হয় তারকা-সন্তান, নয় তো বড় পদবি কিংবা অভিনয় দক্ষতা এবং ব্যক্তিত্ব। বলিউডে প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে এগুলো অন্তত কয়েকটি চাই-ই। কিন্তু এমন এক জন তারকা রয়েছেন যাঁর কাছে এগুলোর বেশির ভাগ থাকা সত্ত্বেও সে ভাবে পর্দায় দেখা যায় না তাঁকে।
তিনি কুণাল কপূর। বচ্চন পরিবারের জামাই। পর্দায় সে ভাবে সফল না হলেও ব্যবসায় তিনি চূড়ান্ত সফল। এটাও অনেকের অজানা যে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর ভাই অজিতাভের শীতল সম্পর্ক অনেকটাই উষ্ণ হয়েছে কুণালের জন্যই।
অজিতাভের মেয়ে নয়নাকে বিয়ে করেছেন কুণাল। কুণালের ডাকেই ভাইঝির বিয়েতে সপরিবার হাজির ছিলেন অমিতাভ বচ্চন। তার পর থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে অনেকটাই।
১৯৭৭ সালে মুম্বইয়ে জন্ম কুণালের। পড়াশোনা শেষ করার পর পেশা হিসাবে কী নেবেন তা স্থির করতে পারছিলেন না। শুধু বাবার একটি পরামর্শই তাঁর মনে গেঁথে গিয়েছিল। উপার্জন কম হলেও যে কাজ করতে ভাল লাগবে তাকেই পেশা হিসাবে বেছে নিতে হবে।
কখনও বাবার নির্মাণ ব্যবসায় হাত লাগিয়েছেন তো কখনও অন্য কোনও উপার্জনের রাস্তায় পা বাড়িয়েছেন। কিন্তু এগুলোর কোনওটাই তিনি উপভোগ করছিলেন না।
কুণালের এক বন্ধু বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করতেন। এক দিন সেই বন্ধুর থেকে ফোন পান। ফোন করার কারণ ছিল কুণালের লম্বা চুল রয়েছে কি না সেটা জানা।
আসলে বন্ধুর ওই বিজ্ঞাপনী সংস্থা এমন একটি ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করছিল যার জন্য লম্বা চুলের মডেলের প্রয়োজন ছিল।
কুণাল অভিনয়ের কিছুই জানতেন না। তবে বন্ধুর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে শ্যুট করেন। শ্যুটিংয়ের সময় পরিচালক তাঁর অভিনয় দেখে পরামর্শ দেন ছবিতে চেষ্টা করার।
প্রথমে বিষয়টি একেবারেই গুরুত্বের সঙ্গে নেননি কুণাল। কিন্তু ওই পরিচালকের কথা তাঁর মাথায় ঢুকে যায়। কয়েক দিন এ নিয়ে ভাবার পর সিদ্ধান্ত নেন বড় পর্দায় আসার।
অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ীর সঙ্গে পরিচয় ছিল কুণালের। মনোজ ভাল অভিনেতাও। তাঁর থেকে অভিনয় শিখতে চান তিনি। কুণালকে তাঁর অভিনয় গুরুর ঠিকানা দেন মনোজ। দিল্লিতে গিয়ে ওই গুরুর কাছেই অভিনয় শেখেন কুণাল।
তার পর নাসিরুদ্দিন শাহের নাটকের দলে যোগ দেন। তার পর বেশ কিছু ছবির সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেন। এই প্রথম কোনও কাজ ভালবেসে করছিলেন কুণাল। তিনি যেন জীবনের লক্ষ্য পেয়ে গিয়েছিলেন।
তাঁর প্রথম বলিউড ছবি ছিল ২০০৪ সালের ‘মিনাক্ষী: এ টেল অব থ্রি সিটিস’। তব্বুর বিপরীতে ছিলেন তিনি। ছবিটা সফল না হলেও কুণালের অভিনয় চোখে পড়েছিল। তাঁর দ্বিতীয় ছবি ২০০৬ সালে আমির খানের সঙ্গে ‘রং দে বসন্তী’।
এর পর যশরাজ প্রোডাকশানের ৩টি ছবিতে সই করেন তিনি। ৩ ছবিতেই অভিনয়ে নজর কাড়েন তিনি। এর পর ২ বছরের জন্য কোনও ছবি করেননি কুণাল। ২০১০ সালে জাতীয় পুরস্কারজয়ী ‘লমহা’-তে দেখা যায় তাঁকে।
‘গোল্ড’, ‘ডিয়ার জিন্দেগি’, ‘ওয়েলকম টু সজ্জনপুর’, ‘আজা নাচলে’-সহ একাধিক ছবিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু অভিনয় করতে ভাল লাগলেও কুণাল বুঝে গিয়েছিলেন শুধু অভিনয় দিয়ে তিনি সেই সাফল্য পাবেন না।
বলিউড মূলত তারকা নির্ভর। কোনও ছবিতে তারকা থাকলেই সে ছবির সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই অভিনয়ের পাশাপাশি নিজের একটি ব্যবসাও শুরু করেন।
এক বন্ধুর সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘কিটো’ নামে ক্রাউডফান্ডিং সংস্থা গড়ে তোলেন তিনি। মূলত প্রয়োজনে মানুষকে টাকা ধার দেওয়াই ছিল এই সংস্থার কাজ। ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা এ ভাবে তুলেছিলেন তাঁরা।
এ ছাড়াও কুণাল এক জন প্রশিক্ষিত বিমানচালক এবং র্যালি গাড়ির চালকও। অভিনয় এবং নিজের ব্যবসা ছাড়াও এ সব নানা বিষয় নিয়ে ব্যস্ততা তাঁর সর্ব ক্ষণের সঙ্গী।