সন্দীপ্তা সেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
১০ বছর টানা সিরিয়ালে অভিনয়ের পর অভিনেত্রী সন্দীপ্তা সেন সচেতন ভাবে সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আপাতত ছোট পর্দা থেকে বিরতি নেবেন। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। প্রতি দিন টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে দেখা না গেলেও মুঠোফোনে ইদানীং মাঝেমাঝেই দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কখনও তিনি রাকা, তো কখনও আবার অপর্ণা। তবে স্টুডিয়োপাড়ায় গুঞ্জন, এ সবই নাকি হচ্ছে প্রযোজক সংস্থার সঙ্গে নায়িকার ব্যক্তিগত সমীকরণের কৃপায়। সত্যি কি? প্রযোজনা সংস্থার ১৮তলার ঘরে আনন্দবাজার অনলাইনকে স্পষ্ট উত্তর সন্দীপ্তার।
প্রশ্ন: আপনি আর সিরিয়াল তা হলে একেবারেই করতে চান না?
সন্দীপ্তা: সব সময় আমি এটাই বলে এসেছি যে, সিরিয়াল ছাড়ছি না। প্রথম দিন থেকে বলে যাচ্ছি যে, বিরতি নিচ্ছি। এত বছর সিরিয়ালে কাজ করার পর নিজেকে নিয়ে পরীক্ষা করা উচিত। ঠিক সেই সময়ই ‘ওটিটি’ প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের কাজ শুরুও হয়। তখনই অনুভব করেছিলাম চেনা গণ্ডি থেকে নিজেকে বার করে আনতে হবে।
সন্দীপ্তা সেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রশ্ন: যেমন আশা করেছিলেন তেমনই চরিত্র পাচ্ছেন?
সন্দীপ্তা: হ্যাঁ, আমি সত্যিই খুশি। এখনও অবধি সিরিজ়ে যে চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছি, দর্শকের থেকে অনেক ভালবাসা পেয়েছি। অর্থাৎ আমি যে কোনও ভুল চরিত্র নির্বাচন করিনি সেটা ভেবে ভাল লাগে। অনেকে হয়তো দুঃখ করছেন, কেন সিরিয়ালে দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের বলব, দয়া করে আমার সিরিজ়গুলোও দেখুন।
প্রশ্ন: ‘নষ্টনীড়’ সিরিজ়ে তো আপনার লুক নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। নিজেকে দেখতে ভাল লেগেছে?
সন্দীপ্তা: আমি নিজে সাজগোজ নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা করতে তেমন ভাবে ভালবাসি না। আসলে সাজগোজ নিয়ে খুব একটা ভাবিও না। আর এই শাড়ি পরা, খোপা বাঁধা লুকটা সম্পূর্ণই পরিচালক অদিতি রায় ও টিমের ভাবনা।
প্রশ্ন: একটা সময় ছবির পরিচালকেরা মনে করতেন, সিরিয়ালে কোনও নায়িকার মুখ বেশি দেখা গেলে তাঁকে আর সিনেমায় নিয়ে লাভ হবে না। ইদানীং সিরিজ়ের ক্ষেত্রেও তেমন ধারণা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আপনার যাত্রাটা কঠিন হয়ে যাবে না তো?
সন্দীপ্তা: একটা মজার কথা মনে পড়ছে। আমার প্রথম সিরিয়াল ‘দুর্গা’। প্রথম কাজেই দারুণ প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম দর্শকের। তখন অনেকে বলেছিলেন, “প্রথম সিরিয়াল এত হিট হয়ে গেল তো, দেখবি তোর পরের কাজ পেতে অসুবিধা হবে। তোকে দুর্গার বাইরে কেউ ভাবতে পারবে না।” কিন্তু তার ছ’মাস পরেই ‘টাপুর টুপুর’ সিরিয়ালের প্রোমো সম্প্রচারিত হয়। সেটাও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ফলে এই ধারণাগুলো আমার খুবই ভ্রান্ত বলে মনে হয়।
প্রশ্ন: আপনার নতুন সিরিজ় ‘নষ্টনীড়’-এর গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সমাজের একটি স্পর্শকাতর বিষয়। বিভিন্ন পেশায় মেয়েদের অনেক সময়ই এমন ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। আপনি নিজে এক জন মনোবিদও। এ বিষয়ে আপনার অবস্থান?
সন্দীপ্তা: প্রথমে আমি বলতে চাই ‘মিটু’ বিষয়টা অনেকে অপব্যবহারও করেন। তাই এই বিষয়ের গুরুত্ব অনেকটা কমে যাচ্ছে। তাই যাঁরা ‘মিটু’ অভিযানকে মজার ছলে নিয়েছেন বা অপব্যবহার করছেন তাঁদের উদ্দেশে বলি, এই বিষয়গুলোকে হালকা ভাবে না নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। আমি নিজে প্রত্যক্ষ ভাবে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন না হলেও এমন ঘটনার কথা অনেকের থেকে শুনেছি।
সন্দীপ্তা সেন ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রশ্ন: এ ক্ষেত্রে তো টলিউডেরও বেশ বদনাম আছে। ইন্ডাস্ট্রিতে ১৫ বছরে এমন কোনও অভিজ্ঞতা হয়েছে? এমন কিছু ঘটতে দেখেছেন?
