অতনু বসু।
৩ এপ্রিল থেকে অতনু বসুর আগামী ছবি ‘অচেনা উত্তম’-এর শ্যুটিং শুরু হয়েছে দার্জিলিঙে। এই প্রথম বড় পর্দায় জায়গা করে নিচ্ছেন ‘মানুষ’ উত্তম। মহানায়কের অন্দরমহল কি দেখতে পাবে দর্শক? একান্ত আলাপচারিতায় পরিচালক জানালেন সব কথা।
প্রশ্ন: দার্জিলিঙে শ্যুটিং চলছে ‘অচেনা উত্তম’-এর?
অতনু: হ্যাঁ, দার্জিলিং, টংলিংয়ে শ্যুট চলছে। আগে আউটডোর শ্যুট হচ্ছে। তার পর কলকাতায় শ্যুটিং হবে। আরেক বার হয়তো বাইরে যেতে হতে পারে। সেটা এক্ষুনি বলতে পারছি না।
প্রশ্ন: উত্তম-যোগ কী ভাবে?
অতনু: আচমকাই সবটা হয়েছে। ডিসেম্বরে আমি মুম্বইয়ে। হঠাৎই এক সকালে মেসেজ এল প্রযোজক প্রমোদ আনন্দের। দুবাইয়ের বাসিন্দা। শুরুতে বলিউড ছবিতে অর্থ লগ্নি করতেন। এখন নিজস্ব প্রোডাকশন হাউজ খুলেছেন। তাঁর অনুরোধ, মহানায়ক উত্তমকুমারকে নিয়ে একটা ছবি বানাতে হবে।
প্রশ্ন: অবাঙালি, দুবাইয়ের প্রযোজক উত্তমকুমারকে জানেন!
অতনু: হ্যাঁ, জানেন। ওঁর সমস্ত ছবির নাম ধরে ধরে জানেন। আরও মজার কথা শুনবেন? গুগল সার্চিংয়ে কোনও নায়কের নামের আগে মেগা বা সুপারস্টার আসে না। ব্যতিক্রম উত্তমকুমার। ওঁর নাম দিয়ে খুঁজলে নিজে থেকেই মহানায়ক শব্দটা জুড়ে যায়! শুধু উত্তমকুমার কখনও আসে না।
প্রশ্ন: অনুরোধ জেনেই উচ্ছ্বসিত, উল্লসিত?
অতনু: বোমকে গিয়েছিলাম। মনে হল, রিভলিং চেয়ারে বসেছিলাম। হঠাৎ যেন চেয়ারটা সরে গেল! চুপ করে বেশ কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। তার পরেই মনে হল, মহানায়কের চরিত্রে কাকে নেব? তখনই শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের মুখ ভেসে উঠেছিল। মনে হল সব দিক থেকে শাশ্বত সঠিক।
প্রশ্ন: গৌরব চট্টোপাধ্যায়, জুপিটার চট্টোপাধ্যায়, নবমিতা চট্টোপাধ্যায়, দেবলীনা কুমারকে নেওয়ার কথা মাথায় আসেনি?
অতনু: নবমিতার লুক টেস্ট করিয়েছিলাম। নবমিতা নিজেই বুঝেছেন, ওঁর লুক আসছে না। গৌরব ব্যস্ত ধারাবাহিকের কাজে। সময় দেওয়া বা লুক বদলানো ওঁর পক্ষেও সম্ভব নয়। তা ছাড়া, জোর করে কাউকে কোনও চরিত্রে ঢুকিয়ে দিলে ছবির সঙ্গেও সেটা যাবে না। পরিচালক হিসেবে সেটা হতে দিতে পারি?
প্রশ্ন: চাপ হয়নি? ছোট পর্দায় একই কাজ দর্শকের থেকে ‘ব্লান্ডার’ তকমা পেয়েছে...
অতনু: কাজের ক্ষেত্রে আমি বরাবরই সাহসী। আর ব্লান্ডার হওয়ার সুযোগই দেব না। ছোট পর্দার কথা উঠল বলেই বলছি, ওখানে মহানায়ককে চকচকে করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছিল। আমি অচেনা ‘মানুষ’ উত্তমকে দেখাব। ছবির নামে তাই ‘অচেনা’ শব্দ যোগ করেছি।
প্রশ্ন: মহানায়কের মৃত্যুর ৪০ বছর পরেও বাঙালি আঁতিপাঁতি করে তাঁকে জানার চেষ্টা করেছেন। আপনি নতুন কী জানাবেন?
অতনু: ওই যে বললাম, নায়ক বা মহানায়ক নন, মানুষ উত্তম আমার ছবির বিষয়। দোলের দিন কী ভাবে কাটাতেন উত্তম, ধরার চেষ্টা করব। তাঁর মনের লুকনো অনুভূতি, ভাল-মন্দ লাগা, চাওয়া-পাওয়া সামনে আনার চেষ্টা করব। ক্যামেরার ঝলকানিতে ঝকঝক করতে থাকা তারা তিনি নন। আবার তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা তুলে এনে হুবহু বায়োপিকও বানাব না। আমি রক্তমাংসের মানুষটাকে ক্যানবন্দি করব, যা মহানায়ক সম্বন্ধে তাঁর অনুরাগীদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে। ক’জন মহানায়কের বসার বা শোওয়ার ঘরে ঢুকতে পেরেছেন? আমার ছবি সে সবও দেখাবে।
প্রশ্ন: ছবি মহানায়কের শোওয়ার ঘর, বসার ঘরে পৌঁছে দেবে?
অতনু: হ্যাঁ, বাড়ির ভিতরটাও দেখতে পাবেন দর্শক। যেখানে মহানায়কের দুর্গাপুজো হত, সেখানেই পুজো দেখানো হবে। যে ঘরে তাঁর দেহ শেষ বারের জন্য রাখা হয়েছিল সেই ঘরও ছবিতে থাকবে। সব মিলিয়ে ঘরোয়া উত্তমকেই সবাই দেখতে পাবেন, গ্যারান্টি।
প্রশ্ন: ঘরোয়া উত্তম মানেই গৌরী দেবী, তরুণকুমার, সুচিত্রা সেন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া দেবী...
অতনু: শুধু এঁরা কেন? শর্মিলা ঠাকুর, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ও থাকবেন। কী ভাবে থাকবেন, সেটা ছবি বলবে। আমি মহানায়কের জীবনের কোনও গুঞ্জন তুলে ধরব না। সব কিছুই এক্ষুনি ফাঁসও করব না। এ টুকু বলতে পারি, আমরা সবাই এনজয় করতে করতে কাজ করব।
প্রশ্ন: সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় থাকবেন না?
অতনু: এখনই সব বলে দিলে পরের জন্য কী থাকবে! এ গুলো ক্রমশ প্রকাশ্য। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নাও থাকতে পারেন।
প্রশ্ন: উত্তম থাকবেন যখন গানও থাকবে নিশ্চয়ই? দায়িত্ব কার কাঁধে?
অতনু: উপালি চট্টোপাধ্যায় গানের হেঁশেল সামলাচ্ছেন।
প্রশ্ন: সৃজিত মুখোপাধ্যায়ও সেলুলয়েডে মহানায়ককে নিয়ে আসছেন। ক্ল্যাশ করবে?
অতনু: বিষয় এক নয়, এটুকু বলতে পারি। বাকিটা সময় বলবে।