ইন্ডাস্ট্রিকে রাজনীতি মুক্ত রাখা হোক, বলছেন প্রসেনজিৎ

দুঃখ পুষে রাখতে চান না। সাম্প্রতিক বিতর্ক, কটু কথার জবাবে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়দুঃখ পুষে রাখতে চান না। সাম্প্রতিক বিতর্ক, কটু কথার জবাবে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়

Advertisement

পারমিতা সাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share:

প্রসেনজিৎ। ছবি: দেবর্ষি সরকার

প্র: প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ইদানীং খুব চুপচাপ মনে হচ্ছে!

Advertisement

উ: চুপচাপ? না-না। আমি তো কখনওই খুব একটা ভোকাল নই। আর ম্যাচিয়োরিটি, বয়স সবটাই তো বাড়ছে। তাই সব দিক থেকে বোধ হয় চুপচাপ থাকাটাই ভাল।

প্র: আপনি ম্যাচিয়োরিটির কথা বলছেন! সেটা কি কোনও ঘটনা বা ঘটনাসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে?

Advertisement

উ: নাহ! এই ৩৫ বছরের কেরিয়ারে প্রচুর ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো আমার জীবনের অংশ। তবে খুব ব্যস্ততা ছিল ছেলেকে লন্ডনে পড়তে পাঠানো নিয়ে। ও ক্লাস নাইনে ওখানে ভর্তি হচ্ছে। মিশুক ফুটবল খেলতে খুব ভালবাসে। তাই চেয়েছিলাম এমন একটা জায়গায় যাক, যেখানে ওর শখটাও বজায় রাখতে পারে।

প্র: বাবার চাপটা বুঝতে শিখেছে মিশুক?

উ: হ্যাঁ, ভাল-মন্দ সব দিকই বোঝে। সেটা আমরা ওকে বলিও। ওর বাবার কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা। সেটা সামলানো সহজ নয়। আর লেনদেনের বাইরে বেরিয়ে আমি বহু বছর ধরে অনেক ভূমিকা পালন করেছি, যে কারণে এই এক্সপেকটেশনটা তৈরি হয়েছে। সেগুলোই মিশুককে বোঝাই।

প্র: ইলেকশনের পর থেকে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজনৈতিক গন্ধটা বড্ড বেশি করে আসছে কি?

উ: ইন্ডাস্ট্রি পলিটিসাইজ়ড বিগত সাত-আট বছর ধরেই হচ্ছে। তাই ইলেকশনের সঙ্গে এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির সম্পর্ক নেই। কে কোন দলে যাবেন, সেটা যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত বিষয়।

প্র: সেটা কি আল্টিমেটলি কাজে প্রভাব ফেলবে না?

উ: আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে আগে কেউ রাজনীতির দিকে ঝোঁকেনি, এমন তো নয়! হ্যাঁ, এখন ব্যাপারটা অফিশিয়ালি হচ্ছে। তবে একজন সিনিয়র হিসেবে এটুকু বলতে পারি, ইন্ডাস্ট্রিকে রাজনীতিমুক্ত রাখা হোক। আর রাজনৈতিক রঙের কারণে একজন অন্য জনের সঙ্গে কাজ করবে না, সেটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হয়ই না, যদি না সেখানে ব্যক্তিগত সমস্যা থাকে। রাজ্য বা কেন্দ্রে যে পার্টিই থাকুক, তাদের সাহায্য আমাদের আজীবন দরকার হয়েছে, হবেও। সেই প্ল্যাটফর্মটা থাকা দরকার, যেখান থেকে আমরা তাদের কাছে গিয়ে সেই প্রয়োজনীয়তার কথাটুকু বলতে পারি।

প্র: এত বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটানোর পরে আজও আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্ব পায় ‘রেসপেক্ট’ শব্দটি। ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়াটা কি আপনার সম্মানে আঘাত করেছে?

উ: দেখুন, আজ পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দল আমাকে অসম্মান করেনি। সেটা আমি স্টার প্রসেনজিৎ বলে নয়, মানুষ প্রসেনজিৎকে ওরা রেসপেক্ট করে। আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কিছু বুঝেছেন বা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, যে কারণে এই সিদ্ধান্ত। মাত্র ছ’মাস আগেই আমি বলেছিলাম, এ বার ফেস্টিভ্যালের ২৫ বছর বলে গৌতমদা (ঘোষ), বাবুদারা (সন্দীপ রায়) সামলাক। আমি পাশে থেকে পুরো কাজটা করে দেব। যে লোকটা এটা বলল, তাকে সরানোর আগে কেউ একবার জিজ্ঞেসও করল না, তোমার কি কোনও অসুবিধে হচ্ছে? বা সময় নেই? এটা আমার কাছে কষ্টের। আমার একমাত্র অপরাধ, আমি ইন্ডাস্ট্রির জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে গিয়েছি। তবে দুঃখ পুষে রাখার মানুষ আমি নই।

প্র: ঘটনাটির পরে ফোন এসেছিল?

