‘সঙ্গীতের এই বৃত্তায়ন নিয়েই আমার বেঁচে থাকা।’ ফাইল চিত্র।
কুড়ি বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। সে দিনের রাঘব আর আজকের রাঘবের পার্থক্য কোথায়?
গানের দিক থেকে ম্যাচিয়োরিটি এসেছে আজকের রাঘবের। কিন্তু আসলে মানসিকতায় খুব একটা বদল হয়নি আমার। নিজের পরিবার। গুরুর সান্নিধ্য আর রেওয়াজ। ভাল গান শোনা। মেয়েদের তৈরি করা। আমি এই নিয়েই সেই নৈহাটিতেই থাকি। এগুলো তো আগেও ছিল, আজও আছে। তবে সঙ্গীতকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
কুড়ি বছরের জন্য গানের অনুষ্ঠান। কিন্তু অন্য শিল্পীদের এত ভিড় কেন?
ভিড় ঠিক নয়। আমার গানের বন্ধুরা যারা এই কুড়ি বছরে আমার সঙ্গী, তাদের জানাই আমার সঙ্গীত জীবনের কুড়ি বছর উদযাপন হবে। এই উপলক্ষে নিছক একটা অনুষ্ঠান না করে আমার গানের ভাবনাকে সামাজিক মূল্যবোধের জায়গায় নিয়ে যেতে চাই। তারা তখন সাগ্রহে এগিয়ে আসে। লোপামুদ্রা, রূপঙ্কর, অনুপম, মনোময়, মীর, শুভমিতা। আমরা তো সেই কবেকার সঙ্গী। ওরাও থাকবে আমার সঙ্গে। ওরা নিজের ইচ্ছের গান গাইবে। আবার আমার পছন্দের গানও গাইবে। ওরা আমার পাশে আছে। আর কী চাইব আমি? আমার এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সবাই সেই সমস্ত বাচ্চাকে কিছু আর্থিক সাহায্য করতে চাই যাদের অর্থের অভাবে হার্ট সার্জারি হচ্ছে না। ‘হৃদয়া’ সংস্থা আমার এই কাজে এগিয়ে এসেছে। সেই কারণেই কলামন্দিরে ২৪ অগস্ট ‘উনিশে কুড়ি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
আয়োজন তো সুন্দর। কিন্তু এই যে আজকের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি মনে হয় না এখন চ্যালেঞ্জের মুখে?
কিছুটা। এত গান, এত গায়ক। অতিরিক্ত কিছুতে তো গুণগত মান পড়েই যায়। একটা গান তৈরির পর মানুষকে তো সময় দিতে হবে সেটা শোনার। সেটার মধ্যে থাকার। তার মাঝেই আরও কত গান চলে আসছে। গান বেশি দিন টিকছে না এই কারণে। ভাল কাজের সঙ্গে খারাপ কাজও হচ্ছে। খারাপ কাজের ভিড়ে ভাল কাজ হারিয়েও যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ব্যক্তিগত জীবনে আমি বদলাইনি: গওহর খান
এখন কি ফোক বা ‘রঙ্গবতী’-র মতো গানই শুধু হিট করবে ?
ঠিক তা নয়। ফোক হলেই হিট হবে এমন নয়। তবে আমার মনে হয়, আরও নতুন সঙ্গীত পরিচালকদের উঠে আসা উচিত। তাঁরা হয়তো ওই সিনেমার প্রযোজক, পরিচালকের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। সঙ্গীত পরিচালক যাঁরা আছেন শুধু তাঁরাই একচেটিয়া কাজ করে যাবেন... এর বাইরে আসা উচিত। তারা নিঃসন্দেহে ভাল কাজ করে চলেছেন। কিন্তু আরও নতুন মুখ চাই।
আপনিও তো সঙ্গীত পরিচালনা করছেন।
হ্যাঁ। সামনে একটা ছবির কাজ আছে। এ ক্ষেত্রে আপনি প্রশ্ন যখন করলেনই তখন বলি, আমাদের মতো সঙ্গীত পরিচালক যাঁরা সে ভাবে নিয়মিত ছবির কাজ করেন না, তাঁদের সঙ্গে একটু সময় করে কিন্তু পরিচালকদের বসা উচিত। একটু সময় দিলে আমি নিশ্চিত, আমার মতো অন্য নতুন সঙ্গীত পরিচালকদের কাজও অন্য মাত্রায় পৌঁছবে। আসলে ব্যাটে বলে ম্যাচ হচ্ছে না।
ফিল্মের গানে আপনাকে কেন খুব বেশি শোনা যায় না কেন ?
