শ্রীময়ীর বেশে ইন্দ্রাণী
প্রথম স্বামীর থাকতেই দ্বিতীয় বিয়ে। ‘শ্রীময়ী’ ধারাবাহিকের মুখ্য চরিত্রের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। ‘কেন, শ্রীময়ীকে বিয়ে করতেই হত?’ ‘রোহিত সেনের সঙ্গে বন্ধুত্বই তো ভাল ছিল’, ‘সমাজে কুপ্রভাব ফেলবে এই ধারাবাহিক’, ‘অনিন্দ্যর বর্তমানেই তাঁর প্রথম স্ত্রী বিয়ে করছে!’ ইত্যাদি একাধিক মন্তব্য ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা এই ধারাবাহিক। ‘শ্রীময়ী’ অর্থাৎ ইন্দ্রাণী হালদার এবং ‘রোহিত’ ওরফে টোটা রায়চৌধুরী নিজেদের পর্দার বিয়ে নিয়ে আড্ডা মারতে আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভে এলেন।
প্রসঙ্গ উঠল মহিলাদের দ্বিতীয় বিয়ে নিয়ে। আজও এই সমাজে মহিলাদের উপর নানা রকমের অলিখিত নিয়ম চাপিয়ে দেওয়া হয়। তারই জেরে শ্রীময়ী-রোহিতের বিয়ে নিয়ে এত কথা! কিন্তু শ্রীময়ীর মতো তো এমন হাজারো মহিলা রয়েছেন, যাঁরা নানা অত্যাচারের কারণে আগের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে নতুন ভাবে সংসার করতে চান বা একা থাকতে চান। তাঁদের নিয়ে কী ভাবছেন শ্রীময়ী এবং রোহিত?
ইন্দ্রাণী হালদারের সাফ কথা, ‘‘বিয়ে করাটাই একমাত্র উপায় নয়। যদি নিজের ইচ্ছে থাকে, তা হলে সব দিক বিবেচনা করে বিয়ে করা উচিত। আর নয়তো একা থাকা ভাল। নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়াটাই মূল মন্ত্র।’’ তাঁর কথায় সায় দিয়ে টোটা জানালেন, সমস্যার শিকড় সন্তানদের মানসিকতার মধ্যেও রয়েছে। তাঁদের মতে, বাবা যা করে করুক, ধমক দিয়ে দেব, কিন্তু মা যেন কিছু না করে। সারা জীবন কষ্ট করেও একা থেকে যাওয়াই মায়ের কর্তব্য বলে মনে করেন ছেলেমেয়েরা। টোটার বক্তব্য, তারই জেরে এমন অসংখ্য খবর পাওয়া যায় যে, ছেলেমেয়ে বিদেশে, দেশে একা থাকেন মা। কবে মৃত্যু হয়ে গেল, সে খবরও কেউ রাখে না বলে আক্ষেপ তাঁর।
সেই প্রসঙ্গে ইন্দ্রাণীর মত, একা থাকা ভুল সিদ্ধান্ত নয়। তাঁর যুক্তি বোঝাতে তিনি নিজের মায়ের উদাহরণ দিলেন। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর মাকে বলেছিলেন, ‘‘মা, তোমার ইচ্ছে হলে কিন্তু বিয়ে করতেই পারো। আমরা কোনও বাধা দেব না।’’ কিন্তু তাঁর মা রাজি হননি। বিয়ে তো দূর অস্ত, প্রেমও করেননি। একদা ‘গোয়েন্দা গিন্নি’ মজা করে বললেন, ‘‘তখন বলেছিলাম বিয়ে করতে পারো। কিন্তু শ্রীময়ীর বিয়ে দেখে মায়ের এখন ঘর বাধার শখ জেগেছে। আমি এখন আর রাজি হইনি। কারণ মায়ের সঙ্গে আরও এক বুড়োর দেখাশোনা করা সোজা কথা নাকি!’’ ইন্দ্রাণীর কথা শুনে হেসে উঠলেন বাকিরা।
সমাজে সকলের মানসিকতা এক রকম নয়, সেটা মেনে নিয়েই ইন্দ্রাণীর বক্তব্য, ‘‘ধারাবাহিকে এক ধরনের পরিণতি দেখানো হচ্ছে মানে সবার ক্ষেত্রে এটাই হয়, আর কিছু হয় না, তা নয়। কিন্তু অনেকেই নানা রকমের গল্প বানিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, রোহিত অসুস্থ না হলে কি শ্রীময়ী বিয়ে করত অথবা রোহিত যদি মারা যায়, তার পর তো শ্রীময়ী আবার বিধবা হয়ে যাবে, তখন? এ সমস্ত প্রশ্ন করার মানে নেই।’’
ইন্দ্রাণীর মতে, গল্পে টোটা অসুস্থ না হলেও হয়তো শ্রীময়ী বিয়ে করত। এটা কেবল একটা পরিস্থিতিকে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু এর অবস্থা, ব্যবস্থা সব কিছুই বাস্তবে অনেক রকম হতে পারে। আর তাই গল্পের নায়িকার মতো আরও মহিলাদের উদ্দেশে ইন্দ্রাণীর পরামর্শ, ‘‘ধারাবাহিক দেখুন, ভালবাসুন, কিন্তু এটাকেই ধ্রুব সত্য বলে ধরে নেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু দ্বিতীয় বার বিয়ে করার ইচ্ছে হলে অবশ্যই করুন। এই গল্পের মাধ্যমে একটি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। সেটাকে বুঝতে হবে।’’