সন্দীপ্তা: ঈশ্বরের আশীর্বাদে এই ১৫ বছরে আমায় কেউ খারাপ ইঙ্গিত পর্যন্ত দেননি। সেটা আমার ভাগ্য। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, ইন্ডাস্ট্রিতে আর কারও সঙ্গে এমনটা হয়নি। আর এই ঘটনা সর্বত্র ঘটে। তবে কাছের কারও থেকে এমনটা শুনিনি। তাই কিছু বলতে চাই না।
প্রশ্ন: অপর্ণার চরিত্র থেকে আপনার কী প্রাপ্তি হল?
সন্দীপ্তা: অপর্ণা এমফিল-এর পড়া মাঝরাস্তায় ছেড়ে দেয়। কারণ ওর ভাল লাগত না। ও সেলাই করতে ভালবাসত। তাই একটা বুটিক খুলে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অপর্ণা একটা জায়গায় বলে, জীবনের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত আমার নিজের নেওয়া। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরই নেওয়া উচিত। অপর্ণার থেকে আমি এটা শিখেছি।
প্রশ্ন: ইদানীং আপনার রিল দেখে তো অনেক সমালোচনা হচ্ছে, জানেন কি?
সন্দীপ্তা: না, জানি না তো। আসলে আমাদের নিয়ে সমালোচনা করার জন্যই তো সবাই বসে থাকেন। যাই হোক রিল নিয়ে আবার কী কথা হল?
প্রশ্ন: আসলে আপনার ভাবমূর্তির সঙ্গে রিল ভিডিয়োটা অনেকের বেমানান বলে মনে হয়।
সন্দীপ্তা: যাঁরা আমায় নিয়ে এত ভেবেছেন, তাঁদের অনেক ধন্যবাদ। তবে রিল করা মানে খারাপ সেটা ওঁদের কে বলল? আমি নাচ করতে ছোট থেকে ভালবাসি। এখন খুব একটা করা হয় না। রিলের মাধ্যমে নিজের নাচটা যেন ফিরে পাচ্ছি। আর ঘুরতে গেলে রিল তো করবই। কত মানুষ তো এখন অপেক্ষা করে থাকেন রিল দেখার জন্য। আর কেউ কেউ তো খারাপ বলবেই। সবাই ভাল বললে আমার মনে হয় কিছু একটা ভুল করছি। আমি চাই ভাল কথার পাশাপাশি মানুষ খারাপ কথাও বলুক। তবে যাঁরা নোংরা মন্তব্য করেন সেটা পড়ে খারাপ লাগে। আমি অবশ্য অনেককে উত্তর দিয়ে দিই।
প্রশ্ন: স্টুডিয়োপাড়ায় শোনা যাচ্ছে, আপনি এত সিরিজ়ে সুযোগ পাচ্ছেন প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে ব্যক্তিগত সমীকরণের কারণে...।
সন্দীপ্তা: আমি যখন স্টার জলসায় টানা চারটে সিরিয়াল করেছিলাম, তখন কথা উঠেছিল চ্যানেলে নাকি আমার শেয়ার আছে। ওখানে অভিনেতা অভিনেত্রীদের বাছা হয় আমার কথার ভিত্তিতেই। সেটা নিয়ে খুব কথা হত। খুব হাসি পেয়েছিল। ‘হইচই’-তে কাজ করা নিয়ে বলা হচ্ছে। আচ্ছা, এর আগে তো আমি ‘জ়ি ফাইভ’-এ কাজ করেছি। আর এখানে বছরে একটা করে কাজ করেছি। এত বছরের কেরিয়ারে আমি এই কাজগুলো পাওয়ার যোগ্য নয় কি? শুধুই সমীকরণ দরকার হয়! আমি বুঝি, লোকে কিছু না কিছু বলবেই। হয়তো এটাই তাদের প্রকৃতি, হয়তো হিংসা। তবে যত কথা হবে, তত বুঝব, সঠিক পথে আছি। আরও আলোচনা হোক।
প্রশ্ন: আপনার তো বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছে? আড়ালে রাখছেন কেন সুখবরটা?
সন্দীপ্তা: আমিও শুনলাম (হাসি)। তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছে। আমি তো জায়গাটাও জানতে চাই। কোথায় হবে বিয়েটা? যাঁরা এই কথা রটাচ্ছেন, তাঁরা আমাদের বিয়ের খরচটাও দিন না। তা হলে আমাদের আর খরচ হবে না। সেই টাকায় প্রচুর ঘুরতে পারব। আমি যত দূর জানি, আমাদের কোনও তারিখ ঠিক হয়নি। বিয়ে তো করব নিশ্চয়ই। এখনই নয়। হাতে কিছু কাজ আছে। তারিখ ঠিক হলে আড়ালে রাখব না কখনও।