মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।
তাঁর ভাইজান সলমন খানের থেকে কথা আদায় করে নিলেন দিদি। বাংলাকে মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির নয়া গন্তব্য হিসাবে মেলে ধরে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সলমন খান, অনিল কপূর, মহেশ ভট্টদের বললেন, “বাংলাকে কিছু দিতে চাইলে এখানে ছবি করুন।” পাহাড় থেকে গঙ্গাসাগর, জেলার পর জেলার নাম করে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ‘চলে আসুন! পরিকাঠামো তৈরি। বাংলায় অনেক প্রতিভা, সম্ভাবনা সব অপেক্ষায় ভাইজান আয়েগা হি আয়েগা’!
মমতাদিদির কথার পিঠে তাঁর ভাইজানও দিদির সঙ্গে ঈষৎ মজা করলেন! ‘‘কী কথা রাখতে হবে, দিদি? ওয়াদা নেহি নিভানে কা (কথা না রাখার কথা দিতে হবে)!’’ পর ক্ষণেই সলমন বললেন, “এখানে শুটিং করতে অবশ্যই আসব!” ২৯তম উৎসবের উদ্বোধক সলমন খান অবশ্য তার আগেই উৎসবের গানের ভিডিয়ো রিলের সঙ্গে নাচার জন্য ‘মমতাদিদি’কেও আসন থেকে কার্যত টেনে তুলেছেন। আঁতকে উঠেও ছাড় পেলেন না মুখ্যমন্ত্রী। সলমন, সোনাক্ষী, অনিল, মহেশদের সঙ্গে তাঁকেও পা মেলাতে, হাত দোলাতে হল। মমতার ছোট্ট বাড়ি নিয়ে তাঁর বিস্ময়ের কথাও বলেন সলমন। "এত ছোট বাড়িতে এত বড় এক জন মানুষ কী করে থাকেন!"
গত কয়েক বছর ধরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কিফ-এর উদ্বোধনী মঞ্চেও রাজনীতির আঁচ এসে পড়ছে। গত বার গেরুয়া-বাহিনীর ‘পাঠান’ বন্ধ করার হুমকির মুখে অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানেরা এই মঞ্চেই প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন। লোকসভা ভোটে বিজেপি-শিবিরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুখ হিসেবে এ দিন মমতাকে কার্যত তুলে ধরেছেন তাঁর দলেরই তারকা-সাংসদ শত্রুঘ্ন সিন্হা। মমতাকে তিনি ‘দেশের জনপ্রিয়তম মুখ্যমন্ত্রী’ এবং সব থেকে ট্রায়েড (পরীক্ষিত), টেস্টেড (পোড়খাওয়া), সাকসেসফুল (সফল) নেতা হিসাবে অভিহিত করেন। একটি উর্দু কবিতা শুনিয়ে বলেন, যা পরিস্থিতি, ভয়ের কিছু নেই। মমতাও পাল্টা কবিতায় আশার বাণী শুনিয়েছেন। সেই সঙ্গে গর্জনের ভঙ্গিতে বলেছেন, “বাংলা ভয় পায় না। বাংলা সবাইকে ভালবাসে। মুম্বই, ভারত, মানবতাকে ভালবাসে।”
সলমনের কাছে বাংলায় শুটিং করতে আসার পাশাপাশি ভাইফোঁটায় বা রাখি পরতে আসার কথা আদায় করার ফাঁকে মমতা বলেন, ‘‘যদি পরের বার আমরা বেঁচে থাকি…!’’ রাজনৈতিক মহলের অনেকের মনে হয়েছে, রাজনৈতিক ভাবে টিকে থাকার কথাই মমতা বুঝিয়েছেন! এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী হিন্দিতে বলেন, জীবন মৃত্যুর জন্য নয়, জীবনেরই জন্য আর বেঁচে থাকা মানে “ইডিয়োলজি কে সাথ লড়না হ্যায়, স্ট্র্যাটেজি কে সাথ হি লড়না হ্যায়”! এই আদর্শ এবং কৌশল নিয়ে বেঁচে থাকার প্রশ্নেই মমতা ফের তাঁর বলিউডি বন্ধুদের বলেন, “এই জন্যই আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আপনাদের দরকারে আমরা আছি। আমাদের দরকারেও আপনাদের থাকতে হবে।”
প্রত্যাশিত ভাবেই মহেশ ভট্ট, অনিল কপূর, সোনাক্ষী সিন্হারা মমতার ব্যক্তিত্ব এবং চলচ্চিত্র শিল্পে বাংলার অবদান নিয়ে সরব হয়ে ওঠেন। বিনোদন শিল্পের বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান বাংলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। অমিতাভ-শাহরুখ এ বার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না-থাকায় আক্ষেপ করেন মমতা। বাংলার কালোত্তীর্ণ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের প্রসঙ্গে মুখ ফস্কে মৃণাল সেনকে মৃণালকান্তি সেন, সৌমিত্রকে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলে ফেলেছিলেন তিনি। সৌমিত্রের নামটি সঙ্গে সঙ্গে শুধরে নেন।
চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে বেশ কিছু দিন বাদে চিত্রশিল্পী মমতারও আত্মপ্রকাশ দেখা গেল। সলমনকে নিজের আঁকা ছবি উপহার দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনিল, শত্রুঘ্নকেও শিগগির ছবি পাঠিয়ে দেবেন তিনি।