বিক্রম চট্টোপাধ্যায়।
বদলাচ্ছেন বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। ধারাবাহিকে বিরতি থেকে ওয়েব সিরিজে অভিনয়, বিয়ে নিয়ে তিনি অকপট আনন্দবাজার ডিজিটালের সামনে।
‘তানসেনের তানপুরা’ দেখার পর প্রুচুর মানুষ রেগে গিয়েছিলেন আপনার ওপর। কেন?
বিক্রম: না আমার ওপর আলাদা করে রেগে নেই কেউ। বহু দর্শকের ‘তানসেনের তানপুরা’ এতটাই ভাল লেগেছিল যে গল্পের শেষে তানসেনের তানপুরা কোথায় আছে? সেটা জানা গেল না বলে তারা রেগে গিয়েছিল। তবে এখন আমার সমস্ত দর্শককে জানাতে চাই, ‘তানসেনের তানপুরা’-র ২ সিজনে সকলে দেখতে পাবেন কোথায় আছে তানপুরা! অর্থাৎ রহস্যের সমাধান হবে।
আপনিও কেমন রহস্য হয়ে থাকেন!
বিক্রম: মানে?
পার্টিতে কম দেখা যায়, সদ্য ইনস্টায় দেখছি ছবি পোস্ট করছেন। সাক্ষাৎকার এড়িয়ে যান। কেন বলুন তো?
বিক্রম: দেখুন আমি নিজের কথা নিজে কম বলতে পারতাম। হ্যাঁ এটা অতীত। এখন কিন্তু বদলাচ্ছি। আগে তো আমার মনে হত ইনস্টাগ্রামে রোজ নিজের ছবি পোস্ট করে কী করব! এখন সেখান থেকে সরে এসে মনে হয়েছে ইনস্টাগ্রামে থাকি। তবে সারাক্ষণ ছবি দেওয়ার চেয়ে আজও মনে হয় ওই সময়ে অভিনয়ের ওয়ার্কশপ করা ঢের ভাল।
কোনও পার্টিতে গিয়ে সৃজিত মুখোপাধ্যায়কে বলতে পারবেন, ‘আমাকে আপনার ছবিতে কাস্ট করুন’?
বিক্রম: হ্যাঁ। এখন পারব। সামনে গিয়ে পরিচালক, প্রযোজককে বলি তো আমি 'আপনার ছবিতে অভিনয় করতে চাই আমাকে কাজ দিন'।
বিক্রম অতীত মুছে দিচ্ছেন। বদলে যাচ্ছেন?
বিক্রম: জীবন বদলে দিয়েছে। এখন যেমন ধারাবাহিক থেকে বিরতি নিয়ে ছবিতে, ওয়েব সিরিজে কাজ করার কথা ভাবছি। আগে তো একটানা ধারাবাহিক করে যাচ্ছিলাম।
ধারাবাহিকই তো আপনাকে খ্যাতি দিয়েছে...
বিক্রম: আমিও মানি সেটা। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে শুধু ধারাবাহিকে কাজ করলে আমি গ্রো করতে পারব না।
সোলাঙ্কি আমার খুব ভাল বন্ধু ।
কিন্তু ধারাবাহিকের জন্য আজও আপনি ‘ফাগুন বউ’, ‘ইচ্ছে নদী’-র নায়ক। অগুণতি ভক্ত আপনার…
বিক্রম: আমার দর্শকরা, আমার ধারাবাহিকের লেখক লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, আমার অভিনেতা বন্ধুরা আমায় জনপ্রিয় করেছে। আমার মনে আছে ‘ইচ্ছে নদী’ যখন শেষ হয় তাঁর পরেও ফেসবুকে একটা ফ্যান পেজে ওই গল্পটার পরবর্তী অংশ দর্শকরা নিজেরাই লিখতেন। লিখেই যেতেন... আমি তো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম দর্শকদের এই ইনভলমেন্ট দেখে।
‘ইচ্ছে নদী’-র প্রসঙ্গ উঠল যখন তখন বলুন তো আজও বলা হয় আপনি সোলাঙ্কির সঙ্গে লুকিয়ে প্রেম করেন!
বিক্রম: (হাসি) ধুর! যত গুজব। এই তো ডিসেম্বরে সোলাঙ্কির বর আসবে। আমি মিট করব ওদের। এ বার ভেবেছি একসঙ্গে একটা ছবিও তুলব। পোস্ট করব।মানুষের ভুল ধারণা অন্তত দূর হবে।
আপনার অনুরাগীরা তো আজও আপনাকে ‘ফাগুন বউ’-এর 'অয়নদীপ' বা ‘ইচ্ছে নদী’-র রোম্যান্টিক অনুরাগ বন্দ্যোপাধ্যায় ভাবে। আপনাকে ক্রিমিনালের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখলে তারা মানবে?
