Ankush Hazra

ইন্ডাস্ট্রির বিভাজন প্রকাশ্যে আসাটা অস্বস্তিকর: অঙ্কুশ

রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অঙ্কুশ। অতিমারিতে তাঁর উপলব্ধি, মানুষের জন্য কাজ করতে হলে রাজনীিত করা জরুরি নয়।

Advertisement

দীপান্বিতা মুখোপাধ্যায় ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২১ ০৭:০০
Share:

অঙ্কুশ। ছবি: স্বপ্নিল সরকার

প্র: আপনার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য, পোস্টের মধ্যে একটা ‘বিক্ষুদ্ধ’ ব্যাপার আছে। একটু খোলসা করবেন বিষয়টা?

Advertisement

উ: ঠিক তা নয়। আসলে আমরা সকলেই ভীষণ ফ্রাস্ট্রেটেড। সব পরিকল্পনা ঘেঁটে গিয়েছে। আর্থিক, মানসিক সব রকম সমস্যায় আমরা জর্জরিত। গত দেড় বছর এত খারাপ গিয়েছে যে, বলার নয়। ভ্যাকসিন নিয়েই কী কাণ্ড চলছে, দেখুন। ভ্যাকসিন নেব কি নেব না? নিলে কোনটা? কত দিনের গ্যাপ? কারও কাছে ঠিক তথ্য নেই। সত্যি-মিথ্যে গুলিয়ে যাচ্ছে। ভাল থাকার জন্য পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই। নিজের ফিটনেস রুটিন নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আসলে বুঝতে পারছি না, কী করলে মন ভাল থাকবে। তাই নানা রকম চেষ্টা করে যাচ্ছি।

প্র: আপনার ব্যঙ্গাত্মক পোস্টগুলোর পিছনে কোনও উদ্দেশ্য নেই বলছেন?

Advertisement

উ: (হেসে) সারা দিন কত রকমের খবর দেখি। দেখে নিজের অনুভূতিটা বলে ফেলি। মজার মোড়কে বলার চেষ্টা করি।

প্র: মানসিক চাপ কাটাতেই কি ছোট পর্দার রিয়্যালিটি শোয়ে এলেন?

উ: আমরা সকলেই কাজের মানুষ। বাড়িতে বসে থাকলে ভিতরের ভয়টা যেন আরও পেয়ে বসে। অতিমারিতে সকলের ক্যালেন্ডার ঘেঁটে গিয়েছে। সারা বছর কতটা আয় করব, সেই ভেবে কিছু ইনভেস্টমেন্ট করেছিলাম। এখন দেখলাম, সারা বছর কোনও আয় হলই না। আর্থিক ক্ষতির বিষয়গুলো মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে। ছোট-বড় পর্দা বলে নয়, কাজের মধ্যে থাকাটা আমার কাছে বেশি জরুরি ছিল। আরও একটা জিনিস জরুরি ছিল, মানুষের পাশে থাকা।

প্র: কোভিড রোগীদের খাবার দেওয়ার একটি উদ্যোগ নিয়েছেন...

উ: হ্যাঁ, এই কাজে আমার বন্ধু বিক্রম (চট্টোপাধ্যায়), অনীক (ধর) যুক্ত রয়েছে। সত্যি বলব, এটা করে অদ্ভুত একটা মানসিক শান্তি পাচ্ছি।

প্র: সোশ্যাল মিডিয়ায় গত বছরের বাতিল হয়ে যাওয়া প্যারিস ট্রিপের উল্লেখ করেছেন। আপনার মলদ্বীপ ট্রিপও তো বিড়ম্বনার হল।

উ: মলদ্বীপের গোটা বিষয়টাই আমার খুব অদ্ভুত লেগেছে। ওখানে কোভিড সংক্রান্ত কাজকর্মের জন্য হেলথ প্রোটেকশন এজেন্সি বলে সরকারি একটা বিভাগ রয়েছে। ঐন্দ্রিলার (সেন) রিপোর্টে স্রেফ পাসপোর্ট নম্বর আর ‘পজ়িটিভ’ লেখা ছিল। ভাইরাল ভ্যালু পর্যন্ত লেখা নেই। ওর কোনও উপসর্গ ছিল না। আমরা বারবার বললাম, আবার পরীক্ষা করার জন্য। কিছুতেই করল না। ১৪ দিন ধরে রেখে দিল। আমরা বাড়ি এসে তিন সপ্তাহ পরে ঐন্দ্রিলার অ্যান্টিবডি টেস্ট করালাম। সেখানে দেখা গেল, ওর শরীরে কোনও অ্যান্টিবডি তৈরিই হয়নি। ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে তিনি জানালেন, উনি ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত যে, ঐন্দ্রিলার তখন কোভিড হয়নি। পুরোটাই যেন স্ক্যাম! পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা খবর দেখে মনে হল, আমরাও হয়তো ওই স্ক্যামে জড়িয়ে পড়েছিলাম।

