১৯৮৯-এর রোম্যান্টিক মিউজিক্যাল ফিল্ম ‘চাঁদনী’। যার প্রযোজনা এবং পরিচালনা দুটোই করেন যশ চোপড়া। বক্স অফিসে অপ্রত্যাশিত ফল করেছিল এই ফিল্ম। ৩১ বছর পর আজও একইভাবে এই ফিল্মের গানগুলো রয়ে গিয়েছে দর্শকদের মনে। কিন্তু এই ফিল্ম বানাতে গিয়ে পরিচালককে যে কত বাধার মুখে পড়তে হয়েছে তা অনেকেই জানেন না।
এমন একটা সময়ে যশ চোপড়া এই ফিল্মে হাত দিয়েছিলেন, যখন বক্স অফিসে পর পর মুখ থুবড়ে পড়তে শুরু করে তাঁর প্রতিটা ফিল্ম।
যশ পরিচিত ছিল তাঁর অ্যাকশন ফিল্মের জন্য। আর এই ফিল্মটা ছিল একেবারে বিপরীত ঘরানার। অ্যাকশন ফিল্ম করে করে ক্লান্ত যশ চোপড়ার কাছে তখন এর অন্য গুরুত্ব ছিল।
পাশাপাশি দর্শকরা কতটা এই ফিল্মকে গ্রহণ করবেন, সেটা নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন তিনি। অনেকের মতে, যশ চোপড়ার কাছে এই ফিল্মটা ছিল ‘সুইসাইড অ্যাটেম্পট’। ‘চাঁদনী’ ফিল্মটা সম্পূর্ণ নায়িকা নির্ভর। সে সময়ে যা একটু অদ্ভুতই ছিল।
এই ফিল্মের মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন শ্রীদেবী। তাঁর সঙ্গে এই ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন বিনোদ খন্না, ঋষি কপূর। ছিলেন ওয়াহিদা রহমান, জুহি চাওলা।
যশ চোপড়া যখন প্রথম এই ফিল্ম করার কথা ভেবেছিলেন, ‘চাঁদনী’র চরিত্রে রেখাকে কাস্ট করার কথা প্রথম মাথায় এসেছিল তাঁর। কিন্তু রেখা অন্য ফিল্ম নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, যশের প্রস্তাবে রাজি হতে পারেননি।
জানা যায়, রেখার বদলে কাকে এই ভূমিকায় মানাবে, তা নাকি কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছিলেন না যশ চোপড়া। তখন রেখাই তাঁর কাছে শ্রীদেবীর নাম প্রস্তাব করেন।
‘চাঁদনী’র দুই হিরো, ঋষি কপূর এবং বিনোদ খন্নার নামও একই ভাবে প্রথমে ভাবেননি যশ চোপড়া।
যশ চোপড়ার প্রথম পছন্দ ছিল অনিল কপূর এবং তার পর গোবিন্দা। কিন্তু স্ক্রিপ্ট শোনার পর অনিল এবং গোবিন্দা দু’জনেই এই ফিল্মটা করবেন না জানিয়ে দেন। কারণ ছিল, এই ফিল্মে নায়ককে অনেকটা সময় হুইল চেয়ারে বসে কাটাতে হত।
অনিল কপূর এবং গোবিন্দা দু’জনেরই এই বিষয়টা পছন্দ ছিল না। কারণ, তাঁদের মনে হয়েছিল হুইল চেয়ারে বসে থাকলে তাঁরা সে ভাবে অভিনয়ের সুযোগই পাবেন না।
এই ফিল্মটা বানাতে যশ চোপড়াকে সাহায্য করেছিলেন তাঁর ছেলে আদিত্য চোপড়া। ফিল্ম কী ভাবে বানাতে হয় এই ফিল্ম থেকেই শিখেছিলেন আদিত্য।
এই ফিল্মে বিনোদ খন্নার বিপরীতে জুহি চাওলা অভিনয় করেছিলেন। অনেকেই জানেন না, জুহি চাওলার আগে মাধুরী দীক্ষিতের কাছে গিয়েছিলেন যশ চোপড়া। কিন্তু মাধুরী তখন হিট অভিনেত্রী। ফিল্মে তাঁর ছোট রোল পছন্দ হয়নি।
তার পর জুহির কাছে যান যশ চোপড়া। জুহি চাওলা ফিল্মটা করতে রাজি ছিলেন একটাই শর্তের সাপেক্ষে। যশ চোপড়াকে তাঁর পরবর্তী ফিল্মে জুহি চাওলাকে লিড রোলে নিতে হবে। উপায় না পেয়ে যশ তাতে রাজিও হয়ে যান।
ফিল্মের শুটিং চলাকালীন বিনোদ খন্নার উপর রেগে গিয়েছিলেন যশ চোপড়া। কারণটা খুবই সঙ্গত ছিল। বিনোদ খন্না রোজই দেরি করে সেটে আসতেন। ফলে অন্যান্য তারকাদের তাঁর জন্য অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হত। আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছিল এর ফলে।
এই ফিল্মের কিছু শুটিং সুইত্জারল্যান্ডে হয়েছিল। তার পর থেকে সেই শুটিং স্পট এতটাই জনপ্রিয় হয়ে যায় যে, বলিউডের প্রচুর ফিল্ম সুইত্জারল্যান্ডে হতে শুরু করে। এমনকি সেখানে যশ চোপড়ার একটা মূর্তিও বানানো হয়েছে।
এই ফিল্ম এতটাই হিট হয়েছিল যে, ১৯৯২ সালে কানাডায় ফের ফিল্মটা রিলিজ করা হয়। এই ফিল্মটার সমস্ত গান এবং শ্রীদেবীর যে কস্টিউম ছিল, সেগুলোও দারুণ হিট হয়েছিল।