রামলীলায় অভিনয় করতে করতেই প্রতিবেশীদের প্রিয় লক্ষ্মণ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। নিজের জনপ্রিয়তা দেখে নিজেই অবাক হয়ে যেতেন। পাড়ায় পাড়ায় এই রামলীলাই তাঁকে অভিনেতা হয়ে ওঠার রসদ জুগিয়েছিল।
রামলীলার লক্ষ্মণ থেকে তিনি সবার প্রিয় ‘অফিস অফিস’-এর ভাটিয়া বাবুও হয়ে উঠেছিলেন খুব অল্প সময়ের মধ্যেই। এমন এক সময়ে বাবার মৃত্যু তাঁকে মুম্বই থেকে ফের দিল্লি নিয়ে এনে ফেলে।
অভিনয় ছেড়ে হাল ধরতে হয় পরিবারের। বড় দাদার দায়িত্ব পালন করতে রোজ বাবার দোকানে গিয়ে বসতে হত তাঁকে। ভাই-বোন, মায়ের সব দায়িত্ব একার মাথায় বইতে বইতে অভিনয়ের ‘ভূত’ সকলেরই মাথা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা।
মনোজ কিন্তু সেটা হতে দেননি। অভিনয়ের ভূতকে নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রেখে দিয়েছিলেন তিনি। ভাইকে ব্যবসার হাল ধরার যোগ্য করে তুলে তারপর ফের মুম্বই আসেন তিনি। ফের শুরু করলেন স্বপ্নের দৌড়।
তিনি বলিউডের অত্যন্ত পরিচিত মুখ মনোজ পহবা। দিল্লির একটি পঞ্জাবি পরিবারে জন্ম মনোজের। তাঁর পূর্বপুরুষ পাকিস্তানের অন্তর্গত পঞ্জাবের বাসিন্দা ছিলেন। দেশভাগের সময় তাঁরা দিল্লিতে চলে আসেন।
কোনওদিনই সে অর্থে মেধাবী ছিলেন না মনোজ। তবে স্কুলে ড্রামায় অংশ নিতেন। ফলে মেধাবী না হওয়া সত্ত্বেও তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সহপাঠীদের মধ্যে।
পাড়ার রামলীলাতেও অংশ নিতে শুরু করেছিলেন। ধীরে ধীরে তিনি অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
দিল্লিতে মনোজের বাবার গাড়ি সারানোর দোকান ছিল। নিজের ইচ্ছার কথা পরিবারে জানিয়ে হাসির পাত্র হয়েছিলেন তিনি। পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে, নিশ্চিত উপার্জন ছেড়ে অনিশ্চিত জীবনের দিকে পা বাড়াতে সকলেই বারণ করেছিলেন তাঁকে।
মনোজ শোনেননি। দিল্লির ন্যাশনাল পাবলিক স্কুল থেকে পাশ করার পর তিনি দিল্লির একটি থিয়েটার দলে যোগ দেন। সেখানেই পরিচয় সীমা পহবার সঙ্গে।
মনোজ ইতিমধ্যে দূরদর্শনে অডিশনও দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথমবার তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৯৮৪ সাল নাগাদ দূরদর্শনে সম্প্রচার হতে শুরু হয় ‘হম লোগ’ নামে একটি ধারাবাহিক।
সপ্তাহে তিন দিন সম্প্রচার হত। এটি দেশের প্রথম ধারাবাহিক ছিল। তাতে সুযোগ পেয়েছিলেন মনোজ। তাঁর সঙ্গে সীমাও অভিনয় করেছিলেন ধারাবাহিকে।
মনোজের ইচ্ছা ছিল হিন্দি ছবিতে অভিনয় করার। কিন্তু এমন সময় হঠাৎই বাবা মারা যান। মনোজ তখনই বাড়ি ফিরে আসেন। বড় দাদা হিসাবে পরিবারের দায়িত্ব তখন তাঁর কাঁধে।
দিল্লিতে বাবার দোকানের হাল ধরেন তিনি। পরিবারের ভাল-মন্দ সমস্ত দায়িত্ব পালন করলেন। পড়াশোনা শিখে ভাই ব্যবসা সামলানোর উপযুক্ত হলে তাঁকে সমস্ত বুঝিয়ে দিয়ে ফের স্বপ্ন আঁকড়ে মুম্বই চলে এলেন।
তত দিনে সীমার সঙ্গে বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাঁর। তাঁদের দুই সন্তান। সপরিবারে মুম্বই চলে আসেন। সীমা নিজেও অভিনেত্রী ছিলেন। মনোজের সিদ্ধান্তে তাই পূর্ণ সমর্থন ছিল তাঁর।
বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি তাঁকে। মুম্বই এসেই টেলিভিশনে কাজ পেয়ে যান তিনি। ১৯৯৬-এর ‘জাস্ট মহব্বত’, ২০০১-এর ‘অফিস অফিস’ অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান তিনি। ‘অফিস অফিস’-এর সরকারি অফিসের কর্মী ভাটিয়াবাবুকে আজও মনে রেখেছে দর্শক।
১৯৯৬ সালে ‘তেরে মেরে সপনে’ নামে একটি হিন্দি ছবিতেও সুযোগ আসে। এখনও পর্যন্ত ৫০টির বেশি ছবি করেছেন তিনি। বলিউডের বাইরে পঞ্জাবি ছবিতেও হাত দিয়েছেন।
ওয়ান্টেড, হাউসফুল, রেডি, ধামাল, দাবাং ২, জলি এলএলবি-র মতো একাধিক ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
মুম্বইয়ের ভারসোভায় সপরিবার থাকেন মনোজ। দিল্লিতে তাঁর পরিবারের সঙ্গেও নিত্য যোগাযোগ রাখেন। স্ত্রী সীমা নিজেও একজন অভিনেত্রী। অভিনয়ে পা রেখেছেন তাঁর দুই ছেলেমেয়েও।