উ: সিএম-এর অফিস থেকে ফোন এসেছিল, একটি কমিটি তৈরি হবে, তাতে থাকার জন্য। কিন্তু সেখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তবে সিএম-এর ফোন আসেনি, উনি হয়তো ব্যস্ত ছিলেন।

প্র: টিভির পর্দায় সুগত বসু ‘গুমনামী’কে এবং আপনাকে প্রবল ভাবে আক্রমণ করেছেন। বলেছেন, আপনি নেতাজি সম্পর্কে জানেন না। তার উত্তরে কী বলবেন?

উ: অভিনেতারা তো এই ধরনের কথা শোনার জন্য জন্মেছেন। তাঁরা সম্পূর্ণ হন না, যদি না লাঞ্ছনা সহ্য করেন। এবং তা সহ্য করার ক্ষমতা ঈশ্বর আমাদের দিয়েছেন। উনি একটা ক্যামেরা ও প্ল্যাটফর্ম পেয়ে যা যা বক্তব্য ছিল, বলেছেন। আমি তো টিভিতেও রিঅ্যাক্ট করিনি। কারণ উনি বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ। আমি ওঁকে সম্মানটা দিয়েছি। অভিনেতার সবচেয়ে বড় শিক্ষাই হল: ‘শালা’ না শুনলে ‘গুরু’ শুনতে ভাল লাগবে না।

প্র: কিছু দিন আগের ঘটনা। আপনি সাধারণত ইন্ডাস্ট্রির সবার জন্মদিনে উইশ করেন। কিন্তু শ্রীকান্ত মোহতার জন্মদিনে আপনার তরফ থেকে শুভেচ্ছা বার্তা যায়নি...

উ: এটা সত্যিই মিস করে গিয়েছি। ওর বার্থডেটা আমার সেভ করা ছিল না। কেউ বিশ্বাস করবে কি না জানি না, আমি কোনও প্রোডিউসারকেই উইশ করি না। ছোটদের করি। শ্রীকান্তের ফিরে আসাটা একটা সিস্টেম, সেখানে আমার কিছু বলার নেই। আমার চিন্তা ওর শরীর নিয়ে।

প্র: ইডির জেরা কি প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সাদা কলারে দাগ?

উ: না, আমি ব্যাপারটা এ ভাবে দেখি না। এ রকম চিঠি যখন পাঠানো হয়, তার একটা সিস্টেম আছে। তবে ডকুমেন্ট দেখে ওরা সন্তুষ্ট।

প্র: ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন, এই জেরার আসল কারণ প্রকারান্তরে চাপ দিয়ে আপনাকে বিজেপিতে নিয়ে আসা।

উ: একেবারেই ভুল ভাবনা। ইটস পার্ট অফ দেয়ার ডিউটি। ইনকাম ট্যাক্স থেকে কি ডাকা হয় না? এ দেশের নাগরিক হয়ে আমি তো কোনও প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করতে পারি না। আর আমাদের দেশে যে সব সিস্টেম রয়েছে, তাদের যদি কোনও জিজ্ঞাস্য থাকে, আমাদের সেটা রেসপেক্ট করা উচিত।

প্র: আর্টিস্ট ফোরাম নিয়েও তো অনেকের অভিযোগ যে, ফোরাম টাকাপয়সা সংক্রান্ত সমস্যা মেটাতে পারছে না?

উ: কোথায় মেটাতে পারেনি? চিরঞ্জিৎদা, অনির্বাণ, সোহিনীকে জিজ্ঞেস করুন, ওরা টাকা পেয়েছে কি না। যাঁরা দীর্ঘ ২০-২৫ বছর এই জগতে আছেন, তাঁরা জানেন টেলিভিশনে টাকা পেমেন্ট না করার সমস্যাটা অনেক দিনের। তবে যখনই টাকাপয়সা নিয়ে সমস্যা হয়, আমরা একটু চাপ দিই, আবার তা এগোতে থাকে। তবে যদি কোনও শিল্পী মনে করেন, আর্টিস্ট ফোরাম বিগত ২০-২৫ বছর ধরে আর্টিস্টদের জন্য কাজ করেনি, তারা যেন ফোরামে এসে মেম্বারশিপের কার্ডটা জমা দিয়ে যায়। দেখুক, তার পরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজটা করে কী করে! এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement