মনীষা কৈরালা
মনীষা: আপনি ডাক্তার? আবার পরিচালকও?
কমলেশ্বর: হ্যাঁ, ওই আর কী। কিন্তু ইন্টারভিউটা আমার নয়, আপনার (হাসি)।
মনীষা: (হাসি) ওকে। লেটস স্টার্ট।
প্রথমেই বলি, ইউ আর আ স্পেশাল হিরোইন। নব্বইয়ের দশকে একমাত্র আপনি বোধহয় সেই সময়ের সব টপ ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করেছেন। সুভাষ ঘাই, মণিরত্নমের সঙ্গে দু’টো ছবি, মনসুর খান, সঞ্জয় বনশালী, রাম গোপাল বর্মা।
থ্যাঙ্ক ইউ। আমি প্রিভিলেজড। আই ওয়ার্কড উইথ দ্য বেস্ট।
এঁরা সবাই মনীষা কৈরালার বিউটিটা ধরেছেন। আমি চাই আপনার ‘বিস্ট’ দিকটা জানতে।
ভেরি ইন্টারেস্টিং কোশ্চেন ডক্টরসাব। অবশ্যই আমার মধ্যে ‘বিস্ট’ আছে। একটা সাঙ্ঘাতিক খারাপ দিক, যেটা বোধহয় সব মানুষেরই থাকে। ভিতরের এই খারাপ মানুষটাকে যাতে আমি কনট্রোলে রাখতে পারি, সে জন্যই বিক্রম চৌধুরীর ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি একটু ডিটেলে বলতে পারি তো!
শিওর।
ভিতরের খারাপ মানুষটা কেন জন্ম নেয় জানেন? জন্ম নেয় ইগোর জন্য। এবং আমরা যারা সেলিব্রিটি, তারা প্রথম দিন থেকেই এতটা প্যাম্পার্ড হই যে, আমাদের মধ্যে সেই ইগোটা অনেক বেশি থাকে।
এর সঙ্গে যোগ করুন আমাদের ইনসিকিওরিটি, আমাদের অতিরিক্ত সেন্সিটিভ হওয়া। সব জায়গায় পাত্তা পাওয়া, না চাইলেও বেস্ট খাবার, বেস্ট গাড়ি, বিজনেস ক্লাসে ট্রাভেল, এগুলি কন্টিনিউয়াসলি পেতে পেতে আমাদের ইগোটা কিং সাইজ হয়ে যায়। সেখান থেকেই ভিতরের খারাপ মানুষের জন্ম।
এর পর শুরু হয় অন্যকে ক্রিটিসাইজ করা। আমরা সবার ভুল ধরতে শুরু করি। ইয়ে অ্যায়সা হ্যায়, উয়ো অ্যায়সা হ্যায়। কিন্তু নিজেদের ভুলটা আর আমরা অ্যানালাইজ করতে পারি না। তখন আর ভাবি না, আমাদের সামনের মানুষটা হয়তো বাড়িতে বাচ্চা আর বৌকে ফেলে রেখে আমাদের ডিউটি করছে। আমরা দুর্ব্যবহার শুরু করি। এগুলো থেকে বেরোতেই আমার এই ক্লাসে ভর্তি হওয়া।
আচ্ছা।
এবং এই ক্লাসে যখন আপনি ভর্তি হন, তখন আপনার সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা কেউ আপনাকে চেনেন না। আপনাকে তোষামোদের কোনও কারণ ওঁদের নেই। আমার মনে হয় এই ক্লাস সব সেলিব্রিটির করা উচিত। এতে ধীরে ধীরে পুরোনো মানুষটার সন্ধান পাওয়া যায়। যে নরমাল ছিল। যে স্কুলে মজা করত। এই ক্লাসগুলো করে করেই আমি নিজের ভিতরের ‘বিস্ট’টাকে কনট্রোলে আনতে পেরেছি। তার পর ক্যানসার ধরা পড়ার পরে তো আমি অনেকটাই বদলে গেলাম। আজকে আমি আগের থেকে অনেক বেশি ঠান্ডা। গুড নেচারড। কিন্তু ভিতরের ‘বিস্ট’টা এখনও মাঝে মাঝে চাড়া দেয়। (হাসি) ওটা বোধহয় কোনও দিন যাওয়ার নয়।
খুব এনরিচিং লাগল এক্সপ্ল্যানেশনটা। আপনার কথা শুনে বেটি ডেভিসের সেই বিখ্যাত লাইনটা মনে পড়ে গেল ‘টু বি আ স্টার, ইউ হ্যাভ টু বি আ মনস্টার’।
আই এগ্রি উইথ দ্যাট। তবে সবাই এক হয় না। আজকে এতটা পথ এসে, আমার মনে হয় আপনি দুর্দান্ত আর্টিস্ট হতে পারেন, কিন্তু যদি মানুষ হিসেবে ভাল না হন, আমি সে ভাবে আপনাকে ভালবাসতে পারব না। মানুষ ভাল না হলে আমার অ্যাট্রাকশনটাও লিমিটেড থাকবে।
আপনার কথাবার্তা শুনে যা মনে হচ্ছে, একজন বড় স্টার হওয়া সত্ত্বেও আপনার মধ্যে সাঙ্ঘাতিক ক্রিটিকাল একজন অভিনেত্রী রয়েছে...
