কথা ছিল দুই বোনের মুখোমুখি আড্ডা হবে। একজন মেগা সিরিয়ালে ভোর ছ’টা থেকে রাত দশটা কাজ করছেন। তার মধ্যে তাঁর বড় মেয়ের পরীক্ষা। বরের নতুন ছবির কাজ। অসুস্থ বাবা। আর একজন পুরুলিয়ায় ‘তৃতীয়’ ছবির আউটডোর সেরে অরিন্দম শীলের নতুন ছবি নিয়ে ব্যস্ত। এমনই এক চরিত্র পেয়েছেন যে ‘‘আমার অ্যড্রেনালিন রাশ-টা বেড়ে গিয়েছে!’’
বাড়িতে অসুস্থ মা। দেড় বছরের মেয়ে। আয়া আসেনি। এত ঝক্কি মাথায় নিয়ে গল্প করতে বসলেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী।
ইন্ডাস্ট্রিতে তিরিশ বছর। তবুও বলছেন, ‘‘আজ অবধি এমন কোনও চরিত্র পাইনি যা আমার অভিনয় সত্তাকে তুলে ধরবে। সকলে বলে, খুব ভাল অভিনয় করছি। কিন্তু আমি জানি, কিছুই এখনও দিতে পারিনি বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে। তাও ঋত্বিকের মতো অভিনেতাকে নিয়ে লোকে ছবি করার কথা ভাবে। কিন্তু আমার মতো অভিনেত্রীদের জন্য আজও গল্প তৈরি হল না!’’ এই আফসোসের মধ্যেও এক রাশ আলো তাঁর মুখে।
‘‘দুটো ছবি ‘বিসর্জন’ আর ‘দুর্গা সহায়’ দেখে মনে হল বাংলায় অভিনেত্রীদের একক জায়গা ফিরছে। জয়া নিজেই জানে না ও কী অভিনয় করেছে, আর তনুশ্রীকে দিয়ে ও রকম অভিনয় করানো যায়! হ্যাটস্ অফ টু অরিন্দমদা,’’ উত্তেজিত সুদীপ্তা! কত দিন আর ‘বুনোহাঁস’, ‘রাজকাহিনী’, ‘ষড়রিপু,’ ‘ওপেনটি বায়োস্কোপ’-এর মতো গুটিকয়েক ছবি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা যায়? ‘‘কেন আমরা এখানে ‘লাঞ্চবক্স’ বা ‘সাইরাত’-এর মতো ছবির কথা ভাবি না? আমরা আসলে চোখ-কান সব বুজে আছি। এটা ভয়ঙ্কর মধ্যমেধার যুগ। সকলে সকলের পিঠ চাপড়াচ্ছি!’’ কথাটা বলেই জিভ কেটে বললেন, ‘‘এগুলো লিখে দিলে অনেকে খুব রেগে যাবে হয়তো! বলবে, কী অভিনয় করে যে এত বড় কথা বলছে?’’
বরাবর ঠোঁটকাটা স্বভাব। তবে ইদানীং নিজেকে বদলেছেন জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত এই অভিনেত্রী।
‘‘নাটক থেকে আসা মেয়ে তো, তাই বেশ অহঙ্কার ছিল। ভাবতাম লোকে বাড়ি এসে চরিত্র দিয়ে যাবে। দেখলাম, ধারণাটা একদম ভুল! তাই বন্ধ জানালা খুলে দিলাম,’’ নিশ্চিন্ত তাঁর স্বর। পার্টিতে যাওয়া, প্রিমিয়ারে ছবি দেখে সে সম্পর্কে মতামত দেওয়া। কোনও পরিচালকের ছবি পছন্দ হলে তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছে প্রকাশ করা। এবং নতুন পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করা। এ ভাবেই নিজেকে বদলেছেন সুদীপ্তা। স্বামী অভিষেকই তাঁর স্বভাব বদলের কারণ। অভিষেকই শিখিয়েছেন মনে মনে সবটা রেখে দেওয়া ভাল না। আছে না কি অনেক দিনের পোষা ইচ্ছে?
‘‘আছে তো! এখনও বিভাসজেঠুকে বলি ‘মাধব মালঞ্চী কইন্যা’-র মালঞ্চী করতে চাই। নীলকেও বলছি করতে।’’ তা হলে আসল প্রেম কি নাটকই? এক মুহূর্তও না ভেবে বললেন, ‘‘ভাবুন তো ‘সওদাগরের নৌকো’-র সতীর কথা। কতটা অভিনয়ের সুযোগ দিয়েছেন আমায় দেবেশ চট্টোপাধ্যায়! সিনেমার জন্য অপেক্ষা করতে হয়, নাটকে দর্শকদের ইমোশন, ভাল লাগা হাতেনাতে বোঝা যায়।’’
সুদীপ্তার ভিতরে একটা টেকনিশিয়ান সত্তা আছে। প্রোডাকশনে আসতে চান। ‘‘বিরসা থেকে সৃজিত সব্বাইকে কত বার বলেছি আমায় অ্যাসিস্ট করতে দে, কেউ নেয় না। বলে, আমায় ক্যামেরার পিছনে দেখলে ইউনিটের সবাই ভয় পেয়ে চলে যাবে,’’ হাসতে হাসতে বললেন সুদীপ্তা।
ক্যামেরার পেছনের কাজ তাঁকে বরাবরই টানে। ‘বিগ বস’-এও গিয়েছিলেন পুরো বিষয়টা কীভাবে শ্যুট হচ্ছে দেখতে। মন থেকে সাড়া পেলে এমন অনেক কিছুই করে ফেলেন তিনি। ‘‘সৃজিতের ‘রাজকাহিনী’ পড়ে মনে মনে ছবিটা দেখতে পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, বেশ গ্র্যাঞ্জার আছে। থাকা উচিত। তাই রাজি হয়েছিলাম। পরে যদিও প্রচুর ফোন এসেছে, ওই চরিত্রটা কেন করলাম বলে,’’ অকপট সুদীপ্তা। সামনে সুমন ঘোষের ‘বসু পরিবার’। অতনু ঘোষের ‘ময়ূরাক্ষী’-র কাজ শুরু হবে। রিলিজের অপেক্ষায় ‘৭২ ঘন্টা’। ইন্দ্রাশিসের ‘পিউবা’। তবু খিদে মিটছে না তাঁর।
আর হিংসে? দিদির সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিতে চাইলেন না যে!
‘‘শুনুন আমার দুই দিদি, বাবা-মা সম্পর্কে আমি ছাড়া অন্য কেউ কিছু বললে আমি তাকে ঝেড়ে শেষ করে দেব! আমি দিদির সঙ্গে ঝগড়া করি, ওকে অপমান করি। ও ভ্যাঁ করে কেঁদে দেয়। কিন্তু অন্য কেউ কিচ্ছু বলে দেখুক তো! দিদির বয়ফ্রেন্ডরা ছোটবেলায় আমার ভয়ে চলে যেত,’’ যেন লড়াকু সুদীপ্তা বেরিয়ে এলেন।
খোলামেলা, স্পষ্টবাক এই অভিনেত্রীর কাছে প্রাক্তন সঙ্গীর কথা জানতে চাইলে, দ্বিধাহীনভাবে বললেন, ‘‘বিয়ের পর, মেয়ে হওয়ার পর, রাজেশকে আর প্রাক্তন শাশুড়িকে জানিয়েছিলাম। ব্যস, ওইটুকুই। আর কী?’’