(বাঁ দিক থেকে) বিদীপ্তা চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ, অরিন্দম শীল। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কাণ্ড এক তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কোনও অন্যায় নয়, পুরো নারী জাতির অপমান— এ ভাবেই ব্যাখ্যা করছেন বাংলা বিনোদন দুনিয়ার বিশিষ্টজনেরা। সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি আনন্দবাজার অনলাইনে ব্যক্তিগত ক্ষোভ, আফসোসের কথাও জানিয়েছেন তাঁরা। কথা বলেছেন কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, অরিন্দম শীল, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, মানসী সিংহ, সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ। রুদ্রনীল ছাড়া বাকি সকলেই কন্যাসন্তানের অভিভাবক। আরজি কর-কাণ্ডের পর কন্যাসন্তানকে নিয়ে কতটা ভয় পাচ্ছেন তাঁরা?
পরিচালক কমলেশ্বরের কথায়, “ভয় নয়, ক্রোধ জন্মাচ্ছে। এই অঘটন কেবল এক তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় নয়। সমগ্র নারী জাতির অপমান। এই অপমানের বিচার চাই।” তাঁর মতে, প্রয়োজনে হোক বা অপ্রয়োজনে, নারী পথে নামবে। তাকে সেই সুরক্ষা দিতে হবে। পরিচালক এক সময় পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। সেই জায়গা থেকে তাঁর কী বক্তব্য? কমলেশ্বর জানিয়েছেন, শুধু চিকিৎসক নন, চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের প্রত্যেকের সুরক্ষা চাইছেন তিনি। একই সঙ্গে চাইছেন, প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত হোক। তাকে কড়া শাস্তি দেওয়া হোক। যাতে এই ধরনের অমানবিক ঘটনা দ্বিতীয় বার না ঘটে।
বিদীপ্তা দুই কন্যাসন্তানের মা। তার পরেও আরজি কর হাসপাতালের মৃত তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায় তাঁকে ভয় পাওয়াচ্ছে না। তাঁর কথায়, “আমি অত্যন্ত বিরক্ত। বার বার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কখনও কামদুনি। কখনও দিল্লি, কখনও আমাদের শহর কলকাতায়। পথে নেমে প্রতিবাদ ছাড়া আমি তো আর কোনও বিকল্প রাস্তা দেখছি না।” এই ঘটনায় পরিচালক অরিন্দম মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি বলেছেন, “কেবলই মনে হচ্ছে, একটা আলাদা বিশ্রামাগার থাকলে এই ঘটনাটাই হয়তো ঘটত না। আমাদের সরকারি হাসপাতালে এত কিছু রয়েছে। মেয়েদের জন্য একটা পৃথক বিশ্রামাগারও যে প্রয়োজন, এই ঘটনা তা বুঝিয়ে দিল।”এই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর এক বন্ধু-কন্যার কথা উল্লেখ করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর বন্ধু-কন্যা ডাক্তারি পড়ছেন। অনেক স্বপ্ন তাঁর। বিদেশে না গিয়ে নিজের দেশে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চান। এর পরেও কি সেই মেয়েটি দেশে থাকতে চাইবে? প্রশ্ন তুলেছেন অরিন্দম।
ভয় পাচ্ছেন অভিনেতা সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। সুরজিতের কথায়, “আমার মেয়ে স্বাধীনচেতা। রাতবিরেতে দরকারে রাস্তায় বেরোয়। যত ক্ষণ না ফেরে তত ক্ষণ দুশ্চিন্তায় ভুগি। এ বার সেই দুশ্চিন্তা আরও বাড়ল।”এর আগে কিঞ্জল নন্দও একই কথা বলেছেন।সমাজমাধ্যমে অভিনেত্রী মানসীর বক্তব্য, “নিরাপত্তাহীনতায় না ভুগে সঙ্গে একটা ব্লেড রাখো গো মেয়ে। ওটা দরকার।” আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তাঁর বক্তব্য, “এত দিন মেয়েকে আত্মরক্ষা করতে শিখিয়েছি। এ বার নিজেকে বাঁচাতে প্রয়োজনে উল্টো দিকে থাকা অপরাধীকে মারার কথাও বলব।”
সমাজমাধ্যমে অভিনেত্রী সুদীপ্তা লিখেছেন, “খবরে দেখলাম, একজন আরজি কর প্রাক্তনী চিকিৎসক বলছেন, আরজি কর-এর মাটিতে দাঁড়িয়ে নাকি চিৎকার করে বলা হয়েছে, “এই আন্দোলন যেন বৃহত্তর আকার ধারণ না করে!” তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, মানুষ ক্ষেপে উঠলে এই আন্দোলন আটকানো সম্ভব হবে তো? তার পরেই তাঁর আর্জি, “ভুলে যান আপনি তৃণমূল সমর্থক না বিজেপি কর্মী। ভুলে যান আপনি সিপিএমকে ভোট দিয়েছেন না কংগ্রেসের থেকে সুবিধা পেয়েছেন। শুধু মনে রাখুন আপনি মানুষ। আর মানুষ মানে শুধু একটা মাংসপিণ্ড নয়, ব্যস। আপাতত শুধু এটুকু মনে রেখে ভাবুন, এখন আপনার কী করণীয়।”
রুদ্রনীলের কলমও ফের সচল। তাঁর কবিতায় মৃত তরুণীকে সামনে রেখে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের কন্যাসন্তানকে লালন করার গল্প বর্ণিত হয়েছে। পাশাপাশি বিচারের প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বাকিদের মতো তিনিও প্রশাসন, রাজ্য সরকারের কাছে প্রকৃত দোষীর কড়া শাস্তি চেয়েছেন।