বলিউড অভিনেত্রী সান্যা মলহোত্র। ছবি: সংগৃহীত।
বলিউডে যাত্রা শুরু করেছিলেন কুস্তির রিং থেকে। আমির খানের মতো তাবড় তারকার মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করে বলিউডে আত্মপ্রকাশ তাঁর। গত সাত বছরে যদিও সেই তারকার ছায়া থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে সদর্পে প্রতিষ্ঠা করেছেন অভিনেত্রী সান্যা মলহোত্র। একের পর এক ভরসাযোগ্য পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তৈরি করেছেন নিজস্ব দর্শক। নতুন প্রজন্মের অন্যতম নজরকাড়া অভিনেত্রী তিনি। সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে তাঁর ছবি ‘কাঁঠাল— আ জ্যাকফ্রুট মিস্ট্রি’। সংশ্লিষ্ট ওটিটি প্ল্যাটফর্মে গত সপ্তাহ খানেক ধরেই শীর্ষে রয়েছে এই ছবি। সান্যার এর পরের গন্তব্য ‘জওয়ান’। সেই ট্রেনে চড়ার আগে আনন্দবাজার অনলাইনকে সময় দিলেন সান্যা মলহোত্র।
প্রশ্ন: ‘পাগলেইট’, ‘মীনাক্ষি সুন্দরেশ্বর’-এর পরে ‘কাঁঠাল’। নেটফ্লিক্সে এক নম্বরে থাকার হ্যাটট্রিক হয়ে গেল! কেমন লাগছে?
সান্যা: ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, বিশেষত নেটফ্লিক্স আমার জন্য খুব লাকি। সব ছবিই দর্শকের কাছ থেকে বেশ ভাল সাড়া পেয়েছে। দর্শক থেকে ইন্ডাস্ট্রির ছবি নির্মাতারা আমাকে অভিনেত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছেন, আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমি নিজে সেই ছবিগুলোতে কাজ করে ভীষণ খুশি। এক নম্বর হতে কে না চায়! দর্শকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন: ‘কাঁঠাল— আ জ্যাকফ্রুট মিস্ট্রি’ বেশ অন্য ধরনের একটা ছবি। কমেডি ঘরানার, তবে গল্পের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা রয়েছে। কী ভেবে ছবির জন্য রাজি হয়েছিলেন?
সান্যা: ‘কাঁঠাল’-এর চিত্রনাট্যটা শুনেই আমার বেশ আকর্ষণীয় লেগেছিল। এক জনের বাড়ি থেকে কাঁঠাল চুরি হয়ে যাচ্ছে, কাঁঠালচোরকে খুঁজতে হবে— ছবির মাধ্যমে এ রকম গল্প তো আগে তেমন ভাবে বলা হয়নি। এত তুচ্ছ একটা বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে এ রকম একটা রহস্য উদ্ঘাটন হবে, তা কেউ ভাবতে পারেন না! তার উপর ছবির চিত্রনাট্যকর অশোক মিশ্রের লেখা, পরিচালক যশোবর্ধন মিশ্রের এত সুন্দর করে গল্প বলার ক্ষমতা— সবটাই খুব মনে ধরেছিল আমার। পাশাপাশি, আমি বেশ অনেক দিন ধরেই একটা হালকা মেজাজের ছবি করতে চাইছিলাম, যেটা আমি নিজের পরিবারের সবার সঙ্গে বসে দেখতে পারব, উপভোগ করতে পারব। সব মিলিয়ে এই ছবি ছাড়তে চাইনি আমি।
প্রশ্ন: এই প্রথম আপনাকে পুলিশকর্মীর চরিত্রে দেখা গেল....
সান্যা: হ্যাঁ, এটা কিন্তু খুব ইন্টারেস্টিং। আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম। আসলে একটা ইউনিফর্ম পরলে তো কাঁধে একটা বাড়তি দায়িত্বও চলে আসে। এই চরিত্রে অভিনয় করার আগে আমি বেশ কিছু দিন গোয়ালিয়রে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে মিশেছি, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁদের জীবনযাপন, তাঁদের লড়াই, তাঁদের ব্যক্তিগত সুবিধা-অসুবিধা সব কিছু বোঝার চেষ্টা করেছি। এর আগে কখনও কোনও পুলিশকর্মীর সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়নি হয়নি। যে হেতু এই প্রথম পুলিশের উর্দি পরছি, আমি কিন্তু খুব এক্সাইটেড ছিলাম। এটা একটা ইচ্ছেপূরণের মতো।
প্রশ্ন: ‘কাঁঠাল’-এ বেশ কিছু অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে আপনাকে। এর পর তো ‘জওয়ান’ও আসছে!
সান্যা: ‘দঙ্গল’-এর সময়ে আমাকে চরিত্রের প্রয়োজনে কুস্তি শিখতে হয়েছিল। তবে ছবির কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিন্তু আমি ট্রেনিং বন্ধ করিনি। ক্রসফিট ট্রেনিং, কিকবক্সিং— এগুলো এখন আমার প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ। সেই কারণে আমাকে আলাদা করে কোনও ট্রেনিং করতে হয়নি। আমি যে কোনও ধরনের ছবির জন্য সব সময় প্রস্তুত। যে কোনও ধরনের! আমি তো সব ধরনের ছবিতে কাজ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি। প্রত্যেকটা ছবির ঘরানা আলাদা, তার প্রস্তুতি আলাদা। তবে নিজেকে যে কোনও সুযোগের জন্য তৈরি রাখাটা ভীষণ জরুরি বলে আমি মনে করি।
প্রশ্ন: ‘দঙ্গল’-এ কাজ করেছিলেন আমির খানের সঙ্গে। তার ৭ বছর পরে কাজ করছেন শাহরুখ খানের সঙ্গে। দু’জনেই ইন্ডাস্ট্রির দুই তাবড় তারকা। কেমন অভিজ্ঞতা?
