বিবৃতি প্রকাশ করেছে বসুশ্রী-র কর্তৃপক্ষ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সোমবার আনন্দবাজার অনলাইন জানিয়েছিল, দক্ষিণ কলকাতার ‘বসুশ্রী’ প্রেক্ষাগৃহ হস্তান্তরের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পাঁচ দিন পর শুক্রবার কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, প্রেক্ষাগৃহটি তাঁরা বিক্রি করছেন না। সেই মর্মে বসুশ্রীর কর্মকর্তাদের তরফে প্রকাশিত একটি বিবৃতি আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসে পৌঁছেছে।
শুক্রবার ‘বসু্শ্রী’র তরফে যে বিবৃতি জারি করা হয়েছে সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘গত কয়েক দিন বসুশ্রী সিনেমা হস্তান্তরের যে গুঞ্জন ছড়িয়েছে, তা দেখে আমরা জানাচ্ছি, কর্তৃপক্ষ সিনেমাহল বিক্রির জন্য কোনও সিদ্ধান্ত নেননি।’’ একই সঙ্গে ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ এই প্রেক্ষাগৃহ সম্পর্কিত কোনও খবরের সত্যতা প্রসঙ্গে যে কোনও রকম আলোচনাতেও প্রস্তুত। ওই বিবৃতি স্বাক্ষর করেছেন ‘বসুশ্রী’র ছ’জন অংশীদার— পার্থ বসু, নুপূর মিত্র, দেবজীবন বসু, অলোকুমার বসু, কল্যাণকুমার বসু এবং শৌর্য বসু।
সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ এবং ঋত্বিক ঘটকের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘অযান্ত্রিক’-এর প্রিমিয়ার হয় ‘বসুশ্রী’তে। আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে প্রেক্ষাগৃহের হস্তান্তর ছাড়াও ইতিহাস বিজড়িত তিনটি প্রজেক্টর বিক্রির উদ্যোগের প্রসঙ্গও লেখা হয়। বসু পরিবারের তরফে সৌরভ বসু সেই খবরে সিলমোহর দেন। বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এ রকম একটি প্রেক্ষাগৃহের বিক্রির খবর শহরের সিনেমাপ্রেমী দর্শককে নাড়া দেয়।
এখন প্রশ্ন, ‘বসুশ্রী’ কি বিক্রি করা হচ্ছে? এই প্রসঙ্গে আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে দেবজীবন বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমার দাদা মন্টু বসুর হাতে বসুশ্রীর যে ঐতিহ্য তৈরি হয়েছে, সেটা আমরা কেন নষ্ট করব! আমাদের এখনও এ রকম কোনও পরিকল্পনা নেই। বসুশ্রী অনুরাগীদের জন্য তাই আমরা একটা বিবৃতিও প্রকাশ করেছি।’’ তা হলে তিনটি প্রজেক্টর বিক্রির প্রসঙ্গ? দেবজীবনের যুক্তি, ‘‘প্রজেক্টরগুলোর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আমরা জানি। যদি বিক্রিই করা হয়, তা হলে আগে তো তার মূল্যায়ন করা প্রয়োজন!’’
বসুশ্রীর পরিচালন কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল, টিকিট বিক্রির হিসাবে গরমিল করা হয়। দেবজীবনের দাবি, বর্তমানে ছবি নেওয়া থেকে শুরু করে টিকিট বিক্রি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান অনলাইনে হয়। তাই সেখানে কোনও কারচুপি থাকতে পারে না। দেবজীবনের কথায়, ‘‘সব শ্রেণির দর্শকের কথা চিন্তা করে আমাদের টিকিটের দাম এখনও অনেকটাই কম এবং দর্শক ছবি দেখতে আসছেনও।’’
বসুশ্রী যে ‘রুগ্ন’, তা মানতে নারাজ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের মতে, ব্যবসায় ওঠানামা থাকে। কিন্তু, বসুশ্রী লাভজনক অবস্থার মধ্যে দিয়েই অগ্রসর হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের। বরং দেবজীবন দাবি করলেন, আগামী দিনে বসুশ্রীর পরিকাঠামো এবং পরিষেবা আরও উন্নত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘অতিমারির আগে আমরা ব্যালকনির আসনের সংস্কারের কাজ শেষ করেছিলাম। এই বছরের শুরুতেই আমরা এসির কাজ শেষ করেছি। ধীরে ধীরে আরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’
শুক্রবার মুম্বইয়ে ইটালিয়ান ছবি ‘সিনেমা পারাদিসো’র পরিচালক জুসেপ তোরনাতোরের হাত থেকে বিশেষ পুরস্কার গ্রহণ করছেন বসুশ্রীর বর্ষীয়ান প্রজেক্টর অপারেটর সুকুমার ঘোষ। একই দিনে বসুশ্রীর তরফে বিবৃতি প্রকাশের ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে টলিপাড়ায় গুঞ্জন এখনও অব্যাহত। সামনে পুজোর ছবি ঘিরে ব্যবসার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজ্যের সিঙ্গল স্ক্রিনগুলি। ইন্ডাস্ট্রির একাংশের মতে, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই বিবৃতি জারি করা হয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত ঐতিহাসিক এই প্রেক্ষাগৃহের ভাগ্য কোন পথে চালিত হবে, সে দিকে নজর থাকবে।