Anupam Roy

ছবির গান ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট গানে ইউটিউবে ভিউজ়ের তারতম্যে কেন?

প্রশ্ন ওঠে, টলিউডের সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে লাইক ও ভিউজ় কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:১৩
Share:

অনুপম, সোমলতা, রূপম

গত মাসে ইউটিউবে ‘লড়াই’ নামে সিঙ্গল রিলিজ় করেছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড ইউফোরিয়া। করোনা মোকাবিলায় কঠিন লড়াই যে জারি, সেটা ছিল তার বিষয়বস্তু। গানটি রিলিজ়ের দু’সপ্তাহ পরে তাতে ভিউজ় ছিল ৬৪ হাজার এবং লাইকের সংখ্যা ৭১০০। সংখ্যাতত্ত্বের এই হাল দেখে ব্যান্ডের লিড গায়ক পলাশ সেন ইউটিউবের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনেন। পলাশের মতে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট গান ইউটিউব সে ভাবে প্রোমোট করে না। দ্বিতীয়ত, এই সিস্টেম শিল্পীদের বাধ্য করছে নকল ভিউজ় কিনতে। পলাশের অভিযোগের আগেই র্যাপার বাদশার লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ইউটিউবে নকল ভিউজ় কেনা ছিল শিরোনামে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন ওঠে, টলিউডের সঙ্গীতশিল্পীদের কাছে লাইক ও ভিউজ় কতটা গুরুত্বপূর্ণ? তাঁদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে ইউটিউবের ভূমিকাই বা কতখানি? বিশেষত করোনা-পরবর্তী সময়ে ই-কনসার্ট, ইউটিউবই যখন শ্রোতাদের কাছে পৌঁছনোর একমাত্র মাধ্যম।

টলিউডে শিল্পী অনুপম রায়, রূপম ইসলাম এবং সোমলতা আচার্য চৌধুরী একমত, ছবির গানের সঙ্গে ইন্ডিপেন্ডেন্ট গানের তুলনা চলে না। কারণ ছবির গানের প্রচারের পিছনে একটি প্রোডাকশন হাউস যা খরচ করে, তা একা শিল্পীর পক্ষে সম্ভব নয়। এবং প্রচারের নিরিখে দু’টি জ়ঁরের গানের মধ্যে ভিউজ়ের বৈষম্য তৈরি হয়। অনুপম যোগ করলেন, ‘‘ছবির গান বড় মেনুর মতো। নায়ক-নায়িকা বা পরিচালকের জন্যও অনেকে গানটা দেখেন। ফলে ভিউজ় বাড়ে।’’

Advertisement

ভিউজ়ের ভাগ

ইউটিউবে দু’রকম ভিউজ় হয়। অর্গ্যানিক অর্থাৎ যেখানে আপলোডার ভিউজ় বাড়ানোর জন্য কিছুই করেন না। ইনঅর্গ্যানিক ভিউজ় হল বিজ্ঞাপন দিয়ে বুস্ট করা। অর্থাৎ কোনও বিশেষ জায়গার টার্গেট অডিয়েন্সের কাছে পৌঁছনোর জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে কনটেন্টের দৃশ্যমানতা বাড়ানো। এটি কিন্তু অবৈধ নয়।

ভিউজ়ের হিসেবনিকেশ

সোমলতার চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা এখনও এক লক্ষ পেরোয়নি। তবে তাঁর বিভিন্ন গানে সর্বনিম্ন ভিউজ় ৪০ হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ‘‘আমার মতে রাতারাতি কিছু হয় না। তবে ভাল মানের কনটেন্ট নিয়মিত দিতে থাকলে চ্যানেলের জনপ্রিয়তা বাড়বেই। সংখ্যা নিয়ে মাথা ঘামালে শিল্পীসত্তা ধাক্কা খাবে,’’ বক্তব্য তাঁর।

অন্য দিকে অতিমারি আবহে ইউটিউবে একটু বেশি সময় দিতে পেরেছেন অনুপম। রিলিজ় করেছেন ১৯ মাত্রার এক্সপেরিমেন্টাল বাংলা গান ‘ভাল থেকো ১৯’। তাঁর কথায়, ‘‘ভাষা অনুযায়ী আমার গানে কম-বেশি ভিউজ় হয়। ইংরেজি গানে সবচেয়ে কম এবং হিন্দিতে সবচেয়ে বেশি। আবার আমার বাংলা ছবির গানের তুলনায় এসভিএফ থেকে রিলিজ় করা সিঙ্গল-এ বেশি ভিউজ় হয়েছে, এমনও উদাহরণ রয়েছে।’’ তাঁর মতে, বাণিজ্যিক লাভের চেয়েও শ্রোতাদের কাছে পৌঁছনোই এর উদ্দেশ্য।

বাংলায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট গানের গুরুত্ব

পলাশ সেনের অভিযোগ বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে খাটে না। কারণ রূপম ইসলামের ইউটিউব চ্যানেল ‘রূপম অ্যান্ড ফসিলস’-এর সাবস্ক্রাইবার এক লক্ষ ছাড়িয়েছে শুধু অরিজিনাল কনটেন্টের জোরে। ‘‘আমাদের সাবস্ক্রাইবার এক লক্ষ হওয়ার পরেও ইউটিউব থেকে ব্লু টিক (ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট) দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু জাতীয় ব্যান্ড ইউফোরিয়ার সাবস্ক্রাইবার এক লক্ষের কম থাকা সত্ত্বেও ওরা ব্লু টিক পেয়ে যায়। তাই ইউটিউবের কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল বলা কঠিন,’’ বলছিলেন গায়কের স্ত্রী রূপসা। রূপমের ইউটিউব চ্যানেল হ্যান্ডল করেন তিনিই। রূপসার মতে, ইউটিউবের বিভিন্ন সেমিনার অনুযায়ী, অনামী শিল্পী গাইলেও বাংলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতে সর্বাধিক ভিউজ় হয়। রূপমের অরিজিনাল ‘জানলা’ ন্যাশনাল ট্রেন্ডিংয়ে দু’ নম্বরে এসেছিল।

তিন শিল্পীই একমত যে, তাঁদের জনপ্রিয়তায় এই সংখ্যা বাড়তি ওজন যোগ করে না। কারণ তাঁরা ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু নবাগতদের কাছে ইউটিউব ভিউজ় নিঃসন্দেহে একটি ফ্যাক্টর। ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, ‘টেকো’ ছবির গায়ক দেবদীপ মুখোপাধ্যায়ের অরিজিনাল ‘হয়নি আলাপ’ আড়াই মাসে দশ লক্ষ ভিউজ় পেয়েছিল। শিল্পীর কথায়, ‘‘ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিতি বাড়াতে ওই সংখ্যা হেল্প করেছিল।’’

অতিমারির আগে ইউটিউবের ভিউজ় শিল্পীদের শো পাওয়ায় প্রভাব ফেলত না। সোমলতার কথায়, ‘‘শ্রোতাদের ফোনে বা ট্যাবে থাকলে, সেটা বাড়তি মাইলেজ দেয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement