জনেই দু’জনকে ‘বোনু’ বলে ডেকে থাকেন। সামনাসামনি তাঁদের ভালবাসা, সোশ্যাল মিডিয়ায় একসঙ্গে পোস্ট ভক্তদের চমকে দেয়। কিন্তু অতিমারি আর অতি ঝড়ের এই দুর্যোগ সাংসদ হিসেবে কি এগিয়ে দিল মিমি চক্রবর্তীকে?

Advertisement

লন্ডন থেকে ফিরে প্রথম দিকে যদিও অতিমারির প্রকোপ বা তার পরিণাম নিয়ে পুরোপুরি সচেতন ছিলেন না মিমি। লকডাউন যে এত দিন চলবে সেটাও বোঝার জো ছিল না। মিমি তখন বাড়ির রান্নাঘরে না ঢুকেও ব্যালকনিতে বসে ‘হার্বাল টি’ বানিয়ে পোস্ট করছিলেন। কিন্তু পরবর্তী কালে করোনা সংক্রমণের বৃদ্ধি, মৃত্যু সংবাদ মিমিকে সাংসদ হিসেবে সক্রিয় করে তোলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট নয়, রাস্তায় নামেন সাংসদ।

নিজের এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করলেন অভিনেত্রী-সাংসদ মিমি। নিজস্ব চিত্র।

বাংলা নববর্ষে এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন মিমি। শুধু লকডাউনেই নয়, ভাইরাল হওয়া চা-বিক্রেতা ‘চা কাকু’র সারাজীবনের দায়িত্ব নেন মিমি চক্রবর্তী। এলাকার মানুষকে মাস্ক, স্যানিটাইজার, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেন।

শুরু হয় রমজান। প্রত্যেক বারের মতো এ বারেও ইফতারের সময় তাঁর এলাকার মানুষের পাশে থাকার অভিনব ব্যবস্থা করেছিলেন মিমি। এই প্রথম কোনও সাংসদ লাইভ স্ট্রিমিং-এ তাঁর কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বললেন। ‘‘প্রত্যেক বার রমজানের সময় ওই এলাকার মানুষের কাছে পৌঁছে যাই। কথা বলি। একসঙ্গে খাই। রমজান আসতেই মনে হচ্ছিল, কী করি? আমার দক্ষ অফিসের টিম প্রস্তুত হয়ে গেল। ইফতারের সামগ্রী পাঠালাম আর ওঁদের ফোনে বা ল্যাপটপে সরাসরি অসুবিধের কথা জানতে পারলাম’’, আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলেছিলেন মিমি। অন্য দিকে কোভিড জয়ী মনামী বিশ্বাসকে লাইভে এনে করোনা সম্পর্কে মানুষের ভয় দূর করে লড়াইয়ের মানসিকতা তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন সাংসদ। করোনা নিয়ে অযথা ভয় না পেয়ে মানুষ যাতে সচেতন হন সেই প্রচেষ্টাই করেছিলেন মিমি।

অন্য দিকে, লকডাউনে নিজের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান নুসরত। বাড়ি থেকে মাস্ক, স্যানিটাইজার পাঠিয়ে দিলেও তাঁকে বসিরহাটের মানুষ দেখেননি। লকডাউনে অবশ্য কোনও সাংসদ রাস্তায় নামেননি।নুসরত বাড়িতে বসেই তাঁর অফিসের সঙ্গে মিটিং সেরেছেন। এই সময় তাঁর বাবার কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ে। পরিবারের সঙ্গে নুসরতকেও ১৪ দিনের জন্য হোম কোয়রান্টিনে যেতে হয়। এই সময় কখনও ঘন লাল লিপস্টিক পরে ডিপ্রেশন কাটাবার কথা বলেন নায়িকা, তো কখনও নিজের ছবি পোস্ট করে মানসিক জোর নিয়ে লেখেন। দু’সপ্তাহ হোম কোয়রান্টিনে থাকার পর বেহালার বৃদ্ধাবাস আর বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষের পাশে দাঁড়ান নুসরত। প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী দিয়ে তাঁদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানও।

লকডাউনের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় নুসরতের ছবির কোলাজ