ট্রু। আমি ভাবি প্রচুর। কিন্তু আমার কাজটা অসম্ভব মন দিয়ে করি। আমি কাজ নিয়ে অবসেসডও। একটা সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি আমার সিন নিয়ে বসে থাকতাম। আমার চরিত্রটা নিয়ে প্রচুর ভাবতাম। তাই আমার মধ্যে যে একজন ক্রিটিকাল অ্যাক্টর আছে, সেটা আমি জানি। (হাসি)
কমলেশ্বরের সঙ্গে মনীষা। ছবি: কৌশিক সরকার
অনেক জায়গায় পড়েছি মনীষা কৈরালা নাকি খুব ইমোশনাল?
ঠিকই শুনেছেন।
কিন্তু আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তো একটা স্ট্রাকচারে কাজ করে। সেখানে ইমোশনাল হওয়াটা কি ঠিক?
জানি না ঠিক কি না। কিন্তু আমি নিজেকে বদলাইনি। আগে যদিও বা ইমোশনাল লোকজন ছিল ইন্ডাস্ট্রিতে, আজকে তো ব্যাপারটা একেবারেই বদলে গেছে। আজকে একটা ইমোশনাল সিন করার পরেই একজন অ্যাক্টর হাসতে হাসতে পার্টি করতে চলে যেতে পারে। আমি সেটা তখনও পারিনি, আজও পারব না। আমার আজকাল একটা ডিসকানেক্টও হয় ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের থেকে।
যাঁরা ইমোশনাল হন, তাঁরা তো আউটস্পোকেনও হন। ঠোঁটকাটা।
আমি ছিলাম তো ঠোঁটকাটা। প্রচুর ঝামেলায় পড়েছি অনেকের সঙ্গে। তার পর ধীরে ধীরে বুঝলাম কী হবে নিজের মতামতটা দিয়ে? তাতে তো আমার নিজেরই ক্ষতি। আজকে চুপ করে গেছি। আর রিঅ্যাক্ট করি না।
আপনাকে আরও কিছু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে চাই। অফ কোর্স যদি আপনার অসুবিধা না থাকে তা হলেই।
হ্যাঁ শিওর। প্লিজ বলুন। (ওয়েটারকে ডেকে, একটু চায়ের অর্ডারটা নেবেন)।
আমি নিজে ডাক্তার। আমি জানি ওই মোমেন্টটা কী ভয়ঙ্কর হতে পারে। আপনি কোথায় ছিলেন যে দিন শুনলেন আপনার ক্যানসার হয়েছে?
