নীল ও পৃথা নিজস্ব চিত্র
‘‘আজ আমাদের বৌভাত। কিন্তু কালই আমাদের ফুলশয্যা হয়ে গিয়েছে।’’ বাক্যটা শেষ করতে পারলেন না। তার আগেই লজ্জা পেয়ে গেলেন ‘সৌদামিনীর সংসার’-এর ‘লোকু’। ভাইবোন, মামি-পিসিরা সবাই মিলে পথ আটকে দাঁড়িয়েছিলেন। শ্বশুরবাড়ির দিকেও গচ্ছা গিয়েছে। বাপের বাড়ির দিকেও! তাও যে শেষমেশ ঘরে ঢুকতে দিয়েছেন সবাই— এই অনেক।
৩ দিন আগেই নিরিবিলিতে বিয়ে সেরে নিয়েছেন অভিনেতা নীল চট্টোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী পৃথা চন্দ। তবে বিয়ের গল্প শুনে যা বোঝা গেল, ‘নিরিবিলি’ শব্দটা টলিপাড়া বা কলকাতা শহরের জন্য তোলা থাকলেই ভাল। গোটা ঝাড়গ্রাম মাতিয়ে নীল জানিয়ে এসেছেন, ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লেনে আয়া হ্যায়’! বিয়ে করতে যাওয়ার আগে এমনই নাচ নেচেছেন, আত্মীয়স্বজন তাঁকে বসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। বড়দের ধমকও খেয়েছেন লোকু, ‘‘ভুলে গেলি নাকি যে তোর বিয়েতেই যাচ্ছি আমরা! এখনই হাঁফিয়ে গেলে হবে? রাত ১২টায় লগ্ন!’’ তাই সেই মধ্য রাতে ‘বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছে’!
কিন্তু কলকাতা শহর বলে বৌভাতে অতো জনকে নিমন্ত্রণ করতে পারেননি নীল। তাও চেষ্টা করেছেন টেলিপাড়ার সকলে যেন যেতে পারেন তাঁর বৌভাতে। সৌদামিনীর গোটা সংসার সমেত টেলিভিশনের বহু তারকার সমাবেশ ঘটছে বৃহস্পতিবার সালকিয়াতে।
বিয়েটা যে চুপি চুপি সেরেছেন, তা নয়। দর্শকদের অনেক আগে থেকে তারিখটা জানিয়ে দিয়েছিলেন। কখনও ‘তারকার অন্দরমহল’-এ, কখনও বা ‘দিদি নম্বর ওয়ান’-এ। প্রি ওয়েডিংয়েরও সমস্ত পরিকল্পনা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু একটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার পরে সব বাতিল হয়ে যায়। ‘আকাশ আট’ চ্যানেলে অভিনয় করা দিয়েই বর-কনের যাত্রা শুরু। অভিনয়ে হাতেখড়ি হয়েছিল পরিচালক দেবীদাস ভট্টাচার্যের হাতে। ডিসেম্বর মাসের শেষে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু হয় দেবীদাসের। তাঁদের গুরুর মৃত্যুতে ভয়ঙ্কর ভাবে ভেঙে পড়েন দু’জনেই। তাই বাতিল হয়ে যায় মাঝের অনেক অনুষ্ঠান।
নীল চট্টোপাধ্যায়
বৃহস্পতিবার বৌভাত উপলক্ষে নীল তাঁর নামের সঙ্গে মিল রেখেই পোশাক নিয়েছেন। নীল শেরওয়ানিতে সাজবেন তিনি। আর যখন আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন পাশে তাঁর স্ত্রী পৃথা সাজগোজ আরম্ভ করে দিয়েছেন বলে জানালেন অভিনেতা। আর নিজে? ‘‘আমি এখনও স্যান্ডো গেঞ্জি আর ট্রাউজার পরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। সবার যা সাজের ধুম, তাতে একটু ভয় পেয়ে গিয়েছি আর কি!’’
মেনুতে কী আছে আজ?
অভিনেতা জানালেন, তাঁর পছন্দের ৩টি ডিশ রয়েছে— এতটুকু তথ্যই তাঁর কাছে আছে। বাকিটা খুব একটা জানার চেষ্টা করেননি তিনি। সেগুলি হল, মাটন বিরিয়ানি, চিকেন চাপ আর ফিশ ফ্রাই।
প্রেমের প্রস্তাব কে কাকে দিয়েছিলেন আর বিয়ের প্রস্তাবই বা কোন দিক থেকে এসেছিল?
নীল জানালেন, ‘‘সবই আমি। কিন্তু ওই দু’টো আলাদা করে হয়নি। এক বারেই।’’ এমন হয় নাকি! নীল তো বড়ই ফিল্মি! একেবারে সোজা এক দিন পৃথাকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘তোমাকে আমি ২০২১-এই বিয়ে করব। প্রেম পরে হবে। আগে তোমায় বিয়ে করব’। পৃথা পালিয়ে যাননি? ‘‘পৃথা প্রথমে তো আমাকে পাগল ভেবেছিল। পাত্তাই দেয়নি আমায়। কিন্তু তার পর আস্তে আস্তে প্রেম হয় আমাদের।’’ জানালেন গর্বিত নীল।
এক বছর চুটিয়ে প্রেম করেছেন নীল-পৃথা। কিন্তু হিসেব মতো তাঁদের প্রেমের অধ্যায়টা শুরু হল বিয়ের পরেই।