কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারের সন্তান। তবে তিনিও বাবার মতোই পা রেখেছিলেন অভিনয়ের দুনিয়ায়। পর্দার খলনায়ক কিরণ কুমার ব্যক্তিগত জীবনে সাঁই বাবার পরম ভক্ত।
১৯৪৫ সালের ২০ অক্টোবর কিরণের জন্ম শ্রীনগরে। তাঁর জন্মগত নাম ছিল দীপক ধর। তাঁর বাবা ওঙ্কার নাথ ধর ওরফে জীবন ছিলেন সাদাকালো যুগের জনপ্রিয় অভিনেতা। শুধুমাত্র নারদের চরিত্রেই ৪৯ বার অভিনয় করেছিলেন পরবর্তীকালে বলিউডের প্রখ্যাত এই ভিলেন।
কিরণের প্রাথমিক পড়াশোনা ইনদওরের ড্যালি কলেজ থেকে। তার পর তিনি পড়াশোনা করেন মুম্বইয়ের বান্দ্রার ন্যাশনাল কলেজ থেকে। অভিনয়ের টানে পরের গন্তব্য পুণের এফটিআইআই।
বাবা অভিনেতা হওয়ায় কেরিয়ার শুরু করতে সমস্যা হয়নি। তাঁর প্রথম ছবি ছিল ১৯৬০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘লভ ইন সিমলা’। অভিনয়জীবনে তাঁর নতুন নাম হয় ‘কিরণ কুমার’।
এর পর ‘প্যায়ার কিয়া কো ডরনা কিয়া’, ‘দো বুঁদ পানি’, ‘বিন্দিয়া অউর বন্দুক’ ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়।
কিন্তু কিরণের কেরিয়ারের গ্রাফ নীচের দিকে নামতে থাকে ‘জঙ্গল মেঁ মঙ্গল’ ছবি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার সঙ্গে। এর পর বলিউডে পর পর কয়েকটি ছবি ব্যর্থ হওয়ায় কিরণ কুমার চলে যান গুজরাতি ছবির ইন্ডাস্ট্রিতে।
পাশাপাশি, কাজ শুরু করেন টেলিভিশনেও। ‘ঘুটন’, ‘গৃহস্থি’, ‘কথাসাগর’-এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করেন তিনি। পরে আবার ফিরে আসেন বলিউডে। কিন্তু নায়ক কোনওদিনই হতে পারেননি। খুশি থাকতে হয়েছে চরিত্রাভিনেতা হয়েই। বহু সিনেমায় তাঁকে ভিলেনের চরিত্রে দেখা গিয়েছে।
‘পাত্থর কে ফুল’, ‘খুন কা কর্জ’, ‘দৌলত কি জঙ্গ’, ‘বিশ্বাত্মা’, ‘বোল রাধা বোল’ ছবিতে তাঁর কাজ দর্শকদরে নজর কেড়েছিল। তবে ছবির তুলনায় টেলিভিশনে তিনি অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
পরবর্তী সময়ে কিরণ কুমারের নামের পাশে যোগ হয়েছে ‘লাখোঁ মেঁ এক’, ‘মর্যাদা’, ‘অগ্নিপথ’, ‘আঁধি’, ‘সারা আকাশ’, ‘কিটি পার্টি’, ‘আর্যমান’-এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকের নাম। বর্তমানে ভারতীয় টেলিভিশন দুনিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত কুশীলবদের মধ্যে কিরণ কুমার অন্যতম।
গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বিস্তৃত কেরিয়ারে তিনি অভিনয় করেছেন পাঁচশোর বেশি সিনেমা, প্রায় ৮০টি আঞ্চলিক ভাষার সিনেমা এবং অসংখ্য সিরিয়ালে। হিন্দির পাশাপাশি অভিনয় করেছেন ভোজপুরি এবং গুজরাতি ছবিতেও।
কিরণ কুমার বিয়ে করেছেন সুষমা বর্মাকে। সুষমাও ছিলেন অভিনেত্রী। তবে তিনি বিয়ের পরে অভিনয় ছেড়ে দেন।
কিরণ-সুষমার ছেলে শৌর্যও অভিনয় শুরু করেছেন। ইতিমধ্যেই কাজ করেছেন ডেবিড ধবন, আব্বাস মস্তান, ইন্দ্র কুমার এবং ইমতিয়াজ আলির মতো নামী পরিচালকের সঙ্গে।
মে মাসে কোভিড আক্রান্ত হন কিরণ কুমার। দীর্ঘ চিকিৎসা পর্বের পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন এই প্রবীণ অভিনেতা। তিনি নিজেই সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, কী ভাবে সব সতর্কতা মেনে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়েছেন তিনি।
একই বাড়িতে সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতেন কিরণ কুমার। তাঁর নির্দেশেই স্ত্রী খাবার রেখে দিতেন সিঁড়িতে। ব্যবহারের পরেই ফেলে দেওয়া যায় এমন বাসনই ব্যবহার করা হত।
দীর্ঘ নিভৃতবাসে অভিনেতার সঙ্গী ছিল কল্পবিজ্ঞান। আইজ্যাক অ্যাসিমভের লেখা বই এবং স্টার ট্রেক, স্টার ওয়ার্স-এর মতো ছবি দেখে সময় কাটাতেন তিনি। দেখতেন হিন্দি ছবি-ও।