থিয়েটার মঞ্চে শিখেছিলেন অভিনয়ের অ-আ-ক-খ। পরে বলিউডের মূলস্রোতে সামিল হয়ে প্রথম সারিতে আসতে পারেননি। কিন্তু কেতাদুরস্ত অভিনেতা হিসেবে তাঁর সমকক্ষ কার্যত কেউ নেই। তিনি বচ্চন পরিবারের জামাই, কুণাল কপূর।
কুণালের বাবা রাজকিশোর নির্মাণ-ব্যবসায়ী। তাঁর মা কানন ঘর সংসার সামলানোর পাশাপাশি গানও করেন। আদতে পঞ্জাবের অমৃতসর এলাকার বাসিন্দা এই পরিবার পরে মুম্বইয়ে চলে যান। এই বাণিজ্যনগরীতেই জন্ম কুণালের। ১৯৭৭-র ১৮ অক্টোবর।
দুই দিদি গীতা ও রেশমার সঙ্গে মুম্বই শহরেই বেড়ে ওঠা কুণালের। ব্যারি জনের কাছে অভিনয়ের প্রশিক্ষণের পরে কুণাল নাসিরুদ্দিন শাহের থিয়েটার গ্রুপে অভিনয় শুরু করেন।
বলিউডে কুণালের আত্মপ্রকাশ সহকারী পরিচালক হিসেবে। ২০০১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অক্স’-এর সহকারী পরিচালক ছিলেন তিনি। এই ছবিতে দু’টি প্রধান চরিত্রে ছিলেন অমিতাভ বচ্চন এবং মনোজ বাজপেয়ী।
অভিনেতা হিসেবে কুণালের প্রথম ছবি ‘মীনাক্ষি: এ টেল অব থ্রি সিটিজ’। চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেন পরিচালিত এই ছবিতে কুণালের নায়িকা ছিলেন তব্বু। এই ছবিতে প্রথমে অভিনয় করার কথা ছিল মাধুরী দীক্ষিতের। তিনি সরে দাঁড়ানোয় সুযোগ যায় তব্বুর কাছে।
২০০৬ সালে মুক্তি পায় কুণালের কেরিয়ারের অন্যতম সফল ছবি ‘রং দে বসন্তী’। আমির খান, ওয়াহিদা রহমান, মাধবন, সোহা আলি খানের মতো তারকাখচিত এই ছবিতেও নজর কাড়েন কুণাল। পুরস্কৃতও হন সেরা-সহ অভিনেতা বিভাগে।
এরপর যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে পর পর তিনটি বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তিনটি ছবি হল ‘লগা চুনরি মে দাগ’, ‘আ জা নাচলে’ এবং ‘বচনা অ্যায় হাসিনো’।
একটানা কয়েক বছর অভিনয়ের পরে বিরতি নেন কুণাল। ফিরে আসেন রাহুল ঢোলাকিয়ার ছবি ‘লমহা’-য়। এই ছবিটি বক্স অফিসে সফল না হলেও রাহুলের অভিনয় প্রশংসিত হয় সমালোচকদের কলমে।
কুণালের ফিল্মোগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য বাকি ছবি হল ‘ওয়েলকাম টু সজ্জনপুর’, ‘ডন টু’, ‘লভ শব তে চিকেন খুরানা’, ‘ডিয়ার জিন্দগী’ এবং ‘গোল্ড’।
ছবির পাশাপাশি বিজ্ঞাপনেও পরিচিত মুখ কুণাল। তবে অভিনয় ছাড়া আরও অনেক দিকে কুণালের শখ বিস্তৃত। তিনি পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন। সেইসঙ্গে তিনি একজন প্রশিক্ষিত পাইলট এবং র্যালি ড্রাইভার।
২০১৪ সালে তিনি ফর্মুলা থ্রি প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। গতিতে ডানা মেলার সঙ্গে তিনি উল্লেখযোগ্য নাম সমাজসেবার ক্ষেত্রেও। এশিয়ার সবথেকে বড় ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের তিনি সহ প্রতিষ্ঠাতা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তহবিল তৈরি করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে তাঁর সংস্থা।
২০১৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কুণাল বিয়ে করেন নয়না বচ্চনকে। কবি ও প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার নয়নার বাবা অজিতাভ ভাই হন অমিতাভের। কুণাল-নয়নার আলাপ করিয়ে দেন অমিতাভের মেয়ে শ্বেতা।
তার আগে ‘লগা চুনরি মেঁ দাগ’ ছবিতে একসঙ্গে কাজের সূত্রে অভিষেক এবং কুণাল ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তখনও অবশ্য দু’জনের কেউই ভাবতে পারেননি একদিন তাঁরা শ্যালক-ভগ্নীপতি হবেন।
প্রথম আলাপেই সুদর্শন কুণালের প্রেমে পড়েন তিনি। পরে এক সাক্ষাৎকারে জানান নয়না। ক্রমে বন্ধুত্ব গভীর হতেই কুণালের গুণমুগ্ধও হয়ে পড়েন নয়না।
২০১৪ সালে বাগদান। পরের বছর সেশেলস দ্বীপে ঘরোয়া পার্টিতে বিয়ে করেন কুণাল-নয়না। এখনও তাঁরা একে অন্যের প্রেমে বিভোর। অকপটে স্বীকার করেন দু’জনেই। ভালবাসা, দু’জনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং দাম্পত্যের দৈনন্দিন থেকে আনন্দ খুঁজে নেওয়া। এই সমীকরণকেই সফল দাম্পত্যের অঙ্গ বলে মনে করেন কপূর দম্পতি।