হিন্দি ও পঞ্জাবি মিলিয়ে তিনশোর বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন সতীশ কউল। ‘প্যায়ার তো হোনা হি থা’, ‘আন্টি নাম্বার ওয়ান’, ‘জঞ্জীর’, ‘ইয়ারানা’, ‘রাম লক্ষ্মণ’, ছবির কুশীলবদের মধ্যে অন্যতম তিনি। দূরদর্শনে বি আর চোপড়ার ‘মহাভারত’-এ তিনি ছিলেন ইন্দ্রের ভূমিকায়। এখন যুদ্ধ করছেন চরম অনটনের সঙ্গে।
ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া থেকে ১৯৬৯ সালে উত্তীর্ণ হন সতীশ। জয়া বচ্চন, অনিল ধওয়ন, ড্যানি ডেনজোংপা ছিলেন তাঁর সহপাঠী। এর পর পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় শুরু করেন সতীশ। কিন্তু বলিউডের হাতছানি কোনওদিন উপেক্ষা করতে পারেননি।
বলিউডে একঘেয়ে কাজ করতে করতে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত নিজে বি আর চোপড়ার কাছে গিয়ে কাজ চেয়েছিলেন। তার পরেই ‘মহাভারত’-এ দেবরাজ ইন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয়।
হিন্দি ছবিতে দিলীপ কুমার, দেব আনন্দ, বিনোদ খন্নার মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু পঞ্জাবি ইন্ডাস্ট্রির মতো জনপ্রিয়তা বলিউডে পাননি সতীশ। সবার অগোচরেই হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রিকে বিদায় জানিয়ে ২০১১ সাল নাগাদ মুম্বই থেকে চলে গিয়েছিলেন লুধিয়ানা। তখন মূলত অভিনয় শেখাতেন।
নিজের অ্যাক্টিং স্কুলের পিছনে অনেক টাকা লগ্নি করেছিলেন সতীশ। কিন্তু তাঁর স্কুল বেশি দিন চলেনি। স্কুল বন্ধ হওয়ার পরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন সতীশ। যে আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিলেন, তার থেকেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি। পাশাপাশি, বাবা মায়ের চিকিৎসায় ও বোনের বিয়ে দিতে গিয়ে বড় অঙ্কের টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছিল।
কয়েক বছর বৃদ্ধাশ্রমে কাটানোর পরে সতীশের জায়গা হয় নার্স সত্যদেবীর বাড়িতে। বৃদ্ধাশ্রমে সতীশের নার্স ছিলেন সত্যদেবী। তিনি-ই নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন সতীশকে। গত কয়েক বছর ধরে লুধিয়ানায় সত্যদেবীর এক চিলতে ভাড়াবাড়িতেই আছেন সত্তরোর্ধ্ব সতীশ।
ইন্ডাস্ট্রি বা দর্শকরা যে তাঁকে ভুলে গিয়েছেন, তা নিয়ে এই প্রবীণের আক্ষেপ নেই। জানিয়েছেন, আবার অভিনয়ে ফিরতে চান তিনি। কিন্তু তার আগে জীবনধারণের অন্যান্য সম্বলটুকু চান।
অভিনেত্রী প্রীতি সপ্রুর সঙ্গে সতীশের যোগাযোগ আছে। পঞ্জাব সরকারের কাছে আবেদন করেছেন প্রীতি। সতীশকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা সাহায্যও করেছে পঞ্জাব সরকার। তবে এই দুরবস্থার জন্য প্রীতি কার্যত দায়ী করেছেন সতীশকেই।
প্রীতির ধারণা, অভিনেতা যদি সময় থাকতে থাকতে সঞ্চয় করতেন, তবে তাঁর আজ এই অবস্থা হত না। পাশাপাশি, পাঁচ বছর আগে এক দুর্ঘটনায় সতীশের মেরুদণ্ড মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার পর কার্যত অভিনয়ের সুযোগ কমে যেতে থাকে ক্রমশ।
বর্তমানে মধুমেহ-সহ অন্যান্য শারীরিক ও আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত অভিনেতা সতীশ। বিয়ের এক বছরের মধ্যে তাঁর ডিভোর্স হয়ে যায়। ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী চলে যান সতীশকে ছেড়ে। আবার বিয়ে করে তিনি এখন দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানবাসী। এই দুঃসময়ে সতীশের পাশে নেই তাঁর পরিজনরাও।
মাথার উপর আশ্রয়ের পাশাপাশি হারিয়েছেন আর্থিক সঙ্গতিও। ওষুধপত্র বা অন্যান্য জিনিসের জন্য তিনি এখন পরমুখাপেক্ষী। আর্তি জানিয়েছেন ইন্ডাস্ট্রির কাছে। যাতে এই দুঃসময়ে পাশে থাকেন সমব্যথীরা।