অভিনয়ের নেশা ছিল আশৈশব। পরবর্তী জীবনে তাঁর পরিচয় হয়েছিল ‘হাস্যকৌতুক অভিনেতা’ হিসাবে। কিন্তু সে নিয়ে কোনও খেদ ছিল না লক্ষ্মীকান্ত বের্ডের।
জন্ম ১৯৫৪ সালের ২৬ অক্টোবর, তৎকালীন বম্বেতে। ছোটবেলায় মহল্লার গণেশপুজোর উৎসবে অভিনয় করতেন তিনি। পরে মুম্বই মরাঠি সাহিত্য সংঘে তাঁর অভিনয়ের হাতেখড়ি। স্কুল-কলেজজীবনে প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে লক্ষ্মীকান্তের অভিনয়।
আটের দশকের গোড়ায় প্রথম বড় ভূমিকায় সুযোগ পান পুরষোত্তম বের্ডের নাটক ‘তুর তুর’-এ। মরাঠি নাট্যজগতে লক্ষ্মীকান্ত পরিচিত হন হাস্যকৌতুক অভিনেতা হিসেবে।
থিয়েটারে অভিনয় করতে করতেই সুযোগ বড় পর্দায়। প্রথম ছবি মাতৃভাষা মরাঠিতে, ‘লেক চালালি সসরলা’। ১৯৮৫ থেকে ২০০০ অবধি তিনি দাপটের সঙ্গে শাসন করেছেন মরাঠি ছবির ইন্ডাস্ট্রিকে।
মরাঠি ছবির কৌতুক অভিনেতা হিসেবে তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। এক বার চেষ্টা করেছিলেন অন্য ভূমিকায় অভিনয় করবেন। করেওছিলেন, ‘এক হোতা বিদূষক’ ছবিতে। কিন্তু সেই ছবি চরম ব্যর্থ হওয়ায় হতাশ লক্ষ্মীকান্ত আবার ফিরে আসেন কৌতুকেই।
পর্দায় লক্ষ্মীর জুটি ছিলেন অশোক শ্রফ। দু’জনের জুড়িতে রয়েছে একাধিক বক্স অফিস সফল ছবি। তাঁদের একসঙ্গে বলা হত ‘অশোক-লক্ষ্য’ জুড়ি।
ব্যক্তিগত জীবনেও তাঁরা ছিলেন জুড়ি। দু’জনের গভীর বন্ধুত্ব বজায় ছিল লক্ষ্মীকান্তের অকালমৃত্যু অবধি।
মরাঠি ছবির পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন লক্ষ্মীকান্ত। প্রথম সুযোগ পান ১৯৮৯ সালে, সূরজ বরজাতিয়ার ব্লকবাস্টার ছবি ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’-তে।
এরপর ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’, ‘আরজু’, ‘সাজন’, ‘বেটা’, ‘আনাড়ি’, একের পর এক বক্স অফিস সফল ছবির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে লক্ষ্মীকান্তের নাম। তাঁকে বলা হত ‘কমেডি কিং’ বা ‘কমেডি সুপারস্টার’।
বেশির ভাগ ছবিতে তাঁর নায়িকা হতেন প্রিয়া অরুণ। তাঁকেই ১৯৯৮ সালে বিয়ে করেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। তবে এটা তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে। তাঁর প্রথম স্ত্রী রুহি বের্ডে। রুহিকে বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৫ সালে। তেরো বছরের দাম্পত্য ভেঙে যায় ১৯৯৮ সালে। লক্ষ্মীকান্ত এতটাই ভালবাসতেন অভিনয়, নিজের ছেলের নাম রেখেছিলেন অভিনয়। মেয়ের নাম ছিল স্বানন্দী।
দর্শকদের হাসাতে হাসাতেই বিদায় জীবনের মঞ্চ থেকে। ২০০৪ সালে কিডনির অসুখে মৃত্যু হয় লক্ষ্মীকান্ত বের্ডের। ভেঙে যায় অশোক-লক্ষ্য জুটি।
শেষ জীবনে শুরু করেছিলেন নিজের প্রোডাকশন হাউজ। ছেলের নামে হাউজের নামকরণ করেছিলেন, ‘অভিনয় আর্টস’। অনেকেই জানেন না, দাপুটে অভিনেতার পাশাপাশি লক্ষ্মীকান্ত ছিলেন একজন দক্ষ ভেন্ট্রিলোকুইস্ট ও গিটারবাদক।