রণিতা দাস। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
গজ দাঁত, গালে মিষ্টি টোল পড়া নায়িকাকে প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে গিয়েছিল দর্শকের। তার পর একের পর এক সিরিয়ালে অভিনয় করেছেন। এককালে ইন্ডাস্ট্রিতে ‘বাহা’ নামেই পরিচিত ছিলেন রণিতা দাস। তার পর রিয়্যালিটি শো-এর মঞ্চে সঞ্চালনা করতেও তাঁকে দেখেছেন দর্শক। ১৪ বছরের যাত্রায় বহু চড়াই-উতরাই, বিতর্ক পার করেছেন। ছোট পর্দায় সফল অভিনেত্রীরা আজকাল সহজেই বড় পর্দায় পাড়ি দেন। কিন্তু রণিতার ক্ষেত্রে তা হয়নি। এত বছর পরেও বড় পর্দার সাফল্য তাঁর অধরা। তাতে কি তাঁর আক্ষেপ রয়েছে? উত্তরের খোঁজে আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: ১৪ বছর ইন্ডাস্ট্রিতে কাটিয়ে ফেলেছেন। যে লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, তা কি পূরণ হয়েছে?
রণিতা: আমি তেমন কিছু ভেবে অভিনয় যাত্রা শুরু করিনি কিন্তু। আমি কত্থক নাচ শিখতাম। নৃত্যশিল্পী হতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম নাচের স্কুল খুলব। তাই একটি নাচের রিয়্যালিটি শোয়ে যোগ দিয়েছিলাম। সবটাই কিন্তু কাকতালীয় ব্যাপার। এই শোয়ের পরেই যিশু দাশগুপ্ত আমায় প্রথম সিরিয়ালে অভিনয় করার সুযোগ দেন। সেটা অবশ্য তিন মাসের মাথায় বন্ধও হয়ে গিয়েছিল। তারও ছ’মাস পরে স্টার জলসা থেকে সুযোগ আসে ‘ধন্যি মেয়ে’র অডিশনের জন্য। আমি কিন্তু কোনওটাই পরিকল্পনা করে করিনি। তবে এটা তো সত্যি কথা যে, এই কাজটা করতে উপভোগ করি বলেই এত বছর টিকে আছি।
প্রশ্ন: প্রথম দিন থেকে পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছিলেন?
রণিতা: আমার খুব কিন্তু সমস্যা হয়নি। কারণ মা সব সময়ই প্রতিটা শুটিংয়ে গিয়ে বসে থাকতেন। করোনা পরিস্থিতির পর আমি মা-কে আসতে মানা করেছি। এখন আমার লোকজন আছেন, যাঁরা আসেন আমার সঙ্গে। পড়াশোনার চাপ ছিল আমার বাড়ি থেকে।
রণিতা দাস। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রশ্ন: মা সারা ক্ষণ যে শুটিংয়ে থাকতেন, এর মাঝে অভিনেতা সৌপ্তিক চক্রবর্তীর সঙ্গে প্রেমটা কী ভাবে হল?
রণিতা: আমি কিছু করলে মা সবার আগে বুঝতে পারে। আর আমি এ সব ক্ষেত্রে কারও কথা শুনি না। কিছু ঘটাতে হলে, তা করে ফেলি। তাই সেই সময় প্রেমটা ঘটে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: সৌপ্তিক আপনার প্রথম প্রেম?
রণিতা: না, তার আগে ছোটবেলায় প্রেম এসেছিল কিছু।
প্রশ্ন: আচ্ছা, আপনার আর সৌপ্তিকের সম্পর্কের প্রায় ১০ বছর হতে চলল...।
রণিতা: (প্রশ্ন শেষ না করতে দিয়েই) আমি না, এই মুহূর্তে প্রেম নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।
প্রশ্ন:কেন, ঝগড়া হয়েছে সৌপ্তিকের সঙ্গে?
