Joy Mukherjee Aindrila Sharma Bengali Television Industry

ঐন্দ্রিলার সঙ্গে জয়ের আচরণ বরদাস্ত করা হবে না, বলছে টেলিপাড়া

ও লিখেছে এক হাতে তালি বাজে না। আমার প্রশ্ন, সায়ন্তিকার সঙ্গে ওর সমস্যা হল কেন?  ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ ধারাবাহিকে কাজ করতে গিয়েই বা সমস্যা কেন হল?

Advertisement

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ১৮:৩৭
Share:

জয়-ঐন্দ্রিলা। ছবি: ফেসবুক।

জয় মুখোপাধ্যায় আর ঐন্দ্রিলা শর্মার বচসা যা রীতিমতো শারীরিক নিগ্রহে পৌঁছে গিয়েছিল, তা নিয়ে সরগরম টেলিপাড়া।ইতিমধ্যে জয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন ঐন্দ্রিলা। আর্টিস্ট ফোরাম তিন মাসের জন্য ‘ব্যান’ করেছে তাঁকে। যদিও যে ঘটনার পর ওই বিতর্কের সূত্রপাত, তার পরে আনন্দবাজার ডিজিটালকে এক সাক্ষাৎকারে জয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ‘‘বিষয়টা তেমন কিছুই নয়, ঐন্দ্রিলার হাতে হাত লেগে গিয়েছিল।’’ তবে সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অভিনেতা প্রযোজকদের কথায় উঠে এল অন্য চিত্র। ৩ ফেব্রুয়ারি ‘জিয়নকাঠি’র ফ্লোরে তবে ঠিক কী ঘটেছিল?

Advertisement

আনন্দবাজার ডিজিটালকে সাক্ষাৎকারে জয় সেদিন বলেছিলেন-

দুজনেই একসঙ্গে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সরু দরজা। দুজন একসঙ্গে বেরোনো সম্ভব নয়। বেরোনোর জায়গা করে নেওয়ার জন্য ওনার হাতটা ধরে সরিয়ে আমি বেরিয়েছি, বেরোনোর জন্য যেটুকু টাচ করা হয়। দিস ওয়াজ দ্য অনলি টাইম আই টাচড হার। উনি তখন আমাকে বললেন, ‘‘হাউ ডেয়ার ইউ টাচ মি!’’ তখন একটা হিটেড কনভারসেশন স্টার্ট হয়। উত্তেজিত হয়ে কথা বললে এগজ্যাক্টলি সব কথা তো মনেও থাকে না। কিন্তু থিঙ্কস গট আগলি। পরে ওঁর ইন্টারভিউয়ে পড়ছিলাম আমি নাকি ওঁকে হেড ব্যাং করেছি, অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছি।

Advertisement

উত্তরে যা বললেন ঐন্দ্রিলা

ও হেড ব্যাং করেছিল, অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিয়েছিল। সে দিন আমার মায়ের ফোন এসেছিল। ফ্লোরের সবাই শুনেছে। আমাদের দুজনের শট ছিল। ও আসছে দেখেই আমি ফোনটা রেখে শট দিতে যাব, ও অসভ্যের মতো চেঁচাতে শুরু করে।বলে ‘এটিকেট শিখিসনি। বাবা-মা কিছুই শেখায় নি। পঞ্চাশজন লোকের সামনে আমাকে অপমান করে। আমি ‘তুমি শট দাও’, বলে বেরোতে যাচ্ছি, তখন লাইট ফেলে আমার ডান হাত জোরে চেপে ধরে ঠেলে দেয় আমায়। ও যে বলেছে, ‘জাস্ট টাচ’ এটা তা একেবারেই নয়। আর বলেছে রাস্তা সরু ছিল, সেটাও সম্পূর্ণ ভুল! ওই একই ঘরে অন্য দরজা ছিল। ও ষাঁড়ের মতো এগিয়ে আসে আমার দিকে। পরিচালক, ডিওপি-সহ অন্যেরা জোর করে ওকে আটকাচ্ছে, ও শুনবে না। আমার কপালে ওর কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে অশালীন মন্তব্য করতে থাকে। আমি আমার প্রোগ্রামারের সঙ্গে মেক আপ রুমে আসি। হাত-পা কাঁপছে তখন আমার! ও আমার মেক-আপ রুমে এসে চেঁচাতে চেঁচাতে বলে ‘আজকে আমি ওকে মারব!’ আমার রুমে মেয়েরা কোনওরকমে ওকে বার করে, দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন ভরত কলকে ফোন করি। পুলিশ আসছে শুনে ও পালিয়ে যায়। ও লিখেছে এক হাতে তালি বাজে না। আমার প্রশ্ন, সায়ন্তিকার সঙ্গে ওর সমস্যা হল কেন? ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ ধারাবাহিকে কাজ করতে গিয়েই বা সমস্যা কেন হল?

