বলিউডের কিছু ছবি সমান ভাবে উপভোগ করেন আট থেকে আশি, সব বয়সের দর্শক। ‘কোই মিল গ্যায়া’ সে রকমই একটি ছবি। ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই ছবিটি হৃতিক রোশনের কেরিয়ারেরও গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
রাকেশ রোশন পরিচালিত বক্স অফিসে সুপারহিট ছবিটি ঘিরে সমালোচনাও যথেষ্ট হয়েছে। অনেকেই বলেন, এটি স্পিলবার্গের বিখ্যাত ছবি ‘ই টি— দ্য এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল’ ছবির হিন্দি সংস্করণ। তবে সায়েন্স ফিকশন ঘিরে তৈরি এই ছবি যে বলিউডে নতুন স্বাদ এনেছিল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
হৃতিক রোশন-প্রীতি জিন্টা অভিনীত এই ছবির মূল আকর্ষণ ছিল ভিনগ্রহী ‘জাদু’। যে নাকি খাবারের বদলে সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে। এই জাদুকে লুকিয়ে রাখা এবং আবার তাকে নিজের গ্রহে ফেরত পাঠানো, এই ঘটনাক্রম ঘিরেই আবর্তিত হয় গল্প।
‘জাদু’-র লুকও খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। বিশেষ করে বাচ্চাদের মন জয় করেছিল জাদুর চেহারা। জাদুকে দেখতে কী রকম হবে, সেই নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছিল।
পরিচালক চেয়েছিলেন, জাদুকে দেখলে যেন বাচ্চারা ভয় না পেয়ে যায়। আবার তার চেহারার মধ্যে ভিনগ্রহীসুলভ বৈশিষ্টও যেন থাকে। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরে জাদু-কে তৈরি করেছিলেন জেমস কোলমার।
অস্ট্রেলিয়ায় বসে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কোলমারের হাতে তৈরি হয়েছিল ‘জাদু’-র চেহারা। সে কথা পরে এক সাক্ষাৎকারে হৃতিক জানিয়েছিলেন। বেশ কিছু ডিজাইন দেখার পরে তা খারিজ করেন রাকেশ এবং হৃতিক। অবশেষে নীল রঙের জাদুকেই মনে ধরে তাঁদের।
কোলমারের জন্ম ১৯৬৭ সালে, ইংল্যান্ডে। ফাইন আর্টস, কমার্শিয়াল আর্টস, ডিজাইনিং, থ্রি ডি কম্পিউটার গ্রাফিক্স, সাউন্ড অ্যান্ড লাইটিং-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন কোলমার।
‘জাদু’-র উচ্চতা তিনি রেখেছিলেন ৩ ফুট। বিশেষ নজর ছিল প্রাণীটির চোখের দিকে। মানুষ এবং অন্যান্য জীবের চোখের বৈশিষ্ট যেন থাকে, সে দিকে খেয়াল রেখেছিলেন তিনি। তবে কৃত্রিম সে চোখে মানবিক অনুভূতির ছোঁয়া দিতেও ভোলেননি কোলমার।
১৯৮৮ থেকে কোলমার কাজ করছেন বিনোদন দুনিয়ায়। ১৯৯৪ থেকে তাঁর কাজ পুরোপুরি ছবিকেন্দ্রিক। ‘সুপারম্যান রিটার্নস’, ‘হাউস অব ওয়্যাক্স’, ‘সি নো ইভিল’, ‘অ্যাকোয়ামেরিন’-সহ বেশ কিছু ছবির সাফল্যের অন্যতম কারিগর তিনি। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ভূষিত হয়েছেন দেশবিদেশের পুরস্কারে।
বিনোদনের পাশাপাশি তাঁর কাজ ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন থিম পার্কে। অস্ট্রেলিয়া জুড়ি থিম পার্ক এবং পর্যটকদের আকর্ষণীয় অসংখ্য কেন্দ্র সেজেছে তাঁরই হাতে। ২০০০ সিডনি অলিম্পিকের বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং ক্রীড়াকেন্দ্রের সাজসজ্জার দায়িত্বেও ছিলেন কোলমার।
সৃজনশীল কাজের পাশাপাশি তাঁর আগ্রহ মার্শাল আর্ট এবং প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা নিয়ে। দীর্ঘ দিন মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি।
‘জাদু’-র ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ইন্দ্রবর্ধন জে পুরোহিত। খর্বকায় এই অভিনেতা যে জাদু সেজেছিলেন, সে কথাও প্রকাশ্যে আসে সিনেমা মুক্তি পাওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে। ইন্দ্রবর্ধন পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে বিনোদন জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
বড় পর্দার পাশাপাশি বেশ কিছু টেলিভিশন শো-তেও অংশ নিয়েছেন তিনি। তাঁকে ইন্ডাস্ট্রিতে ডাকা হত ‘ছোটু দাদা’ বলে।
২০১৪-র ২৮ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন অভিনেতা ইন্দ্রবর্ধন। নিজে পোশাক ও সাজসজ্জার আড়ালে থেকে উপহার দিয়ে গিয়েছেন ‘জাদু’-কে।