বিক্রম: এই একটা সমস্যা তো থাকেই। টাইপকাস্ট হয়ে যাওয়ার সমস্যা। ধারাবাহিকে টানা অভিনয় করলে হয় এমন। লোকে ওই চরিত্রর বাইরে আর কিছু ভাবতে পারে না।পরিচালকদেরও হয়তো ছবিতে কাস্ট করার সময় আমার নাম মনে পড়ে না। সকলেই ভাবে আমি ধারাবাহিকে কাজ করছি। ছবিতে কি করে কাজ করব? এই কারণেই কিছু দিন ধারাবাহিক থেকে নিজেকে বাইরে রেখেছি। তবে এই দর্শকরাই বাংলায় প্রথম মিউজিকাল থ্রিলার 'তানসেনের তানপুরা'-য় আমার চরিত্রকে ভালবেসেছে। জয়দা, শ্রীজাতদা-র সুর আর কথা এত জনপ্রিয় হয়েছে। আসলে চিত্রনাট্যটা খুব ভাল। ওটা শোনার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে মনি স্যারকে আমি হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। তবে এটাও ঠিক, এখনও দেখি মানুষ ‘ফাগুন বউ’ এর 'অয়নদীপ'ভাবে আমায়।
আর সেই সঙ্গে ভাবে ঐন্দ্রিলার সঙ্গে আপনার প্রেম আছে!
বিক্রম: ধুর! ওকে সেই ‘সাত পাকে বাধা’ থেকে চিনি। ও কত ছোট তখন! আমার বোনের মতো ঐন্দ্রিলা।একটা সময় ছিল যখন ওর মা আমার সঙ্গে ওকে বাইরে ছাড়ত। আর আমি ওকে বাইরে নিয়ে গিয়ে অঙ্কুশের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতাম। সেখান থেকেই ওদের প্রেম। আর কী বলি বলুন তো!
অঙ্কুশের সঙ্গে ঐন্দ্রিলাকে দেখা করিয়ে দিতাম। সেখান থেকেই ওদের প্রেম।
জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঝড় যাচ্ছে আপনার। বার বার একজন অভিনেতাকে আসামীর কাঠগোড়ায় দাঁড়াতে হয়। কী ভাবে লড়ছেন?
বিক্রম: লম্বা ঝড়। পারছি লড়তে কারণ আমার সঙ্গে পরিবার আছে। শেষ তো হয়নি, ওই ঝড়টা আমার জীবনের ওপর দিয়ে আজও চলেছে। যখন ঝড়ের গতি বেশি ছিল আমি চুপ করে গিয়েছিলাম। এক্কেবারে চুপ! ( কিছুক্ষণ থেমে) তবে এই সময় আমায় বোঝাচ্ছে পরিবারের গুরুত্ব! আমি বুঝেছি আমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কত কম সময় কাটিয়েছি। অথচ যাদের সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছি তারা বিপদের দিনে পাশে থাকেনি। অঙ্কুশ- ঐন্দ্রিলা, সোলাঙ্কি, টুম্পাদি (সুদীপ্তা চক্রবর্তী) অর্কের মতো বন্ধু অবশ্যই আমার পাশে ছিল। লীনা গঙ্গোপাধ্যায় মায়ের মতো হাতটা ধরেছিলেন। এরা না থাকলে যে কী হত! বিপদ চিনিয়েছে কে আসল বন্ধু আমার! আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারে ওই সময়ে আমার সঙ্গে যা যা হয়েছিল তা দেখে আমার মা আর বোন খুব যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। এটা জীবনে ভুলব না। যে কারণেই হোক আমার মা-কে তো আমায় এই ঝড়ের মধ্যে, অন্য রকম ভাবে দেখতে হল! মা আর বোনকে সামলাতে হয়েছে অনেক! জানি না এই যন্ত্রণা কতদিন চলবে! কবে এর থেকে মুক্তি পাবো।
এই অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়েই ইন্ডাস্ট্রির দৌড়ে পিছিয়ে গেলেন?
বিক্রম: জানি না। তবে ‘এলার চার অধ্যায়’ করার পরে মনে হয়েছিল আজ বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় থাকলে তাঁকে গিয়ে বলতাম আমায় নিয়ে ছবি কর। ‘সাহেব বিবি গোলাম’ এ যে চরিত্র করেছিলাম সকলের ভাল লেগেছিল।
অনির্বাণ ভট্টাচার্যকে দেখে হিংসে হয় না?
বিক্রম: অনির্বাণ এত ভাল অভিনেতা। সেই জোরে ইন্ডাস্ট্রিতে বড় একটা জায়গা করে নিয়েছে। হিংসে নয়। ওর অভিনয় আমায় উৎসাহ দেয়। আমিও নিজেকে নিয়ে ঘষা মাজা করতে থাকি। সুযোগের অপেক্ষায় থাকি ভাল কাজ করার।
আর প্রেম? বিয়ে?
বিক্রম: দেখুন এরকম বলছি না যে বিয়ে আমি করব না। বিয়ে করব কোনও দিন। তবে এখন বিয়ের সময় নয়। আমার লিগাল ইস্যু চলছে সেটা মিটুক। আমার জীবনে সঙ্গী থাকবে সেটা আমিও চাই। যদি মনে হয় এমন কেউ এসেছে তার সঙ্গে আমি ত নিশ্চয় থাকব। বিয়েও করব।