(মাটির দিকে তাকিয়ে) আমি নেপালে ছিলাম। তার কিছু দিন আগে থেকেই শরীরটা ভাল যাচ্ছিল না। আমার কাকিমা নিজে একজন গাইনোকলজিস্ট। তিনি আমাকে দেখছিলেন। কিন্তু তিনিও বুঝতে পারেননি আমার ক্যানসার ধরা পড়বে।
হ্যাঁ, সেটা হতেই পারে।
ইয়েস। খবরটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাকিমা আমাকে বলে মুম্বই ফিরে যেতে। আমি মুম্বই ফিরে আসি। সেখানে এসে জানতে পারি, অসম্ভব কমপ্লিকেটেড একটা অপারেশন করতে হবে। মায়ের কয়েক জন স্কুলের বন্ধু থাকেন নিউ ইয়র্কে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার পর নিউ ইয়র্কে গিয়ে অপারেশন।
এই অসুখটা তো মানসিক ভাবেও একজন মানুষকে শেষ করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট, সেটা অনেক ক্ষেত্রে হয়ও।
ইয়েস, অ্যাবসোলিউটলি। আর আমি খবরটা শোনার পর থেকেই একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাই। আই ওয়াজ ইন আ ট্রান্স।
সেই সময় আমার দু’টো সত্তা কাজ করছিল। একটা দিকে নিউ ইয়র্কে কোথায় থাকব, কোন ডাক্তার দেখাব, কত ফিজ — এ সব নিয়ে ভাবছিলাম। অন্য দিকে সবার সামনে হাসছিলাম, আশেপাশের লোকজনকে এই মেসেজটাই দিতে চাইছিলাম, তোমরা চিন্তা কোরো না। আই অ্যাম ওকে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে সাঙ্ঘাতিক ভয় করছিল।
আপনার পরিবারের রিঅ্যাকশন?
মা আমার সামনে নিজেকে অসম্ভব স্ট্রং দেখানোর চেষ্টা করত সেই সময়। কিন্তু রাতে ঘুম ভাঙলে শুনতে পেতাম পাশের ঘরে শুয়ে মা কাঁদছে। সেই সময় মনে জোর পেতে স্পিরিচুয়ালিটির দিকে ঝুঁকি। জীবনের ওই সময় আধ্যাত্মিক চিন্তার থেকে বড় স্ট্রেংথ কিছু হতে পারে না, এটা আমি বুঝে গেছি।
ডক্টরবাবু, ক্যানসার আমার জীবনের একটা বিরাট শিক্ষা, জানেন? ক্যানসারের আগে আমি জীবনকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছি। আই ডিড নট ভ্যালু মাই লাইফ।
আপনার কথাগুলো অসম্ভব ইন্সপায়ারিং। আজকে তো আপনি ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ডের গুডউইল অ্যাম্বাসেডর। ক্যানসার অ্যাওয়ারনেসের সঙ্গে জড়িত…
হ্যাঁ, আমার মনে হয় যারা যারা ক্যানসার সারভাইভ করেছে তারা অটোমেটিক্যালি ক্যানসার অ্যাওয়ারনেসের সঙ্গে জড়াতে বাধ্য। আমি, যুবরাজ সিংহ। আজকে আমি মানুষকে একটা কথাই বলি, নিজের শরীরকে অবহেলা কোরো না। ক্যানসারের কিছু আর্লি সাইন আছে, সেগুলো হলেই পুরো চেক আপ করাও। আর সব সময় মনে রেখো, জীবনের চেয়ে সুন্দর কিছু নেই। এই জীবনটাই আমাদের সবচেয়ে বড় গিফট। আর কিছু না। আর এ ছাড়া বলব, সামনের মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনলে জেনুইন সহানুভূতি দেখাও। আ লিটিল এমপ্যাথি। ওটা সেই মানুষটা কোনও দিন ভুলবে না।
এত কাছ থেকে জীবন আর মৃত্যু দেখেছেন। এত অভিজ্ঞতা। বলিউডে নিজেকে এস্টাব্লিশ করাটা যদি আপনার প্রথম লড়াই হয়, ক্যানসার জয় করাটা ছিল আপনার দ্বিতীয় লড়াই। এটা নিয়ে কোনও দিন ছবি করার কথা ভাবেননি?
অনেস্টলি কমলেশ্বর, আমি ভাবিনি। আপনার প্রশ্নটা শুনতে শুনতে মনে হল, ইট’স আ ব্রিলিয়ান্ট সাজেশন। ম্যায় ইয়ে সাজেশন ইয়াদ রাখুঙ্গি ডক্টরসাব।
থ্যাঙ্ক ইউ মনীষা।