কিন্তু মাঝে মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ার নুসরত জাহানের নানা পোস্ট ঘিরে এই অভিনেত্রী সাংসদের জীবনে ঘটে নানা বিপত্তি। রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় রবীন্দ্রনাথের ছবি পোস্ট করেছিলেন তিনি। তবে নুসরত জাহান বুঝতে পারেননি, এই পোস্টের জন্য তাঁকে ট্রোলিংয়ের মুখে পড়তে হবে। উঠেছে চুরির অভিযোগও।ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল নামে এক শিল্পী পেন্সিল ও পেন দিয়ে রবি ঠাকুরের একটি স্কেচ এঁকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। সেই একই ছবি নিজের ইনস্টা ও ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন নুসরত, সঙ্গে নিজের ছবি জুড়ে দিয়ে। নুসরতের সেই পোস্টে মূল ছবির শিল্পীর কোনও উল্লেখ না থাকায় শুরু হয়ে যায় ট্রোলিং। প্রশ্ন করা হলে নুসরত বললেন, ‘‘আমি ইন্টারনেট থেকে ছবিটা নিয়েছিলাম, যেখানে শিল্পীর নাম উল্লেখ করা ছিল না। এ রকম ছবি ইন্টারনেটে প্রচুর রয়েছে। ওই চিত্রশিল্পীকে অসম্মান করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না, যেখানে আমি নিজে এক জন শিল্পী।’’

##Savage ##savagechallenge ##fyp let’s do it @mimichakraborty86 @srabantigintu my ##savagegirls

জোরকদমে চলছে লকডাউন, সেই সময়েই এই ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন নুসরত

লকডাউনের মধ্যেই ঝামেলার কিন্তু সেখানে শেষ হয়নি। ফের বিতর্কের মুখে পড়েন বসিরহাটের সাংসদ নুসরত। এ বার স্বল্প পোশাকে টিকটক ভিডিয়ো পোস্ট করে নেটাগরিকদের রোষের মুখে পড়েন তিনি। বাবা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তাঁর কেন্দ্র বসিরহাটের অন্তর্গত বাদুড়িয়ায় দিন কয়েক আগে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে— সেই পরিস্থিতিতে কী করে নিশ্চিন্তে টিকটক ভিডিয়ো বানাতে পারেন তিনি? তা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন নেটাগরিকদের একাংশ।

তবে শুধু টিকটক ভিডিয়োই নয়, আমপান পরবর্তী সময়ে হিঙ্গলগঞ্জের বিপন্ন মানুষের পাশে সাংসদ নুসরত। নিজস্ব চিত্র।

কিছু দিন আগে টিকটকে একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেন নুসরত। সেখানেই হটপ্যান্ট এবং ক্রপটপে #স্যাভেজ চ্যালেঞ্জে অংশ নেন তিনি। শুধু তাই নয়, একই চ্যালেঞ্জ নিতে ট্যাগ করেন মিমি চক্রবর্তী এবং শ্রাবন্তীকেও। এর পরেই শুরু হয় বিতর্ক। কমেন্ট সেকশনে বইতে থাকে সমালোচনার ঝড়। অনেকেই নুসরতকে সরাসরি উল্লেখ করে বলেন, “টিকটক করার সময় অনেক আছে ম্যাডাম। এ বার একটু মানুষের পাশে দাঁড়ান।” যদিও বিতর্কের মাঝেই ৫ লক্ষ ১১ হাজারের বেশি মানুষ দেখে ফেলেন নুসরতের সেই টিকটক নাচ। ফেসবুক, ইউটিউব-সহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই নাচ এখন ভাইরাল।

এর মাঝেই ২০ মে-র আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে দুই সাংসদের এলাকা। মিমি বেরিয়ে পড়েন বারুইপুর, সোনারপুর, ভাঙড়ে। খাদ্যসামগ্রী থেকে ত্রিপল দেন এলাকার মানুষকে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখেন কোথায় কতটা ক্ষতি হয়েছে। মানুষকে আশ্বস্ত করেন তিনি। বলেন, ত্রাণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। এরই পাশাপাশি গড়িয়া, পাটুলি, গল্ফগ্রিন আর যাদবপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন, আর যাঁরা এই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে কাজ করছেন, সেই বিদ্যুৎকর্মী থেকে গাছ কাটার কর্মীদের সাহায্য করার জন্য সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করেন মিমি। আনন্দবাজার ডিজিটালকে নিজের কাজের কথা বলতে গিয়ে বলেন, “করোনা আর আমপান নিয়ে যা অবস্থা হয়েছে তাতে আমরা যে কাজই করি না কেন, মনে হবে কম কাজ হল। আজ প্রত্যেক মানুষের নিজের জায়গা থেকে এই দুর্দিনে কোনও না কোনও ভাবে নিজের সাধ্যমতো সাহায্য করা উচিত! থেমে থাকলে চলবে না।” তাঁর প্রিয় বন্ধু নুসরত কি তা হলে বসিরহাটে কম কাজ করেছেন? “দেখুন, আমি অন্য কারও কাজের বিষয়ে কী করে কথা বলব? যে যার মতো করে কাজ করে যাচ্ছে”, সাফ জবাব মিমির।