ধারাবাহিকের পরিচালক জয়দীপ কর্মকার

শট চলছিল তখন। ঐন্দ্রিলার ক্লোজ শট নেওয়ার পরে জয়- ঐন্দ্রিলার সাজেশন শট নেব। জয় ডাকতে গেছে ঐন্দ্রিলাকে। ঐন্দ্রিলা ফোনে ছিল। সেটা দেখেই জয় চেঁচাতে থাকে। জয়কে ঐন্দ্রিলা বলে ‘তাহলে তুমি একাই শট দাও’, বলে বেরোতে যায়। আর তখন সেটা শুনে, জয় অতো বড় চেহারা নিয়ে দুম করে ধাক্কা মারে। ঠেলতে ঠেলতে ঐন্দ্রিলাকে মারতে চলে গেছে জয়। আমি জয়কে ধরে রাখতে পারছিলাম না।ওকে বুঝিয়ে মেক আপ রুমে পাঠানোর পরেও ও আবার ঐন্দ্রিলার মেক আপ রুমে চড়াও হয়। তবে জয় টেকনিশিয়ান থেকে স্পটবয় সবাইকে অশালীন মন্তব্য করত। ওকে নিয়ে কাজ করা যায় না।

‘জিয়নকাঠি’ ধারাবাহিকের অভিনেতা ভরত কল

ঐন্দ্রিলা আমায় ফোন করে। আমি পুলিশকে ডাকি। পরে জয় আসে আর্টিস্ট ফোরামে কথা বলতে। কিন্তু সেখানেও তর্কাতর্কি শুরু হয়। আসলে ওর আচরণেই সমস্যা আছে। সকলকে ওর মুড বুঝে কাজ করতে হবে। সেটা সম্ভব না।

ওই ধারাবাহিকের প্রযোজক অর্ক গঙ্গোপাধ্যায়

‘জিয়নকাঠি’ করার সময় থেকেই দেখছি প্রায়ই কোনও না কোনও বিষয়ে জয়ের সমস্যা হচ্ছে। আমার পুরো ইউনিট চেষ্টা করেছে ওর রাগ, অশালীন মন্তব্য, গায়ে হাত তোলা এই সব অমানবিক আচরণের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। শুধু আমরাই নয়। সায়ন্তিকাও এসেছিল। আমাদের কাছে বলেছিল ওর আচরণের সঙ্গে মানিয়ে নিতে। যাতে ও মন দিয়ে কাজ করে। কিন্তু ঐন্দ্রিলার সঙ্গে যা হল, তা আর মেনে নেওয়া যায় না। এফআইআর হয়েছে। আমরা নায়ক পরিবর্তন করেছি। আমার সামনে ও নিজের মাকে বলছে, ‘‘একজন হিরোর সঙ্গে কেমন করে কথা বলতে হয় জান না?’’ জয় বলেছে, ও নিজে চলে এসছে। এই তথ্য ভুল। আমরা ওকে বাদ দিতে বাধ্য হই।

লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য

আর্টিস্ট ফোরামে এক অভিনেতা আর একজন অভিনেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি? প্রযোজক হিসেবে আমরা দু’জনের মধ্যে কথা বলে ঝামেলা মেটানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু কোনও অভিনেতা যদি সেটা করতে রাজি নয়া হয় তা হলে আমাদের কিছু করার থাকে না। একজন মহিলার সম্মানহানি হয়েছে এ ক্ষেত্রে। তাঁকে কোনোভাবেই জোর করা যায় না।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement