(বাঁ দিক থেকে) ‘লক্ষ্মী বম্ব’ ছবির দৃশ্য; (উপরে) ‘লুডো’র দৃশ্য; (নীচে) ‘ঘুমকেতু’ ছবির দৃশ্য; (ডান দিকে) অমিতাভ।
প্রথমে অক্ষয়কুমার, তারপর অমিতাভ বচ্চন... বড় তারকাদের পরপর ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা চলছে অনলাইনে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের জন্য এটি নিঃসন্দেহে বড় অ্যাচিভমেন্ট। কিন্তু সিঙ্গল স্ক্রিন মালিক, এগজ়িবিটর, ডিস্ট্রিবিউটর, মাল্টিপ্লেক্স মালিকেরা এই ট্রেন্ডে আতঙ্কে ভুগছেন। লকডাউনের জেরে সিনেমা হল বন্ধ। স্বাভাবিক ভাবেই এঁরা বড় ক্ষতির সম্মুখীন। আর এ ভাবে ওটিটি প্রিমিয়ার হতে থাকলে, হল খোলার পরেও অবস্থা বদলাবে না বলেই মনে করছেন এঁরা।
অক্ষয়ের ছবি ‘লক্ষ্মী বম্ব’-এর অনলাইন রিলিজ় নিশ্চিত। ছবিটি ৯০ কোটি টাকায় ডিজ়নি প্লাস হটস্টার কিনেছে বলে খবর। অমিতাভ বচ্চনের নতুন ছবি ‘ঝুন্ড’ও ওটিটি রিলিজ় হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। ‘সাইরাট’খ্যাত পরিচালক নাগরাজ মঞ্জুলের স্পোর্টস বায়োগ্রাফিকাল ড্রামা ‘ঝুন্ড’ মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল ৮ মে। অল্প বাজেটের হওয়ায়, অনলাইন রিলিজ়ের পরিকল্পনা করেছেন নির্মাতারা। অ্যামাজ়ন, নেটফ্লিক্সের সঙ্গে কথা চলছে ছবির অন্যতম প্রযোজক ভূষণ কুমারের। ভূষণের হাতে আরও কয়েকটি ছবি রয়েছে। অনুরাগ বসুর পরিচালনায় ‘লুডো’, যেখানে অভিষেক বচ্চন, রাজকুমার রাও, ফতিমা সানা শেখ রয়েছেন। কয়েকটি ছবি প্যাকেজ করে অনলাইন রিলিজ় করিয়ে, দুর্দিনে কিছু টাকা ঘরে তুলতে চাইছে টি-সিরিজ়। অমিতাভ বচ্চনের আরও একটি ছবি ‘গুলাবো সিতাবো’ ওটিটি প্রিমিয়ার হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিছু দিন আগেই এই ছবির পরিচালক সুজিত সরকার জানিয়েছিলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে জোর খবর, ‘লক্ষ্মী বম্ব’, ‘ঝুন্ড’, ‘গুলাবো সিতাবো’, ‘লুডো’ এবং বিদ্যা বালনের ‘শকুন্তলা দেবী’র অনলাইন রিলিজ় নাকি নিশ্চিত। কিন্তু ছবিগুলির অভিনেতা-নির্মাতা কেউই সরাসরি এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। প্রযোজক শাবিনা খানের সঙ্গে ঝামেলার জেরে অক্ষয় বিষয়টি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু তিনি হলেন বর্তমান ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম ভরসার জায়গা। তাই অক্ষয়ের ছবি ওটিটিতে আসার ফলে, বাকিরাও সে পথে হাঁটার সাহস দেখাচ্ছেন। গত শনিবার ঘোষণা হয়, নওয়াজ়উদ্দিন সিদ্দিকির ‘ঘুমকেতু’ জ়ি ফাইভে প্রিমিয়ার হবে। সোনি পিকচার্স এবং ফ্যান্টমের প্রযোজনায় তৈরি এই ছবিটি কিন্তু বড় পর্দায় মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। লকডাউনের জেরে এই প্রথম সিনেমা হল রিলিজ়ের জন্য প্রস্তুত কোনও ছবি, অনলাইনে দেওয়ার অফিশিয়াল ঘোষণা হল।
এই ট্রেন্ড নিয়ে সিনেমা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য গোষ্ঠীরা আপত্তি জানাচ্ছে। কোনও ছবি অনলাইন রিলিজ় হওয়া মানে সরাসরি নির্মাতা এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় সিনেমা ব্যবস্থায় এগজ়িবিটর, ডিস্ট্রিবিউটদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। ইম্পার (ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশন) এগজ়িবিটর শাখার প্রধান রতন সাহা জানালেন, ওটিটি রিলিজ়ের বিষয়ে গত ৬ মে এগজ়িবিটরদের একটি বৈঠক হয়। অনলাইনে ছবির রিলিজ় নিয়ে তাঁদের আপত্তির কথা চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীকে এবং মাল্টিপ্লেক্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার প্রেসিডেন্টকে। এগজ়িবিটর শতদীপ সাহার কথায়, ‘‘যে ছবিগুলো অনলাইনে আসছে, সেগুলো ছোট বাজেটের হলেও, আলাদা দর্শক আছে। এ ভাবে ওটিটি রিলিজ় হতে থাকলে সিনেমা হল খুললেও আমাদের লাভ হবে না।’’ তবে কলকাতার আর এক হল মালিক নবীন চৌখানির মতে, ‘‘আমরা বড়জোর অনুরোধ করতে পারি। এ দিকে প্রযোজককেও ব্যবসা করতে হবে। ওটিটিতে ছবি দিলে দর্শক দেখছেন, প্রযোজকের ঘরে টাকা আসছে। সিনেমা হল খুললে, সব কিছু স্বাভাবিক হলে তাঁরা নিশ্চিত ভাবে বড় পর্দাকেই প্রাধান্য দেবেন।’’
আরও পড়ুন: সলমনের রোম্যান্স
তবে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রির ছবি অন্য রকম। দক্ষিণী তারকা সূর্য তাঁর প্রযোজিত ছবি ‘পোন মগল ভন্ডল’ অনলাইন রিলিজ়ের ঘোষণা করেছিলেন। যেখানে তাঁর স্ত্রী জ্যোতিকা অভিনয় করেছেন। তার পরেই তামিলনাড়ুর থিয়েটার এবং মাল্টিপ্লেক্স অ্যাসোসিয়েশন সূর্যকে হুমকি দেয়, ভবিষ্যতে তাঁর ছবি সিনেমা হলে দেখানো হবে না। অন্য দিকে ‘কেজিএফ চ্যাপ্টার টু’ অনলাইনে আসবে বলেও শোনা যাচ্ছে। দক্ষিণে ওটিটি রিলিজ় নিয়ে আপত্তি এসেছে দর্শকের মধ্য থেকেও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভক্তরা অক্ষয়কুমারকে অনুরোধ করেছেন, তাঁরা বড় পর্দাতেই সুপারস্টারের ছবি দেখতে চান। অক্ষয়ের চুপ থাকার সেটাও নাকি একটা কারণ।
তবে প্রযোজক এবং হল মালিকদের এই চাপানউতোর সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে কি আরও বেশি সঙ্কটে ফেলে দিচ্ছে? সে প্রশ্নও কিন্তু উঠছে।
আরও পড়ুন: শব্দ ব্রহ্ম নয়