গ্যাংস্টারদের সঙ্গে বলিউডের যোগাযোগ বারবারই সামনে উঠে এসেছে। তবে আবু সালেমের সঙ্গে বলি অভিনেত্রী মণিকা বেদীর লভ স্টোরিটা ছিল একটু অন্য রকম। কোথাও না কোথাও নিখাদ ভালবাসার জন্ম নিয়েছিল তাঁদের মধ্যে। সে কারণে সব জেনেও নাকি সম্পর্ক থেকে বেরোতে পারেননি মণিকা। বিনিময়ে বারবারই হার মেনেছেন আবুর কাছে।
মুম্বইয়ের ডন আবু সালেমের সঙ্গে একসময় যোগাযোগ ছিল অভিনেত্রী মণিকা বেদীর। পরবর্তী কালে জেলে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল তাঁকে। রুপোলি পর্দায় এক সময় সলমন খান, সঞ্জয় দত্ত, সুনীল শেট্টিদের মতো সুপারস্টারদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তিনি।
১৯৯৮ সালের শেষের দিকে দুবাইয়ে একটি শো-তে আবু সালেমের সঙ্গে পরিচয় হয় মণিকার। আবু নাকি তখন অন্য এক নামে নিজেকে ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন।
মুম্বইয়ে ফিরে আসার পরও তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ থেকে গিয়েছিল। প্রায়ই ফোনে কথা হত তাঁদের। এই ভাবেই ক্রমশ বন্ধুত্ব গাঢ় হয়ে ওঠে। প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর মনিকাকে ফোন করতেন আবু। মণিকাও সমস্ত কিছু তাঁর সঙ্গে শেয়ার করতে শুরু করেন।
টানা ন’মাস এ ভাবে চলতে চলতে কখন একে অপরকে ভালবেসে ফেলেছিল তাঁরা। মণিকা দুবাই উড়ে যান দেখা করতে। আর সেখানে গিয়েই জানতে পারেন, তাঁর প্রকৃত নাম আবু সালেম।
সে সময় আবু সালেম কে জানতেন না মণিকা। আবু তখনও মণিকার কাছে তাঁর প্রকৃত পরিচয় খোলসা করেননি বলেই জানান মণিকা। বরং নিজেকে এটা গাড়ি শোরুমের মালিক এবং শো অর্গানাইজার হিসাবেই পরিচয় দিয়েছিলেন।
আবুর ব্যবহার এতটাই মাটির মানুষের মতো ছিল, তিনি এতটাই লাভিং এবং কেয়ারিং ছিলেন যে মণিকা এতটুকু সন্দেহ করেননি, পরে নিজেই একটা সাক্ষাত্কারে জানান মণিকা।
মণিকার দাবি, তিনি পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলেন খুব ক্ষমতাশালী এক ব্যক্তি আবু। কিন্তু কেন তাঁর এত ক্ষমতা সে বিষয়ে বা নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনওকিছুই কখনও মণিকাকে জানাননি।
মণিকা যখন পুরো বিষয়টা জানতে পেরেছিলেন, তখন তাঁর আর কিছুই করার ছিল না। মণিকাকে নিয়ে ততদিনে আমেরিকায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন আবু। মণিকা সেখান থেকে পালিয়ে আসার অনেক চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন।
আবু সালেমের প্রচুর অর্থ ছিল, তাই অনেকেরই হয়তো ধারণা হয়েছিল, মণিকাকে রানির মতো যত্নে রাখতেন আবু। কিন্তু সে সব ধারণাই ভুল বলে দাবি করেছেন মণিকা। বরং আবু সালেমের জন্য তাঁকে রান্না করতে হত, ঘর পরিষ্কার করতে হত এমনকী আবু সালেমের জামা-কাপড়ও পরিষ্কার করতে হত তাঁকেই।
মুম্বইয়ে হামলা ঘটানোর পর শেষে পর্তুগালে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল আবু সালেম। তখনও তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন মণিকা বেদী। সেখানেই দুজন গ্রেফতার হন। বিচারের জন্য দু’জনকেই তড়িঘড়ি ভারতে ফিরিয়ে আনার দরকার হয়ে পড়েছিল সিবিআইয়ের।
২০০৫ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে গিয়ে আবু ও মণিকাকে মুম্বইয়ে ফিরিয়ে এনেছিলে। আবুর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির যে সব ধারায় (৩০২, ১২৩ এবং টাডা আইনের ৩২ নম্বর ধারা) অভিযোগ ছিল, তাতে ভারতীয় আইনে ওর সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার কথা মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু পর্তুগালে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ। শুধু তাই নয়, যাবজ্জীবনের মেয়াদও ভারতের মতো নয় পর্তুগালে।
দু’জনকেই ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য ’৬২ সালের ভারতীয় প্রত্যর্পণ আইনে রদবদল ঘটাতে হয়েছিল। সেই আইনে ৩৪ (গ) অনুচ্ছেদটি জুড়তে হয়েছিল। সেই আইন বদলে পর্তুগাল সরকারকে আশ্বস্ত করতে হয়েছিল ভারতে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আবুকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না।
তাই ওই ঘটনার পলাতক প্রধান অভিযুক্ত টাইগার মেননের ভাই ইয়াকুব মেননকে ২০১৫ সালে ফাঁসি দেওয়া হলেও আবুর বিষয়টি বহুদিন ঝুলে ছিল। ২০১৭ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তাঁর।
তবে মণিকার প্রতি আবুর ভালবাসা যে নিখাদ ছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই মণিকারও। পর্তুগালের জেলে থাকাকালীন আবু নিজেও বারবার মণিকাকে চিঠি লিখে সে কথা জানিয়েওছিলেন।