প্র: রাজনীতিতে আসার প্রস্তাব ছিল আপনার কাছে। নির্বাচনের শেষে কি মনে হচ্ছে, না যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল?

উ: অনেকে বলেছিল, রাজনীতিতে আসার এটাই আসল সময়। এখন গেলে নাকি আমাকে মাথায় তুলে রাখা হবে... ইত্যাদি। ইন্ডাস্ট্রির সকলেই তখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। কিন্তু আমার বারবার মনে হয়েছে, রাজনীতিতে যাওয়ার ভাল সময়-খারাপ সময় বলে কিছু হয় না। মানুষের জন্য যখন খুশি কাজ করা যায়। আমি করছিও। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, ঋদ্ধি সেন... এরা সকলেই রাজনীতির বাইরে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কোনও দিন রাজনীতিতে গেলে নিজের শর্তে যাব। যখন বুঝব আমাকে কারও কথায় চলতে হবে না, নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, তখনই পা বাড়াব। এই জন্য দেবের প্রতি আমার প্রচণ্ড শ্রদ্ধা রয়েছে। ও নিজের মতো কাজ করে। কারও নামে কুৎসা করে না।

প্র: রাজনীতিকে কেন্দ্র করে ইন্ডাস্ট্রির এই বিভাজন নিয়ে কী বলবেন?

উ: এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমরা সকলে একটা পরিবারের মতো ছিলাম। বাইরের কোনও ঘটনা কেন আমাদের মধ্যে প্রভাব ফেলবে? ইন্ডাস্ট্রির বিভাজন প্রকাশ্যে আসাটা অস্বস্তিকর। রাজনৈতিক মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশটা নষ্ট হতে দেওয়া উচিত নয়।

প্র: কোভিড পরিস্থিতিতে ‘ম্যাজিক’ রিলিজ়ের ঝুঁকি নিয়েছিলেন। সেই ছবি দর্শক-সমালোচক দুই স্তরেই প্রশংসিত। অন্য ধারার অনেক পরিচালকই তো এখন আপনার সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছুক।

উ: শুটিং হয়ে থাকা এবং শুটিং হবে, সব মিলিয়ে ১২-১৪টা ছবি আছে আমার পাইপলাইনে। কিন্তু কবে, কোনটা হবে কিচ্ছু ঠিক নেই।

প্র: রাজা চন্দর সঙ্গে কি ‘ম্যাজিক’-এর সিকুয়েল প্ল্যান করেছেন?

উ: না, একটা অ্যাকশন থ্রিলার করব আগে। এর বেশি এখন বলতে পারব না। এর পর পাভেলের ছবি আছে, প্রেমেন্দুবিকাশ চাকীর একটি ছবি আছে। তবে সবই পিছোচ্ছে।

প্র: আপনার আর ঐন্দ্রিলার বিয়েও তো ক্রমশ পিছোচ্ছে...

উ: এই কোভিড পরিস্থিতি কেটে গেলে বিয়ে করব। অনেকে বলছেন, এটাই ভাল সময় কারণ কম লোককে নিমন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, ৫০ জনের মধ্যে যাদের ডাকতে পারব না, তাদের কতটা খারাপ লাগবে। সে তো বলবে, ‘আমি তোর কাছের মানুষ হলাম না?’ এটার মুখোমুখি হওয়াটা আমার কাছে ভীষণ অস্বস্তিকর। পরিবার-ইন্ডাস্ট্রি মিলিয়ে অন্তত ২০০ জন আছে, যাদের না বললেই নয়। তাই এখন সব কিছু ঠিক হওয়ার অপেক্ষা করছি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement