চ্যালেঞ্জ নিয়ে মা-বাবার কাছ থেকে ২ মাসের সময় নিয়েছিলেন। এই ২ মাসে হয় তারকা হবেন, না হলে বাড়ি ফিরে কোনও চাকরি করবেন। কিন্তু ২ মাস তো দূর, মাসের পর মাস দরজায় দরজায় ঘুরেও কিছু করে উঠতে পারেননি।
বরং অসুস্থ শরীরে বাড়িই ফিরে যেতে হযেছিল তাঁকে। তারকা হওয়ার বদলে বাড়ি বাড়ি সাবান-ফিনাইল বেচতে শুরু করলেন। কিন্তু সেখান থেকেই ফের ঘুরে দাঁড়ালেন তিনি। বলিউডের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেলেন হলিউডেও।
তিনি বলিউডের ‘ব্যাড ম্যান’ গুলশন গ্রোভার। দ্বিতীয় বারের জন্য মু্ম্বই আসার পর আর বাড়ি ফিরে যেতে হয়নি তাঁকে। ৪০ বছর ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে চলেছেন তিনি।
গুলশনের জন্ম রাওয়ালপিন্ডিতে। স্বাধীনতার পর পরিবারের সঙ্গে দিল্লিতে এসে পৌঁছন গুলশন। দিল্লিরই একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা তাঁরা। বাবার কাপড়ের দোকান ছিল।
পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না তাঁদের। পড়াশোনার ফাঁকে বাবার কাপড়ের দোকানেও টুকটাক কাজ করতেন গুলশন। অবসর সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাবান এবং ফিনাইলও বেচতেন তিনি।
পড়াশোনাতে বরাবরই ভাল ছিলেন তিনি। দ্বাদশের পরীক্ষায় খুব ভাল নম্বর নিয়ে পাশ করেছিলেন। এর পর তিনি দিল্লির শ্রীরাম কলেজে ভর্তি হয়ে যান।
বরাবর অভিনয়ে ঝোঁক ছিল তাঁর। কলেজের নাটকে তিনি অভিনয় করতে শুরু করেন। এমনকি কলেজের সাংস্কৃতিক সম্পাদকও হয়ে যান। স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনার সময় গুলশন ঠিক করে ফেলেন মু্ম্বই আসার।
মা-বাবার আপত্তি সত্ত্বেও তিনি দিল্লি থেকে মু্ম্বই পাড়ি দেন। শর্ত ছিল ২ মাস চেষ্টা করবেন। যদি এর মধ্যে কিছু করে উঠতে না পারেন তা হলে বাড়ি ফিরে কোনও না কোনও চাকরিতে যোগ দেবেন।
কিন্তু মু্ম্বইয়ে গিয়ে শরীর খুবই খারাপ হয়ে যায় তাঁর। দিনের পর দিন মুম্বইয়ে ঘুরে বেড়িয়েও কোনও কাজ পাননি। সঙ্গে আনা টাকাও ফুরিয়ে গিয়েছিল। ফলে দিনের পর দিন না খেয়েই কাটাতে হয়েছে তাঁকে। বাধ্য হয়েই দিল্লিতে ফিরে আসেন তিনি।
কিন্তু অভিনয় যাঁর রক্তে রয়েছে, অর্থাভাব তাঁকে রুখতে পারে কি! দিল্লিতে কিছুতেই তাই মন বসছিল না তাঁর। তিনি ফের মুম্বই চলে আসেন। তবে এ বারে আর ফিরতে হয়নি।
মু্ম্বইয়ে এসেই গুলশন প্রথমে একটি অভিনয় স্কুলে ভর্তি হয়ে যান। ক্লাসে গুলশন সবচেয়ে আগে আসতেন এবং সবচেয়ে শেষে ক্লাস থেকে বেরতেন। পরবর্তীকালে ওই স্কুলেরই শিক্ষকতা শুরু করেন গুলশন। সেখান থেকেই তাঁর কেরিয়ার শুরু।
গোবিন্দ, সঞ্জয় দত্তের মতো অভিনেতারাও এই স্কুলে গুলশনের কাছ থেকেই অভিনয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
এ রকমই এক দিন স্কুলে ছেলের অভিনয় দেখতে এসেছিলেন সুনীল দত্ত। গুলশনের কাজ দেখে তাঁর এতটাই পছন্দ হয়ে গিয়েছিল যে ফিল্ম ‘রকি’-তে সঞ্জয়ের সঙ্গে গুলশনকেও কাস্ট করেন তিনি।
এর আগে ‘বুলন্দি’ এবং ‘হম পঞ্চ’ ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন গুলশন। ধীরে ধীরে তাঁর অভিনয় দর্শকদের এতটাই পছন্দ হয় যে তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাকে হয়নি।
বলিউডে ৪ শতাধিক ফিল্মে অভিনয় করেছেন গুলশন। তিনিই প্রথম কমার্শিয়াল ফিল্ম অভিনেতা যিনি হলিউডে সুযোগ পান।
কেরিয়ারের মতো গুলশনের ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক ওঠাপড়া রয়েছে। গুলশনের প্রথম স্ত্রী ফিলোমিনা বিয়ের ৩ বছর পরই তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে দেন।
সে সময় গুলশনের সেক্রেটারি ছিলেন অভিনেত্রী মন্দাকিনীর ভাই। গুলশনের সেক্রেটারির সঙ্গেই ফিলোমিনা বিয়ে করে লন্ডনে রয়েছেন এখন। তবে প্রথম পক্ষের এক ছেলে সঞ্জয় বাবা গুলশনের কাছেই থাকেন।
২০০১ সালে দ্বিতীয় বিয়ে করেন গুলশন। সেই বিয়েও টেকেনি। এক বছরের মধ্যে ফের ডিভোর্স হয় তাঁদের। তার পর আর বিয়ে করেননি গুলশন।