শুধু ‘হাওয়া’ নয়। নানা স্বাদের ছবি দেখানো হচ্ছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে । ছবি: সংগৃহীত।
বাংলাদেশ হাই কমিশনের তরফে প্রথম ঘোষণায় ছিল যে, কলকাতায় এ বারের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে মোট ৩৭টা বাংলাদেশের ছবি দেখানো হবে। এর মধ্যে সরকারি ছবির তুলনায় বেসরকারি ছবিই বেশি। ইতিমধ্যেই মানুষের বিশেষ অনুরোধ এবং আগ্রহে বাংলাদেশের সুপারহিট ছবি চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত ‘হাওয়া’-র আরও দু’টি বাড়তি শো দেখানো হচ্ছে। সোমবার এবং বুধবার সেই শো দেখানো হবে সকাল ১০টায়। বাংলাদেশ হাই কমিশনের তরফে ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) রঞ্জন সেন বলছেন, ‘‘আমাদের দেশের অন্যতম সুপারহিট ছবি ‘হাওয়া’— যেটা অস্কারে বিদেশি বিভাগের মধ্যে মনোনীত হয়েছে— সেটির প্রথম দিনেই দুটো শো রেখেছিলাম আমরা। তার পর রবীন্দ্রসদন এবং নন্দন কর্তৃপক্ষ আমাদের জানান যে, গত কয়েক বছরে কোনও ছবির জন্য মানুষের এ রকম ‘পাগলামি’ তাঁরা দেখেননি। তাই আমরা ‘হাওয়া’-র আরও দু’টো শো বাড়িয়েছি।’’
তবে উৎসবে কিন্তু শুধু ‘হাওয়া’ নয়। রয়েছে আরও নানা স্বাদের ছবি। ৩৭টি ছবির মধ্যে তিনটি দেশাত্ববোধক ছবি দেখানো হচ্ছে। এর মধ্যে দুটি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপর— ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ এবং ‘মধুমতি পারের মানুষটি– শেখ মুজিবুর রহমান’। আর একটি হচ্ছে মুজিব-কন্যা শেখ হাসিনার উপর — ‘হাসিনা এ ডটার্স টেল’। কেন এই সিদ্ধান্ত?
রঞ্জন জানাচ্ছেন যে, এই ছবিগুলি যখন তাঁরা বিদেশেও দেখিয়েছিলেন, তখন অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছিল। তাঁর মতে, ‘হাসিনা এ ডটার্স টেল’-কে — শুধু একটি ছবি বললে ভুল হবে। ‘‘এটি একটি ইতিহাসের দলিল। ১৯৭৫ সালে আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছিলেন। সেই সময়ে প্রায় অলৌকিক ভাবে তাঁর দুই মেয়ে — শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা— বিদেশে থাকার কারণে এই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান। ওঁরা এই ছবিতে তাঁদের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিজের মুখে বর্ণনা করেছেন। ওঁরা বিদেশে থেকে কী ভাবে এই খবরটা পেয়েছিলেন, তখন দেশ-বিদেশের অবস্থা কী ছিল, কেমন করে তাঁরা এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছিলেন— সেই সব অভিজ্ঞতা তাঁরা এই ছবিতে বলেছেন,’’ বলছেন রঞ্জন।
আসলে শেখ মুজিব তো শুধু ও পার বাংলার নয়, এ পার বাংলারও এক অনুভূতির নাম। শেখ মুজিব বাংলাদেশের জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। তাই তাঁকে নিয়ে জানার আগ্রহ এবং কৌতূহল মানুষের সব সময় আছে এবং থাকে। শেখ মুজিবের যে রাজনৈতিক জীবন, তা শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যেও তার শিকড় গভীরে। এবং তার মাহাত্ম্য বিরাট। এই জাতির পিতার ছাত্র জীবন এই ভারতীয় উপমহাদেশেরই কলকাতায় কেটেছিল। মৌলানা আজাদ নামে যে কলেজ বর্তমানে পরিচিত, সেই কলেজেই পড়তেন শেখ মুজিব। ওই কলেজের ছাত্র সংসদেরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কলকাতা ঘিরে এ রকম অনেক স্মৃতি তাঁর চেতনা জুড়ে। ওঁর ডায়রিতে আছে যে রাজনীতির প্রথম পাঠ তিনি এই কলকাতা শহর থেকেই পেয়েছিলেন।
রঞ্জন বলছেন, ‘‘বিদেশেও ওঁর সংগ্রামী জীবন খুবই পঠিত এবং অভিনন্দিত। বিদেশে আমরা দেখেছি, এ রকম অনেক সংগ্রামী রাজনৈতিক মানুষ দীর্ঘ লড়াইয়ের পরও শেষ পর্যন্ত নেতা হতে পারেন না। সে দিক দিয়ে তো আমরা খুবই ভাগ্যবান। যে শেখ মুজিবের মতো এক জন নেতার জন্ম বাংলাদেশে হয়েছিল। এবং তাঁর সুচারু, সুচিন্তিত নেতৃত্বে আমাদের যে স্বাধীনতার আকাঙ্খা, সেটা ভারত-সহ বিশ্ববাসীর সমর্থনে এবং সহযোগিতায় আমরা আদায় করে নিতে পেরেছিলাম।’’
তাই এক রকম সচেতনতা বাড়াতেই এই ছবিগুলি রাখা হয়েছে। মানুষের কাছ থেকে কেমন সাড়া পেয়েছেন এখনও পর্যন্ত? ‘‘যে সাড়া পেয়েছি তার দরুণ বলতে পারি যে আগামী বছরগুলোতেও এই উৎসবের আয়োজন আমরা করব। যদি না কোভিড বা অন্য বড় কিছু সমস্যা না হয়। ‘হাওয়া’ বা ‘পরাণ’ পরের বছরের উৎসবেও থাকবে। আমরা ধন্যবাদ জানাই কলকাতার চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষকে যাঁরা বাংলাদেশি ছবিগুলির ব্যপারে এত আগ্রহ দেখাচ্ছেন,’’ বলছেন রঞ্জন।