করুণাময়ী রাণী রাসমণি ধারাবাহিকের একটি দৃশ্য।
বেশ কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ নাকি বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। খবরটি একেবারেই ভুয়ো। যে চ্যানেলে ধারাবাহিকটি সম্প্রচারিত হয় অর্থাৎ জি বাংলার সবচেয়ে আলোচিত এবং টিআরপি সমৃদ্ধ ধারাবাহিক হল ‘রাসমণি ...’। সেখান থেকে লক্ষ্মীলাভও নেহাতই কম হয় না। তাই এই লকডাউনের মন্দার বাজারে নিজেদের সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারাবাহিকটি বন্ধ করে দেওয়ার আপাতত কোনও পরিকল্পনাই নেই ‘জি’-এর।
তিন বছর আগে ফিরে দেখা যাক। ২০১৭-র ২৭ জুলাই। জি-বাংলায় শুরু হল নতুন ধারাবাহিক ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’। রাসমণি নামটি শুনলেই মনে আসে দক্ষিণেশ্বর, শ্রীরামকৃষ্ণ, ভবতারিণীর মন্দির, গঙ্গার ঘাট। এর আগে বাংলা ধারাবাহিকে রামকৃষ্ণ, সারদা, মা কালি নিয়ে গুচ্ছের ধারাবাহিক হলেও রাসমণি যেন কিছুটা ব্রাত্য হয়েই পড়েছিলেন। স্টোরি লাইনের প্রয়োজনে তাঁর উল্লেখ এসেছে ঠিকই, কিন্তু শুধুমাত্র রাসমণিকে কেন্দ্র করে আস্তে একখানা সিরিয়াল! না, আগে হয়নি।
শুরু হল সিরিয়াল। আর শুরু হতেই সুপারহিট। তিন বছর ধরে টিআরপি চার্টে প্রথম তিনে থাকা মুখের কথা নয়। কেন এই জনপ্রিয়তা? রাসমণির ভূমিকায় দিতিপ্রিয়ার অভিনয় প্রথম থেকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিল দর্শকদের। এখনও ১৮ না পেরনো দিতিপ্রিয়ার অসাধারণ অভিনয়, এক বলিষ্ঠ নারী চরিত্রকে ছোট পর্দায় নিখুঁত ভাবে ফুটিয়ে তোলার কৌশলে মুগ্ধ হয়েছিলেন অনুরাগীরা। তবে শুধু দিতিপ্রিয়াকে দিয়েই তো আর বছরের পর বছর ধরে টিআরপি লিস্টে র্যাকঙ্ক করা যায় না। সহ অভিনেতারাও যথাযথ। আর সবচেয়ে বড় কথা, চিত্রনাট্য, শিল্প নির্দেশনা সবেতেই যেন সাবেকিয়ানা আর আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া। বলা ভাল, যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। যে ইতিহাস আগে সীমিত ছিল বইয়ের পাতা অথবা দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কোনায় কোনায় আচমকাই যেন প্রতিভাত হতে লাগল বাঙালি দর্শকের ড্রয়িংরুমে।
লকডাউনের বাজারে যখন পর পর বিভিন্ন চ্যানেলে শুটিং বন্ধ হওয়ার খবর কানে আসছে ঠিক তখনই শোনা যায় রোষের মুখে নাকি পড়তে চলেছে ‘রাসমণি...ও’। টিআরপি’র শিখরে থাকা এই পিরিয়ড ড্রামা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা চাউর হতেই মেঘ জমতে শুরু করে ভক্তদের মনে।
এ দিকে লকডাউন আবহে প্রায় দু’মাস নতুন শুট হয়নি ধারাবাহিকটির। পুরনো এপিসোডই পুনরায় সম্প্রচার করতে শুরু করেছিল চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। সেখানেও ছক্কা হাঁকিয়েছে ধারাবাহিকটি। টিআরপি রেটিংয়ে গত দু’মাস ধরে ৪.৬ রেটিং ধরে রেখেছে ধারাবাহিকটি। শুধু তাই নয় রিপিট টেলিকাস্ট দিয়েও হয়েছে স্লট লিডার। বেড়েছে নতুন দর্শক সংখ্যাও। এত সব কারণে স্বভাবতই দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগছিল, হাইটিআরপি একটি ধারাবাহিককে কেনই বা বন্ধ করতে যাবে চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। এ দিকে শুটিং বন্ধ, এমনি ক্ষতি হচ্ছে লাখ লাখ টাকা, যে ধারাবাহিকের হাত ধরে লক্ষ্মীলাভ করছিল চ্যানেল, তা কি আদপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে? তবু সংশয় কাটছিল না কিছুতেই।
অবশেষে গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। গোটা বিষয়টি নিয়ে জি বাংলার ক্লাস্টার হেড (পূর্ব) সম্রাট ঘোষ বলেন, “করোনা সঙ্কটেও ‘নন স্টপ আবোল তাবোল’ , ‘প্রিয় তারকার অন্দরমহল’ সমেত সময়োপযোগী এবং নতুন কনটেন্ট নিয়ে এসেছি। করোনা কালে শুটিং পুনরায় আরম্ভ হলে ‘ক্ষীরের পুতুল’ এবং ‘কাদম্বরী’-র মতো নতুন ধারাবাহিক নিয়ে আসব আমরা। শুধু তাই নয়, ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ‘জয় বাবা লোকনাথ’ এবং ‘নেতাজি’-র মতো ধারাবাহিকগুলোও আগের মতো দেখানো শুরু হবে।” শুটিং সেটে যাতে সুরক্ষা বজায় রেখেই ‘বেস্ট ইন ক্লাস’ বাংলা ধারাবাহিক দর্শকের দরবারে পৌঁছে দেওয়া যায় সে বিষয়েই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সম্রাট।
অতএব, ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ফ্যানেদের আপাতত মন খারাপের কারণ নেই। শুটিং আবার শুরু হলেই নতুন এপিসোড নিয়ে রানি মা উপস্থিত হবেন বলেই আশ্বস্ত করেছেন চ্যানেল কর্তৃপক্ষ।