সান্যা: এটা তো রীতিমতো স্বপ্নপূরণ! বাকেট লিস্টে ছিল এটা আমার, এত দিনে সেটায় টিক চিহ্ন পড়ল! আমি এ রকম একটা সুযোগ পেয়েই ভীষণ খুশি হয়েছি।
প্রশ্ন: ‘জওয়ান’ নিয়ে যদি কিছু বলেন....
সান্যা: ছবিতে অভিনয় করেছি, এটুকুই আপাতত বলতে পারব। আর কোনও কিছু বলা বারণ!
প্রশ্ন: আমির খানের সঙ্গে বলিউডে অভিষেক আপনার। তার পর ৭ বছর লাগল শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করতে। ইন্ডাস্ট্রিতে তথাকথিত বহিরাগত বলেই কি এতটা অপেক্ষা করতে হল?
সান্যা: আমি সব সময় মনে করি, কঠোর পরিশ্রমের কোনও বিকল্প নেই। আমি এখনও পর্যন্ত যা যা সুযোগ পেয়েছি, সব সময় নিজের ১০০ শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চ্যালেঞ্জ নিতে আমি কখনও পিছপা হইনি। শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করাটা আমার স্বপ্ন ছিল, এত দিনে সেটা সফল হয়েছে। তবে সেই স্বপ্নপূরণের জন্য আমাকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি যে, নিজের কমফোর্ট জ়োন থেকে না বেরোনো পর্যন্ত সাফল্য অর্জন করা যায় না। পাশাপাশি, আমি এখনও পর্যন্ত যা যা সুযোগ পেয়েছি, কোনও সুযোগকেই আমি হেলাফেলা করিনি। কোনও চরিত্র বা ছবিকে ছোট করে দেখিনি।
প্রশ্ন: নাচের মাধ্যমে বিনোদনের জগতে পা রেখেছিলেন। নাচ-কেন্দ্রিক কোনও ছবির করার পরিকল্পনা আছে ভবিষ্যতে?
সান্যা: আমি তো এ রকম একটা ছবি করার জন্য প্রার্থনা করছি। এটাও আমার বাকেট লিস্টের অন্যতম একটা ইচ্ছা। নাচ তো এমনিতেই আমার প্যাশন। আমি ছোটবেলায় এতই মুখচোরা ছিলাম যে কখনও কাউকে বলতেই পারিনি আমি অভিনেতা হতে চাই। আমি এ দিক থেকে ভীষণ ভাগ্যবতী যে আমি যখন স্বপ্নপূরণ করার জন্য দৌড়েছি, আমার মা-বাবা পাশে থেকেছেন। আমি আসলে অভিনেত্রী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য লম্বা রাস্তায় হেঁটেছি। আমি সব সময় মনে করতাম, আগে নিজেকে কোরিয়োগ্রাফার হিসাবে প্রতিষ্ঠা করব। তার পর আমি কারও নজরে পড়ব, তার পরে তিনি আমাকে ছবিতে অভিনয় করার প্রস্তাব দেবেন। সেটা হয়নি। তবে অভিনেত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে আমার প্ল্যান ‘বি’টাই সফল হয়েছে। এটাই আসলে প্ল্যান ‘এ’ হওয়া উচিত ছিল। এখন অভিনেত্রী হিসাবে আমি ক্যামেরার সামনেই নাচ করার সুযোগ পাই। আমি ভীষণ ভীষণ কৃতজ্ঞ।
প্রশ্ন: প্রেক্ষাগৃহ আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য তৈরি করে ফেলেছেন ইতিমধ্যেই। আগামী দিনের জন্য কী কী পরিকল্পনা রয়েছে?
সান্যা: ওটিটিতে ‘কাঁঠাল’ খুব ভাল সাড়া পেয়েছে। এর পর ‘জওয়ান’ আসছে। এই ছবিটা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে। তার পর ‘স্যাম বাহাদুর’ রয়েছে মেঘনা গুলজ়ারের। আপাতত এগুলো নিয়েই ব্যস্ত রয়েছি। দেখা যাক, এর পর কী কী সুযোগ আসে। ওটিটির জন্য তো এখন সুযোগের পরিধিটাই এখন বেশ বিস্তৃত। ছবি নির্মাতাদের কাছে একটা স্বাধীনতা আছে বিভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার। পাশাপাশি, অভিনেতারা নিজেদের চরিত্রের ধরন নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন। নতুন ধরনের গল্প বলার স্বাধীনতা থাকাটা ভীষণ জরুরি।
প্রশ্ন: গুরগাঁওয়ে নতুন বাড়ি কিনেছেন, তার জন্যও অভিনন্দন!
সান্যা: ধন্যবাদ! আমি এখন ওই বাড়িতেই বসে রয়েছি। ‘কাঁঠাল’ মুক্তি পাওয়ার পরে এখানে এসেছি পরিবারের সঙ্গে কিছু দিন সময় কাটাতে, আর আমার মুম্বইয়ে ফেরত যেতে ইচ্ছেই করছে না!