প্রথম ছবি ‘নিল বট্টে সন্নাটা’য় এক মায়ের গল্প বলেছিলেন পরিচালক অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি। নিজের আর্থ-সামাজিক পরিধিকে ছাপিয়ে যে সন্তানের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের স্বপ্ন দেখে। তাঁর তৃতীয় ছবি ‘পঙ্গা’তে ফের আর এক মায়ের গল্প শোনালেন পরিচালক। তবে এ বারে মায়ের স্বপ্ন শুধু সন্তানকে ঘিরে নয়। বরং সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বেচ্ছায় সে বিসর্জন দিয়েছে নিজের স্বপ্ন।
স্পোর্টস মুভি আর নারীকেন্দ্রিক ছবি, বলিউডে দুটোই এখন হটকেক। সেই দুই জ়ঁরকে কাজে লাগিয়েছেন অশ্বিনী। তবে তিনি এই জ়ঁরের প্রথম পথিক নন। তাই তাঁর আগের দু’টি ছবির নিরিখে ‘পঙ্গা’য় কোনও নতুনত্ব নেই। গল্প, তার চলন সবটাই দর্শক জানেন। ছবি দেখতে দেখতে বুঝতেও পারবেন। তবু ‘পঙ্গা’কে স্বতন্ত্র করে তোলার চেষ্টা করেছেন অশ্বিনী। কঙ্গনা রানাউতও পরিচালকের মান রেখেছেন।
অশ্বিনীর বাকি দু’টি ছবির মতোই এই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন তাঁর স্বামী পরিচালক নিতেশ তিওয়ারি। তবে ‘দঙ্গল’-এর দাপুটে মহাবীর সিং ফোগতের মতো বাবা এ ছবিতে নেই, যে নিজের স্বপ্ন মেয়েদের উপরে চাপিয়ে দিয়েছিল। বরং এক সময়ে দেশের জাতীয় মহিলা কবাডি টিমের ক্যাপ্টেন জয়া নিগমের (কঙ্গনা) প্রেমিক প্রশান্তকে (জস্সি গিল) দেখে জয়াকে তার মা (নীনা গুপ্ত) জিজ্ঞেস করে, ‘‘বিয়ের পরে তোকে কবাডি খেলতে দেবে তো?’’ এটি একটি মাত্র উদাহরণ। ‘পঙ্গা’র ছত্রে ছত্রে নারী ক্ষমতায়নের বার্তা গুঁজে দেওয়া হয়েছে। জয়ার স্বামীর চরিত্রটি ফেমিনিজ়মের সবচেয়ে বড় উপহার এই ছবিতে। যে চরিত্রে কঙ্গনার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অভিনয় করেছেন জস্সি।
পঙ্গা
পরিচালনা: অশ্বিনী আইয়ার তিওয়ারি
অভিনয়: কঙ্গনা, জস্সি,
রিচা, নীনা
৬/১০
জয়া যদি অশ্বিনীর নারীবাদের একটি মুখ হয়, তবে অন্য মুখটি মিনু (রিচা চড্ডা)। জয়ার প্রিয় বান্ধবী, কবাডি খেলোয়াড় মিনুর বয়স তিরিশ পেরিয়ে গেলেও সে বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি। তার কারণ হিসেবে হবু শ্বশুরকে সে বলে, ‘‘আমার মা-বাবা নাতি-নাতনির মুখ দেখতে চায়। কিন্তু আর দু’তিন বছর পরে মা হতে আমার অসুবিধে হবে, তাই...’’
আরও পড়ুন: একাধিক ক্ষণস্থায়ী প্রেম, প্রথাগত ভাবে নাচই শেখেননি মার্শাল আর্টে পারদর্শী এই বলি সুন্দরী
মুখ্য চরিত্রে কঙ্গনা থাকলে, অন্য শিল্পীদের স্ক্রিন প্রেজ়েন্স কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। নীনাকে ছবিতে ঠিক মতো ব্যবহার করা হয়নি। তুলনায় রিচা সুযোগ পেয়েছেন বেশি। আর কঙ্গনার ছেলে আদির (যাজ্ঞ ভাসিন) মুখে বয়সের তুলনায় একটু বেশি পরিণত সংলাপ ঠুসে দেওয়া হয়েছে। তবে স্পটলাইট যাঁর উপরে, তাঁর সঙ্গে পঙ্গা নেওয়ার দুঃসাহস আর কে করবেন? তাই অভিযোগ থাকলেও কঙ্গনাই ‘পঙ্গা’র প্রাণশক্তি। এ ছবি দেখার সবচেয়ে বড় কারণও।
অশ্বিনীর দু’টি নারীচরিত্রের উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ, অস্বস্তির সঙ্গে শহুরে মেয়েরা একাত্ম বোধ করবেন। ‘মেরি কম’, ‘দঙ্গল’-এর সঙ্গে এ ছবির গল্প ও গল্প বলায় মিল থাকলেও, মেয়েদের ও মায়েদের জন্য ছবিটি জরুরি। জীবনের প্রতিটি পদে তাদের পঙ্গা যে নিতেই হয়, হবেও...