‘নিম ফুলের মধু’ সিরিয়ালের পর্ণা ওরফে পল্লবী শর্মা বাস্তবে কেমন? ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: কত বছর পর আবার সিরিয়ালে ফিরলেন?
পল্লবী: দু’বছর হয়ে গেল। আসলে এই বিরতিটার প্রয়োজন ছিল। কোনও সিরিয়াল শুরু হলে তখন দিনের পুরো সময়টাই সেখানে দিতে হয়। মাসে একটা দিন ছুটি পাওয়া যায়। নিজের জন্য আর কোনও সময় থাকে না। তাই এই দু’বছর শুধুই নিজেকে সময় দিয়েছি। এই কয়েক দিনে নিজের শখগুলো মন ভরে পূরণ করেছি।
প্রশ্ন: ২০১৬ সালে শুরু হয়েছিল ‘কে আপন কে পর’ সিরিয়াল। অভিনয় জীবন কী ভাবে শুরু হল আপনার?
পল্লবী: ২০১৬ নয়, আমার অভিনয় জীবনের শুরু হয় ২০১২-তে। আমি প্রথম কাজ করি অন্য একটি চ্যানেলে। প্রথম সিরিয়ালের নাম ছিল ‘নদের নিমাই’। সেখান থেকে সুশান্তদার একটি সিরিয়ালে সুযোগ পাই। তখন আমি দশম শ্রেণিতে পড়ি। ২০১৩ সালে আমি মাধ্যমিক দিই। তার পর কলেজে পড়ার সময় ‘কে আপন কে পর’ সিরিয়াল শুরু হয়। এই সিরিয়াল শেষ হওয়ার পর আমার মনে হয়েছিল বিরতিটা খুব জরুরি। দর্শকের ‘জবা’ চরিত্রটা ভুলে যাওয়া প্রয়োজন।
প্রশ্ন: তা-ও কি ‘জবা’-কে ভুলতে পেরেছেন দর্শক?
পল্লবী: পুরোপুরি যে ভুলেছেন, তা বলব না। তবে যত ক্ষণ না নতুন চরিত্র দর্শকের সামনে আসবে, তত দিন তো আমি জবাই থেকে যাব। তাই পর্ণা আসার পর এখন দর্শক জবার পরিবর্তে আমায় পর্ণা বলে সম্মোধন করা শুরু করেছেন।
পল্লবীর ছোটবেলাটা মোটেই সহজ ছিল না। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: প্রথম সিরিয়াল ‘নদের নিমাই’-এর সুযোগ কী ভাবে এসেছিল?
পল্লবী: না, আসলে তেমনটা নয়। মা-বাবা দু’জনকেই আমি ছোটবেলায় হারিয়েছি। তাই পিসির বাড়িতেই আমি মানুষ। পিসি এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। উনি আগে অভিনয় করতেন। পিসির সঙ্গেই এমন একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এক পরিচালক আমায় দেখে অভিনয় করতে ইচ্ছুক কি না, জানতে চান। সেই সময়ই ‘নদের নিমাই’ সিরিয়ালের জন্য নায়িকার খোঁজ চলছিল। সেখান থেকেই আমার এই অভিনয় যাত্রার শুরু।
প্রশ্ন: অর্থাৎ আপনার ছোটবেলা খুব একটা সহজ ছিল না?
পল্লবী: না, আমার ছোটবেলা মোটেই সহজ ছিল না। আমি তখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তখন মা-কে হারাই। ব্রেন টিউমর হয়েছিল। বাবার পক্ষে আমায় একা বড় করা সম্ভব ছিল না। বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে থাকতেন। দাদাও বাবার সঙ্গে সেই ব্যবসায়ই যুক্ত হয়। তাই পিসির বাড়িতেই আমি থাকতাম। আর যখন দশম শ্রেণিতে পড়ি মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগের দিন বাবা মারা যান। আচমকাই হার্ট অ্যাটাক হয়। দেখতাম, সবার মা-বাবা পরীক্ষার সময় ডাবের জল খাওয়াচ্ছে, খাবার খাওয়াচ্ছে। আমি তখন হবিষ্যি খেতাম। সে এক অদ্ভুত সময় গিয়েছে। তবে ‘কে আপন কে পর’ করার পর আর আমায় ফিরে তাকাতে হয়নি। নিজের ফ্ল্যাট কিনে নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছি একার সংসার। পিসিও মারা গিয়েছেন দু-তিন বছর হল।
প্রশ্ন: একা বাঁচা কতটা কঠিন? কাজ না থাকলে ফাঁকা লাগে? মনে হয়, এক জন থাকলে নিজের সব মনের কথাগুলো বলতে পারতাম?
পল্লবী: যদিও পিসিও আমার অনেকটা অভাব পূরণ করেছেন। পিসিরও কোনও সন্তান ছিল না। তবুও মা-বাবার জায়গা তো কেউ পূরণ করতে পারে না। সেই জন্য কখনও কখনও মনে হয়, সেই অভাবটা এই জীবনে আর পূর্ণ হবে না।
২০১২ সালে প্রথম ধারাবাহিকে হাতেখড়ি পল্লবীর। ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: পেশাদারি সংগ্রাম না কি ব্যক্তিগত সমস্যা, কোনটা সামলানো কঠিন?
পল্লবী: সত্যি বলতে আমায় পেশাদারি কোনও সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়নি। তবে ব্যক্তিগত সমস্যা সামলানো বেশি কঠিন।
প্রশ্ন: এই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে একটা ধারণা আছে, সহজেই নতুনরা ভুল পথে পা বাড়ায়। এমন সব প্রলোভন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখলেন কী ভাবে?
পল্লবী: না, আমি কখনও কোনও খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে আমি প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি। তেমন লড়াই আমায় করতে হয়নি। কারও খারাপ নজরের শিকার হইনি কখনও।
প্রশ্ন: পল্লবী কি ‘সিঙ্গল’?
পল্লবী: হ্যাঁ, আমি এখনও সিঙ্গল। আসলে আমি খুব সহজে প্রেমে পড়ি না।
প্রশ্ন: আগেও জীবনে কেউ আসেনি?
পল্লবী: তা বললে ভুল বলা হবে। প্রেমে পড়েছি। কিন্তু সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। কারণ সেই মানুষটা ভাল ছিল না। যখন প্রথম ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছি তখন হয়েছিল। এখন আমি জীবনে শান্তি চাই। এমন এক জনকে চাই যাঁর মধ্যে নিজের বাবাকে খুঁজে পাব।