রণিতা: আমি ঠিক করেছি ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে আর প্রকাশ্যে কিছু বলব না। এখন আমি শুধুই কাজে মন দিতে চাই। আপাতত শুধুই ‘মায়া’র মধ্যে আছি আমি। আর সম্পর্ক এক একটা সময় তৈরি হয়। সেটার একটা সময়সীমা থাকে। আমার মনে হয় কোনও কিছু সঠিক ভাবে না চললে সেটাকে টেনে লম্বা করার কোনও মানে নেই। সেটাকে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ জায়গায় রাখা উচিত। কারণ সেটা যত বাড়ানো হবে ততই তিক্ততা বাড়বে।
রণিতা দাস। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
প্রশ্ন: ‘ইষ্টি কুটুম’ সিরিয়াল তো আপনার কেরিয়ারকে অনেকটাই গতি দিয়েছিল। মাঝপথে ছেড়ে দেওয়ার জন্য কি আক্ষেপ হয়?
রণিতা: বাহা চরিত্রটা আমার জীবনের এমন একটা অতীত, যেখান থেকে পেয়েছি অনেক কিছু। ‘ইষ্টি কুটুম’ আমার জীবনের অনন্য সম্পদ। জীবনে যখন ভাল কিছু আসে, তার বিনিময়ে অনেক কিছু দিতে হয়। সেই সময় আমি শারীরিক ভাবে সুস্থ ছিলাম না। অনেকেই জানেন না, আমার শিরদাঁড়ায় সমস্যা হয়েছিল। ওজন বেড়ে গিয়েছিল। তিন-চার বছর আমার নাচ বন্ধ ছিল। তখন বুঝতে পারছিলাম না, কেরিয়ারকে গুরুত্ব দেব, না কি নিজের স্বাস্থ্যকে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম চরিত্রটা থেকে সরে আসার। সুস্থ হওয়ার জন্য বহু সময় দিতে হয়েছে নিজেকে। এখনও বছরে দুটো করে সিরিয়ালের সুযোগ আসে আমার কাছে।
প্রশ্ন: কেন করছেন না?
রণিতা: সিরিয়ালের যে চাপটা আছে, সেটা নেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার আর নেই। ছবির উপর মন দিচ্ছি। সিরিজ়ও করছি। এখন আবার আমার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থাও আছে। তাই সিরিয়ালে অভিনয়ের সুযোগ এলেই নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি সেই চাপটা নেওয়ার মতো জায়গায় আছি তো! ১৪ ঘণ্টা টানা কাজ করার কথা ভাবলে ভয় পাই।
প্রশ্ন: কখনও মনে হয় অনেকটা পিছিয়ে পড়লেন?
রণিতা: আমি সব সময় দূরেরটা ভাবি। নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছি। হয়তো কিছুটা ধীর গতিতে হচ্ছে। যেটা এক বছর আগে হওয়া উচিত ছিল, সেটা দেরিতে হচ্ছে। কিন্তু ঠিক চলছে। তাই জীবনে কোনও আক্ষেপ নেই।
প্রশ্ন: অনেকেই একটা সিরিয়ালের পর বাংলা সিনেমার নায়িকা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ১৪ বছরের কেরিয়ারে এখনও তা অধরা।
রণিতা: খারাপ লাগে না আমার। আমি ছোট পর্দায় যে সাফল্য পেয়েছি, অনেকে আবার সেটা পায়নি। মাচা করার সময় জনপ্রিয়তার সেই স্বাদ পেয়েছি। এ বার আমি বড় পর্দায় সেই সাফল্যের স্বাদ পেতে চাই। সেই দিকেই এগোচ্ছি।
প্রশ্ন: মাঝে তো আপনি রাজনীতিতেও যোগ দিয়েছিলেন।
রণিতা: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মানে আমাদের দিদি খুব ভালবাসেন আমাদের। আমিও ভালবাসি দিদিকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হয় ওঁর সঙ্গে। যদি কিছু মনে হয় বলার দরকার, সেটা বলি। সক্রিয় ভাবে কোনও দিন রাজনীতি করিনি।
প্রশ্ন: রাজনীতি করতে চান সক্রিয় ভাবে?
রণিতা: রাজনীতি একটা বড় ক্ষেত্র। আমার মানসিক অবস্থান সে জায়গায় নেই।
প্রশ্ন: তা হলে বিয়ে করবেন কবে?
রণিতা: যখন যাঁর সঙ্গে হওয়ার হবে। আগামী তিন বছরে তো তেমন পরিকল্পনা নেই। হঠাৎ করে কিছু হলে সেটা বলতে পারছি না।