কেরিয়ারের শুরুতে দুর্দান্ত সাফল্য এলেও এক সময় পর পর ব্যর্থতার মুখে পড়ে মনীষা কৈরালার ছবি। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে মনীষা কেরিয়ারে সাফল্যের দৌড়ে পিছিয়ে পড়েছিলেন মাধুরী দীক্ষিতের কাছে।
মনীষার প্রথম ছবি ‘সওদাগর’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৯১ সালে। বক্স অফিসে সুপারহিট হয় এই ছবি। অন্যদিকে মাধুরী অভিনেত্রী হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছিলেন আশির দশকে। প্রথমে একটানা ব্যর্থতার পরে তিনি তত দিনে অনেকটাই নিজের জায়গা মজবুত করে ফেলেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে।
১৯৯১-এ মুক্তিপ্রাপ্ত মাধুরীর ছবি ‘সাজন’-ও বক্স অফিসে সুপারহিট হয়। সে সময় শ্রীদেবী-মীনাক্ষীরা অনেকটাই অস্তমিত। ফলে এক নম্বর নায়িকার আসনের জন্য জমে ওঠে মনীষা-মাধুরী লড়াই।
১৯৯১ সালে নিজের ছবি ‘১৯৪২ এ লভ স্টোরি’-র জন্য নায়ক নায়িকা ঠিক করছিলেন পরিচালক বিধুবিনোদ চোপড়া। অগস্ট আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ১৯৯২-এ।
কিন্তু পরে ছবি মুক্তিতে দেরি হয়। দু’বছর পরে ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। পরিচালক বিধুবিনোদ প্রথম থেকেই ঠিক করেছিলেন ছবির মূল ভূমিকায় থাকবেন অনিল কপূর, মাধুরী দীক্ষিত এবং জ্যাকি শ্রফ।
ছবিতে নায়িকা মাধুরীর বোনের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য অভিনেত্রী খুঁজছিলেন বিধুবিনোদ। তিনি এই চরিত্রে মনীষাকে মনোনীত করেন। অডিশনের জন্য ডাক পান মনীষা।
অডিশনে মনীষাকে কিছু দৃশ্যে অভিনয় করে দেখাতে বলেন পরিচালক। শোনা যায়, এরপর মনীষার অভিনয় দেখে ক্ষুব্ধ হন বিধুবিনোদ। রেগে গিয়ে তিনি নাকি মনীষাকে বলেছিলেন, তিনি খুব খারাপ অভিনেত্রী।
বিধুবিনোদের কথায় অপমানিত মনীষা এক দিন সময় চেয়ে নেন। কথা দেন, পরের দিন ভাল অভিনয় করে দেখাবেন। শুনে বিধুবিনোদ বলেন, তিনি যদি সত্যি ভাল অভিনয় করতে পারেন, তা হলে মাধুরীকে বাদ দিয়ে মনীষাকেই মূল নায়িকা করবেন তিনি।
পরিচালকের দেওয়া এই চ্যালেঞ্জ নেন মনীষা। বাড়ি ফিরে কঠোর অনুশীলন করেন। পরের দিন আবার যান বিধুবিনোদের কাছে।
এ বার তাঁকে দেখে চমকে যান বিধুবিনোদ। মুগ্ধ হয়ে যান মনীষার পারফরম্যান্সে। রাতারাতি মনীষা এতটাই পাল্টে ফেলেছিলেন নিজের অভিনয়, নিজের প্রতিশ্রুতি রাখতে বাধ্য হন বিধুবিনোদ।
মাধুরীকে খুবই পছন্দ করতেন বিধুবিনোদ। তিনি ‘পরিন্দা’ পরিচালনা করেছিলেন অনিল কপূর-মাধুরী দীক্ষিত-জ্যাকি শ্রফকে নিয়ে। এই একই জুটি নিয়ে তিনি ‘১৯৪২: এ লভ স্টোরি’ সিনেমাটিও করতে চেয়েছিলেন।
কিন্তু এ বার তিনি মনীষাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখলেন। মাধুরীর বদলে তাঁকেই নিলেন পরবর্তী ছবিতে। ‘১৯৪২: এ লভ স্টোরি’ থেকে বাদ পড়ল নায়িকা রাজেশ্বরীর বোনের চরিত্রটি।
অগস্ট আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই ছবিতে মনীষা কৈরালার অভিনয় প্রশংসিত হয়। এই ছবির সুবাদে তিনি সুযোগ পান মণিরত্নমের ‘বম্বে’ এবং সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ছবি ‘খামোশি: দ্য মিউজিক্যাল’-এ। বলা হয়, ‘১৯৪২: এ লভ স্টোরি’-তে অভিনয়ের সুবাদে ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকা হিসেবে পরিচিতি পান মনীষা।
পরবর্তী সময়ে শাহরুখ-আমির-সলমন, তিন নায়কের বিপরীতেই নিজের অভিনয় ক্ষমতার স্বাক্ষর রাখেন মনীষা। ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত নায়িকাদের মধ্যে একসময় অন্যতম ছিলেন তিনি।
২০১০-এ বিয়ে করেন মনীষা। তাঁর স্বামী সম্রাট দহল ছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু ছ’ মাস পর থেকেই তাঁদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। ২০১২-এ মনীষার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। সে বছরই ধরা পড়ে, মনীষা ক্যানসার-আক্রান্ত।
এরপর চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্ক পাড়ি দেন মনীষা। পাঁচ বছর পর ২০১৭-এ চিকিৎসকরা জানান, তিনি এখন ক্যানসারমুক্ত। মনীষা ফের কামব্যাক করেন বলিউডে।
কামব্যাকের পরে মনীষা কেরিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংসও শুরু করেন বিধুবিনোদ চোপড়ার হাত ধরেই। সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক ‘সঞ্জু’-তে তিনি অভিনয় করেন নার্গিসের ভূমিকায়। এই ছবিতেও তাঁর অভিনয় দাগ কেটে যায় দর্শকদের মনে।
সঞ্জয় দত্তের হোম প্রোডাকশনের ছবি ‘প্রস্থানম’-এও অভিনয় করেছেন মনীষা। অভিনয়ের পাশাপাশি সমাজসেবা এবং ক্যানসারের বিরুদ্ধে সচেতনতা প্রসারেও তিনি এখন অন্যতম মুখ।