নিজের এলাকায় ত্রিপল দিচ্ছেন মিমি। নিজস্ব চিত্র।

আমপানের তাণ্ডবের পরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করেছে রাজ্য সরকার। আমপানের দু’দিন পরে স্বামী নিখিলকে নিয়ে বসিরহাট পৌঁছন নুসরত। আনন্দবাজার ডিজিটালকে তিনি বলেন, “যখন করোনার সঙ্গে লড়াই করছিলাম তখন কলকাতায় বসে নিজের কেন্দ্রের মানুষকে মাস্ক, স্যানিটাইজার, খাবার পৌছনোর কাজ করেছি। ভিডিয়ো কলে ক্রমাগত করোনা সচেতনতা নিয়ে কথা বলেছি। মিটিং করেছি। আমপানের পর ভোর সাড়ে ৫টায় কাউন্সিলরকে গাছ কাটিয়ে বসিরহাট ছুটেছি।”


বৃহস্পতিবার, ২৮ মে নুসরত দ্বিতীয় বার সন্দেশখালি আর হিঙ্গলগঞ্জ যান। বিডিও অফিসে প্রশাসনিক বৈঠক সেরে বোলতলা বিএসএফ ঘাটে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। প্রথম বার বসিরহাট গিয়ে তিনি রিলিফ সেন্টারেও যান এবং কেন্দ্রের পার্টি অফিস থেকে ফেরার পথে তিনি চাল বিতরণ করেন মালঞ্চতে। নুসরতও বলেন, এখনও প্রচুর কাজ করা বাকি। তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা আসেনি। টলিউডের বন্ধুবান্ধব, প্রবাসী বাঙালিদের সাহায্যে টাকা জোগাড় চলছে।” তবে তিনি পরিষ্কার বলে দেন, “কী ভাল কাজ করলাম, কত কাজ করলাম, এর মাপকাঠি আমি না। আমার বসিরহাটের মানুষ বলবে।”

মিমি-নুসরত তো তারকা, তাঁদের প্রতিটি পদক্ষেপই থাকে নজরের কেন্দ্রে। কিন্তু লকডাউনের গোটা পর্ব এবং আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্যের অন্য সাংসদদের ভূমিকা কী ছিল? ধরা যাক বারাসতের তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের কথা। তিনি নিজে বেশ কিছু এলাকায় বিভিন্ন কাজের তদারকি করেছেন। বারাসত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেগঙ্গা। এ ছাড়া রাজারহাট এবং অশোকনগরের গ্রামাঞ্চলেও আমপান ভালই তাণ্ডব চালিয়ে গিয়েছে। মধ্যমগ্রামের খিলকাপুর এবং রোহন্ডা এলাকাতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ঝড়ের পরে প্রথম চার-পাঁচ দিন কেটে গিয়েছিল ভেঙে পড়া গাছপালা সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানোর ব্যবস্থা করতে। গাছ সরানো ছাড়াও পানীয় জল এবং খাবারের যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল, তা-ও মেটানোর চেষ্টা করেন সাংসদ। তাঁর কথায়: ‘‘চাল কিছুটা জোগাড় করা ছিল। পানীয় জলের ছোট-বড় বোতল এবং জারও যতটা পেরেছি জোগাড় করেছি। তার পরে চাল, জল এবং শুকনো খাবার দুর্গত এলাকায় পৌঁছে দিতে শুরু করেছি। অনেকেরই ঘর ভেঙে গিয়েছে ঝড়ে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখানে ত্রিপল পাঠানোরও ব্যবস্থা করেছি।’’

১৪ মে-ও ইনস্টাগ্রামে সাদা-কালোয় বিভিন্ন মুডের ছবি পোস্ট করেন নুসরত

এই একই সময়ে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ কী করেছেন? বেশ কয়েকটি জায়গায় তিনি নিজেই পৌঁছে যান। এই লোকসভা এলাকার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমডাঙা বিধানসভা এলাকা। এ ছাড়া নোয়াপাড়া এবং নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রামীণ অঞ্চলেও ঝড়ের প্রভাব ছিল ব্যাপক। বহু ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে ওই সব এলাকায়। ঝড়ের পরে বেশ কিছু এলাকায় অর্জুন সিংহ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান। দলীয় সংগঠন কাজে লাগিয়ে অন্যান্য এলাকার খবরও নেন। অর্জুনের কথায়: ‘‘যাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে, তাঁদের জন্য আগে ত্রিপলের ব্যবস্থা করেছি। সবাইকে ত্রিপল বা পলিথিন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই অনেকের বাড়ি মেরামত করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। যেখানে মেরামতির জন্য মালপত্র নিয়ে পৌঁছনো সম্ভব হয়নি, সেখানে নগদ টাকা দিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে ওই টাকায় তাঁরা আপাতত ঘরটা সারিয়ে নিতে পারেন।’’

