সারা বছর ধরে মঞ্চস্থ হবে নানা ক্লাসিক নাটক। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি দেখানো হবে তপন থিয়েটারে। ফাইল চিত্র।
আসছে শীত। আর শীত মানেই জমজমাট শহর কলকাতা। থিয়েটারই বা পিছিয়ে থাকবে কেন? এ বার শহরের এক নাট্যদলের এক অভিনব প্রচেষ্টায় ফিরে আসতে চলেছে সেই চির চেনা নাটকের আমেজ।
যে বাংলা সাধারণ রঙ্গালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তার ১২৫ বছরের মাথায়, অর্থাৎ ১৯৯৭ সালে, তারই সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপন আয়োজক সংস্থা বঙ্গ নাট্য সংহতি এ বার সেই সাধারণ রঙ্গালয়ের সার্ধশতবর্ষ পালনে ব্রতী হয়েছে আগামী এক বছর, অর্থাৎ পুরো ২০২৩ ধরে। যার শুরু এ বছরেরই ডিসেম্বর মাস থেকেই। তপন থিয়েটার মঞ্চে ৭ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ৬ ডিসেম্বর ২০২৩ — এই তেরো মাসব্যাপী উৎসবে বাংলার কিছু ক্লাসিক নাটক মঞ্চস্থ হবে বিভিন্ন পরিচালকের হাত ধরে।
বঙ্গ নাট্য সংহতি মূলত একটি কল্যাণমূলক সংস্থা। অসুস্থ, দুঃস্থ নাট্যকর্মী ও কলাকুশলীর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রদানই এই সংস্থার মূল লক্ষ্য। সুতরাং তারা কেন হঠাৎ করে বাংলা সাধারণ রঙ্গলয় প্রতিষ্ঠার সার্ধশতবর্ষে মেতে উঠল সে প্রশ্ন এসেই গেল। এ বিষয়ে অন্য থিয়েটারের পুরোধা বিভাস চক্রবর্তী বললেন, ‘‘প্রথমত, কোনও সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই বিষয়টিতে কোনও আগ্রহ প্রকাশ করেনি। দ্বিতীয়ত, আমাদের মনে হয়েছে যে, আমাদের পূর্বজরা, যাঁরা বাংলা নাটকের শুরু থেকে এই শিল্পের চর্চা, প্রচার ও প্রসারের কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথ বেঁধে দিয়েছিলেন, তাঁদের স্মরণ করা পরবর্তী সময়ের নাট্যকর্মীদের অবশ্যকর্তব্য। এবং ত়ৃতীয়ত, এই উপলক্ষে আমরা বাস্তব পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করব সেই সময়ের নাটকের রচয়িতা এবং সেটিকে নির্মাণকর্তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে। সেই কারণেই এই সময়ের ১৩ জন পরিচালক সাধারণ রঙ্গালয়ে অভিনীত ১৩টি নাটককে নতুন ভাবে মঞ্চায়ন করবেন আমাদের এই বর্ষব্যাপী অনুষ্ঠানে।’’ বছর ধরে নাটক ছাড়াও থাকবে নানা আলোচনা সভা, পাঠাভিনয়, নাচ-গানের অনুষ্ঠান এবং প্রদর্শনী।
এই উৎসবের একটি চমক হল বাংলাদেশ থেকে ঢাকার বাংলা থিয়েটার নামের নাট্যদল প্রথম অভিনয়ের দিন, অর্থাৎ এ বছরের ৭ ডিসেম্বর, তপন থিয়েটারে মঞ্চস্থ করতে চলেছে দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি, বাংলাদেশের বিশিষ্ট পরিচালক মামুনুর রশীদের পরিচালনায়। মনে করা যেতেই পারে যে, এই নাটকটি দিয়েই ১৮৭২ সালের ৭ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলার সাধারণ রঙ্গালয়ের।
কী কী নাটক থাকছে বর্ষব্যাপী এই অনুষ্ঠানে? থাকছে দীনবন্ধু মিত্র থেকে রবীন্দ্রনাথের নাটক। এবং উৎপল দত্ত থেকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘নীলদর্পণ’ তো আছেই। এ ছাড়া থাকছে ‘নুরজাহান’, ‘অপূর্ব সতী’, ‘ব্যাপিকা বিদায়’, ‘রজনীগন্ধা’, মানময়ী গার্লস স্কুল’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’, ‘একেই কি বলে সভ্যতা?’, ‘অলীকবাবু’, ‘কারাগার’, ‘আবুহোসেন’, ‘নাম জীবন’, ‘চিরকুমার সভা’র মতো সব নাটক। যা মঞ্চায়িত হবে অসিত বসু, বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, সীমা মুখোপাধ্যায়, কিশোর সেনগুপ্ত, দেবশঙ্কর হালদার, তুলিকা দাসের মতো পরিচালকদের হাত ধরে। সব শেষে, অর্থাৎ ২০২৩-র ডিসেম্বরে, উৎসবের সমাপ্তি পর্বে, থাকছে আরও একগুচ্ছ নাটক। অনির্বাণ ভট্টাচার্য পরিচালিত ‘আলিবাবা’, চন্দন সেন (ছোট) পরিচালিত ‘মানুষের অধিকারে’, অরুণ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, মনোজ মিত্র পরিচালিত ‘দম্পতি’ এবং দেবাশিস মজুমদার পরিচালিত ‘গৃহপ্রবেশ’।
এ কথা তো অনস্বীকার্য যে কলকাতা নাটকের শহর। সুতরাং, এ রকম অন্য স্বাদের একটি উৎসব যে নাট্যপ্রেমীদের মহানন্দের যোগান দেবে সে আশা করাই যায়।