কালের নিয়মে লতাজি প্রয়াত হলেন ঠিকই। কিন্তু লতাজির মতো শিল্পীর তো প্রয়াণ হয় না। তিনি থেকে যাবেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে।
আমার তখন ২৭-২৮ বছর বয়স। ‘বৈষ্ণব জন তো’ ভজনটি রেকর্ড করা হবে। সরকারি অনুষ্ঠানের জন্য। কে শেখাবেন গানটি? লতা মঙ্গেশকর। ফোনে সেই গানটি আমাকে তুলিয়ে দেন লতাদিদি। সেই স্মৃতি আমি কখনওই ভুলতে পারব না। ওঁর কাছে অন্তত একটা তো শিখেছি!
এর পর লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে আমার প্রথম মুখোমুখি আলাপ নব্বইয়ের দশকে। সেই থেকে যোগাযোগ ছিল। তারও পর ২০১৪ সালে গোয়াতে ওঁর বাবার নামে একটি অনুষ্ঠান হত। আমার গান শুনতে উনি হাজির হন গোয়া। পুরো অনুষ্ঠান উনি সামনে থেকে বসে শুনেছিলেন। পরে অনেক কথা হয় ওঁর সঙ্গে। উনি আমার কাছে এসে বলেন ‘‘আল্লাহতালা নে ক্যায়া গলা দিয়া হ্যায়!’’ আমি একটু হেসে বললাম, ‘‘দিদি তুমি এই কথা বলছ! সবাই জানে তোমাকে ঈশ্বর কত সুরেলা কণ্ঠ দিয়েছেন। আমি এ সবের যোগ্য নই।’’
আমার গুরু দাদু উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ সাহিবের সঙ্গে ওঁর বাবার ভাল সম্পর্ক ছিল। উনি লতাদিদির গান খুব পছন্দ করতেন। লতাদিদিও বলেছেন, দাদুর তানকর্তব অনেক সময় উনি অনুসরণ করতেন। হিন্দি গানের ক্ষেত্রেও উনি সে সব কাজে লাগাতেন। এক বার লতাদিদি আমার অনুষ্ঠানের পর বলেছিলেন, ‘‘আমি তো শাস্ত্রীয় সঙ্গীতই করতে চেয়েছিলাম। কী ভাবে যে ফিল্মের চক্করে পড়ে গেলাম!।’’ আমার মামা উস্তাদ গুলাম মোস্তাফা খাঁ-সাহিবের সঙ্গেও ওঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। গান নিয়ে ওঁদের মধ্যে বহু কথাবার্তা হত।
কালের নিয়মে লতাজি প্রয়াত হলেন ঠিকই। কিন্তু লতাজির মতো শিল্পীর তো প্রয়াণ হয় না। তিনি থেকে যাবেন তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে।