‘কাবুলিওয়ালা’ ছবির একটি দৃশ্যে মিঠুন চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
দেব যা পারেননি, তা কি পারবেন রবীন্দ্রনাথ? এক সপ্তাহ ধরে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। অবশেষে তার উত্তর মিলল।
গত বছর মিঠুন চক্রবর্তী এবং দেব অভিনীত ‘প্রজাপতি’ ছবিটি বক্স অফিসে ব্লকবাস্টার হয়েছিল। রাজ্যের একাধিক প্রেক্ষাগৃহে জায়গা পেলেও ছবিটি কোনও কারণে নন্দনে জায়গা পায়নি। তা নিয়ে টলিপাড়ার বিতর্ক এক সময় রাজনৈতিক মহলেও চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে সুমন ঘোষ পরিচালিত ছবি ‘কাবুলিওয়ালা’। এই ছবিতে নামভূমিকায় রয়েছেন মিঠুন। মিঠুনের ছবি এ বারেও নন্দনে জায়গা পাবে কি পাবে না, তা নিয়ে জোর চর্চা ছিল।
গত বছর অভিজিৎ সেন পরিচালিত ‘প্রজাপতি’ ছবিতে দেব ছাড়াও ছিলেন মিঠুন। বিভিন্ন মহলে অভিযোগ উঠেছিল, মিঠুন বিজেপির সদস্য বলেই রাজ্যের সরকারী প্রেক্ষাগৃহে এই ছবিকে জায়গা দেওয়া হয়নি। দেব সমাজমাধ্যমের পাতায় লিখেছিলেন, ‘‘নন্দন এ বার তোমাকে মিস্ করব। কোনও সমস্যা নেই। আমাদের আবার দেখা হবে।’’
এই বছর দেব এবং মিঠুন কিন্তু ভিন্ন শিবিরে। আগামী শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে দুটো ‘বড়’ ছবি— দেব অভিনীত ‘প্রধান’ এবং মিঠুন অভিনীত ‘কাবুলিওয়ালা’। এখন প্রশ্ন হল, শুক্রবারের আগে নন্দনে কি ‘কাবুলিওয়ালা’ জায়গা পাবে? সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহের শুরুতেই নন্দনে মিঠুনের ছবিটি জমা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে রিভিউ কমিটির সদস্যরা ছবিটি দেখেন। মঙ্গলবার ‘কাবুলিওয়ালা’ ছাড়াও ‘প্রধান’ ছবিটিও তাঁরা দেখেছেন। দু’টি ছবিই তাঁদের পছন্দ হয়েছে। ছুটির মরসুমে দু’টি ছবিই দর্শককে আকৃষ্ট করবে বলে মনে করছেন শহরের হল মালিকদের একাংশ। বৃহস্পতিবার সকালে যাবতীয় জল্পনা সরিয়ে জানা গেল ‘কাবুলিওয়ালা’ এবং ‘প্রধান’— দু’টি ছবিই নন্দনের পাশাপাশি রাধা স্টুডিয়োতে জায়গা পেয়েছে।
তবে ‘নন্দন’-এ মিঠুনের ছবি জায়গা পাওয়ার পর প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে সেতুবন্ধন করলেন? কারণ, ‘কাবুলিওয়ালা’ রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির একাংশের প্রশ্ন, রবীন্দ্রনাথের আবেগ জড়িয়ে আছে বলেই কি মিঠুনের ছবিকে সরকারি প্রেক্ষাগৃহে জায়গা দেওয়া হল? উত্তর অবশ্য জানা নেই। গত বছর নন্দনে মিঠুনের ছবিকে কেন জায়গা দেওয়া হয়নি? এই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নন্দনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘গত বছর কী হয়েছিল, এখন তা নিয়ে কিছু বলা মুশকিল। এই বছর দুটো ছবিই রিভিউ কমিটির ভাল লেগেছে। তাই দু’জনকেই শো দেওয়া হয়েছে।’’
সমগ্র বিষয়টাকে কী ভাবে দেখছেন ‘প্রধান’-এর প্রযোজক অতনু রায়চৌধুরী? আনন্দবাজার অনলাইনকে অতনু বললেন, ‘‘গত বছর নন্দন কর্তৃপক্ষ ‘প্রজাপতি’ কেন দেখাননি, সেটা তাঁরাই বলতে পারবেন। আমাদের কাছে সেটা এখনও রহস্য!’’ ছবি নিয়ে ভেদাভেদ অতনুর পছন্দ নয়। তাঁর কথায়, ‘‘ছবি দেখানোর জন্যই তো নন্দন। সেখানে এ বার দুটো ছবিই দেখানো হচ্ছে বলে ভাল লাগছে। এটুকুই বলতে পারি কর্তৃপক্ষের সঠিক চেতনার উদয় হয়েছে।’’
নন্দনে ‘কাবুলিওয়ালা’ জায়গা পাওয়ায় খুশি এই ছবির পরিচালক সুমন ঘোষ। বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বললেন, ‘‘আমি শুনেছিলাম গত বছর রাজনৈতিক কারণে মিঠুনদার ছবিটিকে নন্দনে জায়গা দেওয়া হয়নি। কিন্তু এই বছর দুটো ছবিকেই একসঙ্গে জায়গা দেওয়া হয়েছে বলে ভাল লাগছে।’’ এরই সঙ্গে সুমন যোগ করলেন, ‘‘আসলে মিঠুন চক্রবর্তী বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়— এ রকম কয়েক জন বাঙালি ব্যক্তিত্ব রাজনীতির ঊর্ধ্বে। তাঁরা বাংলার গর্ব। তাঁদের আমাদের সম্মান জানানো উচিত। মিঠুনদার ছবিকে নন্দনে জায়গা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি।’’ নন্দনের সমস্যা তো মিটল। এখন বক্স অফিসের লড়াইতে দুই ছবি কে কাকে টেক্কা দেবে, সেটাই দেখার।