আরও পড়ুন: পয়সা ফেলে টক শো শুনুন, সুন্দরবন বাঁচাতে ফেসবুকে নয়া উদ্যোগ

আমপানের তাণ্ডবে দক্ষিণ ২৪ পরগনাও সাঙ্ঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু উদ্যোগ দেখা গিয়েছে পরিস্থিতি মোকাবিলার। দুর্গত এলাকায় দ্রুত ত্রিপল, শুকনো খাবার ও পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া তার মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া লকডাউনে উপার্জন হারানো মানুষজনের সুরাহার জন্য রান্না করা খাবারের যে ব্যবস্থা হয়েছিল, তা-ও এই সময়ে অনেকের সুরাহা করছে বলে খবর। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে অনেক জায়গায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতির ব্যবস্থাও হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। তবে মথুরাপুর এবং জয়নগরের তৃণমূল সাংসদ চৌধুরীমোহন জাটুয়া এবং প্রতিমা মণ্ডলকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বলে খবর। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ওই দুই লোকসভা কেন্দ্রের বহু মানুষ দুর্গত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু ত্রাণ বা পুনর্গঠন, কোনও কিছুতেই জাটুয়া বা প্রতিমার উল্লেখযোগ্য ভূমিকার ছবি এখনও ধরা পড়েনি।

পেশাদার রাজনীতিকদের এই ভূমিকার পাশাপাশি আর এক তারকা-সাংসদ দেব এই সময়ে কোথায়? মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহানের গতিবিধি ও কার্যকলাপ সম্পর্কে তো জানা গিয়েছে। কিন্তু দেব?

আমপানের তাণ্ডবের পরে সাংসদ-অভিনেতা দেব তাঁর নিজের কেন্দ্র ঘাটালে যাননি কেন, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে। যদিও এ ব্যাপারে দেবের জবাব ভিন্ন, তাঁর এলাকায় কী কী কাজ করেছেন তা তিনি ছবি পোস্ট করে জানাতে একেবারেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না। লকডাউনের সময়ে তিনি নিয়মিত জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, টাকা পাঠিয়েছেন। “আমি বহু বার যেতে চেয়েছি। কিন্তু জেলাশাসক আর পুলিশ সুপার বলেছেন, আপনি এলে পাঁচ হাজার লোকের জমায়েত হবে। সামাজিক দূরত্ব আর বজায় রাখা যাবে না”, আত্মপক্ষ সমর্থনে বলছেন দেব।

বাঁ-দিক থেকে কাকলি ঘোষদস্তিদার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দেব এবং অর্জুন সিংহ। গ্রাফিক- তিয়াসা দাস।

তবে, নিজে না গেলেও কিছু কাজ করেছেন ঘাটালের এই সাংসদ। ঘাটালে যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল রয়েছে সেখানে লকডাউনে রোগীর পরিজনদের খাওয়ার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তখন সাংসদ-অভিনেতার নির্দেশে সেখানে রান্না করে রোগীর পরিজনদের খাবার দেওয়া শুরু হয়। এমনকি, ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে বিভিন্ন জায়গার দুঃস্থ পরিবারগুলিকেও খাবার দেওয়া হয় এবং মাঝেমধ্যে নানা ত্রাণসামগ্রীও তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এই কাজ এখনও চলছে দেবের তত্ত্বাবধানে। যদিও গত ১৬ মে মেদিনীপুর জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের কাজের সবিস্তার বর্ণনা দেন দেব।

যাদবপুরের মিমি চক্রবর্তী, বসিরহাটের নুসরত জাহান, ঘাটালের দেব— টলিউডের তিন তারকা-সাংসদ রাজনীতির মেঠো পথে হাঁটা শুরু করেছেন খুব বেশি দিন হয়নি। আরও তিন পোড়খাওয়া রাজনীতিক— বারাসতের কাকলি ঘোষদস্তিদার, ব্যারাকপুরের অর্জুন সিংহ, ডায়মন্ড হারবারের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য এ পথের পথিক অনেক দিনই।

কিন্তু প্রথমে করোনাভাইরাস উদ্ভূত লকডাউন ও অতি সম্প্রতি আমপান-পরবর্তী পরিস্থিতি দুই ধারার জনপ্রতিনিধিকেই মিলিয়ে দিয়েছে একই পথে। পকেটে টান পড়া, রুজি-রুটি হারানো, দুর্বিষহ জীবনযাপন বয়ে নিয়ে চলা অসংখ্য মানুষকে কি কিছুটা হলেও সুরাহার পথ দেখাতে পারবেন এই সাংসদরা?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement