মনে পড়ছে রামায়ণের এই দৃশ্য? আটের দশকের টেলিভিশনে রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’। রবিবাসরীয় সকালে দূরদর্শনের পর্দা জুড়ে তখন শুধুই রাম-সীতা-লক্ষ্মণ-হনুমানদের রাজত্ব।
পর্দার এই চরিত্রগুলোকে অনেকেই তখন ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে ফেলেছিলেন। লকডাউনে ফের নতুন করে রামায়ণের সম্প্রচার শুরু হয়েছে। ১৯৮৬ সালে প্রথম সম্প্রচার হওয়া রামায়ণের রাম-সীতা-দশরথ-ইন্দ্রজিৎরা এখন কে কী করছেন জানেন?
রামায়ণ মানেই রাম। রামায়ণের রাম হয়েছিলেন অরুণ গোভিল। রামায়ণের অনেক আগে থেকেই তিনি জনপ্রিয় অভিনেতা ছিলেন। প্রচুর হিট ফিল্ম তাঁর ঝুলিতে রয়েছে। তবে আসল জনপ্রিয়তা দিল ১৯৮৬-তে শুরু হওয়া রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’।
মহাকাব্যের পাতা বা টিভির পর্দা থেকে রামকে বাস্তবের মাটিতে এনে দাঁড় করিয়েছিলেন অরুণ গোভিল। এক সময় তাঁকেই ভগবান রাম ভেবে লোকে পা ছুঁয়ে প্রণাম করত। বর্তমানে মুম্বইতে একটি প্রোডাকশন কোম্পানি চালান ৬২ বছরের অরুণ। দূরদর্শনের জন্য বিভিন্ন টিভি সোপ বানায় এই কোম্পানি।
টেলিভিশনের ‘সীতা’। ১৯৮৬ সালে রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’-এ সীতার চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয় হয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। রামায়ণের পরে বেশ কয়েকটি হিন্দি ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন দীপিকা।
‘টিপু সুলতান’, ‘বিক্রম বেতাল’-এ অভিনয় করেছেন তিনি। তবে বিয়ের পর বহু দিন অভিনয় জগৎ থেকে দূরে চলে গিয়েছিলেন দীপিকা। ২০১৮ সালে ফিল্মে কামব্যাক করেন তিনি। ২০১৯ সালে ‘বালা’ ছবিতে ইয়ামি গৌতমের মা হয়েছিলেন।
তবে এ ছাড়াও তিনি নিজের আরও একটা পরিচয় গড়ে ফেলেছেন। ১৯৯১ সালে বরোদা থেকে বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েন তিনি। দশম লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সাংসদ নির্বাচিত হন।
রাম-সীতার পরই আসে লক্ষ্মণের কথা। সৌম্যকান্তি, গভীর শান্ত দৃষ্টির সুনীল লহরী তখন রামবেশী অরুণ গোবিলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয়। মহিলামহলেও রীতিমতো চর্চার বিষয়।
রামানন্দ সাগরের ‘রামায়ণ’-এ কাজ করার আগে বেশ কিছু টেলি-সিরিয়ালে দেখা গিয়েছিল সুনীল লহরীকে। ছোট পর্দায় কাজের আগেই অবশ্য হিরো হিসেবেও মুখ দেখিয়েছেন গুটিকয়েক ফিল্মে। তবে বক্স অফিসে কোনওটাই চলেনি।
রামানন্দ সাগরের ‘বিক্রম অউর বেতাল’-এর কয়েকটি পর্বে অভিনয়ের পর মোতি সাগরের ‘দাদা-দাদি কি কহানিয়া’-তেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। এর পর সুযোগ এল ‘রামায়ণ’-এ। ২০১৭-তে ফের বড় পর্দায় শেষ বার দেখা গিয়েছিল সুনীল লহরীকে। ফিল্মের নাম, ‘আ ডটারস টেল পঙ্খ’। এখন কী করছেন ‘রামায়ণ’-এর সেই লক্ষ্মণ?
মুম্বইয়ে থাকলেও কোনও ফিল্ম নয়, স্ত্রী ভারতী পাঠকের সঙ্গে মিলে একটি প্রযোজনা সংস্থার মালিকানা রয়েছে সুনীলের। সেই সংস্থার কাজই দেখাশোনা করেন রামায়ণের সেই লক্ষ্ণণ, সুনীল লহরী।
রাম-সীতা-লক্ষ্মণের পরম ভক্ত হনুমানের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দারা সিংহ। দারা সিংহ ছিলেন পেশাদার কুস্তিগীর। ১৯৮৬ সালে ‘রামায়ণ’-এর অনেক আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন ফিল্মে কাজ করেছেন।
তাঁর প্রথম ফিল্ম ছিল ১৯৫২ সালের ‘সাঙ্গডিল’। রামায়ণের পরেও তিনি একাধিক ফিল্মে অভিনয় করে গিয়েছেন। ২০১২ সালে মুম্বইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই বছরই ‘আতা পাতা লাপাতা’ ছবিতে অতিথিশিল্পী ছিলেন তিনি। তার আগে ২০০৭ সালে ‘জব উই মেট’ ছবিতে গীতের ঠাকুরদা হয়েছিলেন।
এ বারে আসা যাক রামায়ণের সবচেয়ে নেগেটিভ চরিত্র। রাবণ। রাবণ হয়েছিলেন অরবিন্দ ত্রিবেদী। তাঁর বাজখাঁই কণ্ঠস্বর এখনও অনেক মানুষের কানেই ভেসে ওঠে। রামায়ণের পরও তিনি অভিনয় জগতে ভীষণ ভাবে সক্রিয় ছিলেন। প্রচুর টিভি সিরিয়াল এবং গুজরাতি ফিল্মে অভিনয় করেছেন।
এই মুহূর্তে ৮১ বছর বয়স তাঁর। শরীরের সঙ্গে কণ্ঠস্বরও অনেক ভেঙে পড়েছে। এখন বেশির ভাগ সময়টা রামায়ণ পড়েই কাটান।
মরাঠি অভিনেতা বাল ঢুরি রামায়ণের দশরথের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ২০১১ সালে শেষ বারের মতো তাঁকে মরাঠি ফিল্ম ‘সদারক্ষানয়’-এ দেখা গিয়েছিল। তার পর আর তাঁর সম্বন্ধে খুব একটা খবর পাওয়া যায়নি।
লঙ্কার রাজপুত্র ইন্দ্রজিৎ-ও খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র রামায়ণের। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বিজয় অরোরা। বিজয় হিন্দি ফিল্মের অভিনেতা ছিলেন। ১৯৭৩ সালের ফিল্ম ‘ইয়াদো কি বারাত’ এবং রামায়ণের জন্যই তাঁর সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা।
৬২ বছরের বিজয় মুম্বইয়ে থাকেন। ২০০৩ সালে শেষ বারের মতো পর্দায় দেখা গিয়েছিল তাঁকে। ফিল্মের নাম ছিল ‘ইন্ডিয়ান বাবু’।