আমিই কিন্তু কলকাতাকে সামলে মুম্বইতে সবচেয়ে বেশি গান করেছি। শংকর-এহসান-লয়, সাজিদ-ওয়াজিদ, শান্তনু মৈত্র, সঞ্জয়লীলা ভন্সালীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। কে জানে! হয়তো মুম্বইয়ের দিকে মন দিয়েছি বেশি। আমার গানের নিজস্ব গায়কী আছে, সেটা হয়তো সব বাংলা ছবির সঙ্গে যায় না। আমার পিআর খুব খারাপ। সেটাও একটা কারণ হতে পারে। আমার কিন্তু তাতে রিগ্রেট নেই। আমি বরাবর প্রাইভেট অ্যালবামের ওপর জোর দিয়েছি। নিজের গানের ওপর জোর দিয়েছি। আজও তাই। অভিনেতা ছাড়াও গান হিট করানো যায়। ফিল্ম ছাড়াও গান হিট করানো যায়। আমার এটাই বিশ্বাস। এটাই লড়াই।
আরও পড়ুন: গায়ক বদল
পারফর্মার হিসেবে রূপঙ্কর নিজেকে অনেক বদলেছেন। চুলের কাট থেকে পোশাক... আপনি সেই এক থেকে গেছেন। কেন ?
রূপঙ্কর খুব ভাল বন্ধু আমার। খুব ভাল শিল্পী। আমি মনে করি, আমার মিউজিকের ভাল হলে আমি কী পোশাক পরেছি সেটা ম্যাটার করে না। কিশোরকুমার কী পোশাক পরে কোন গান হিট করিয়েছেন সেটা নিয়ে কি আলোচনা হয়? হয় না। আমি তাতে বিশ্বাসও করি না।
আপনার কি মনে হয়, এখন কে এক নম্বরে? রূপঙ্কর, মনোময়...
গান গাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও নম্বর হয় না। আমরা যে যার মতো কাজ করে চলেছি। আর একটা কথা, কে কত গান গাইল সেই সংখ্যা দিয়েও কিছু হয় না। লতাজি, আশাজির অজস্র গান, তাই বলে কি বাণী জয়রাম বড় শিল্পী নন? পোশাক, সংখ্যা এ সব দিয়ে শিল্পীর বিচার হয় না।
শুধু কি তাই? আপনি গানের ব্যাপারেও তো খুঁতখুঁতে। অফার এলে লুঙ্গি ডান্স গাইবেন ?
নাহ্। মুম্বইতে এসেছিল এ ধারার গানের প্রস্তাব। আমি গাইনি। আমি আমার মা-র কাছে, গুরুজির কাছে যে ভাবে গান শিখেছি তার পর কোনও চটুল শব্দের গান আমি চটজলদি জনপ্রিয়তার জন্য গাইব না। পারব না। যদি গাই, আমার শিক্ষাই আমাকে প্রশ্ন করবে। আর নব্বইটা এই ধরনের নিরর্থক গান গাওয়ার চেয়ে দশটা ভাল গান গাইলেই যথেষ্ট।
আরও পড়ুন: ‘বাড়ির মহিলাদের কথা চুপচাপ শোনাই আমার কাজ’
ভাল গান মানেই কি হিট গান?
নাহ্। প্রথম কথা, এখন বেসুরো বলে কিছু হয় না। মুম্বই হোক, কলকাতা হোক, কিছু মানুষ বসেই আছে বেসুরো বেতালা লোককে সফটওয়্যারের সাহায্যে সুরে তালে করে দেওয়ার। তাই এখন অনেক বেসুরো শিল্পীর গানও বাজারে হিট। তার সঙ্গে সুরে ভাল গানের কোনও যোগ নেই।
আর গানে লবির খেলা?
হ্যাঁ, তা-ও আছে। আমি মাথা ঘামাই না। তার চেয়ে নতুন গান নিয়ে ভাবি। ভাল কাজ নিশ্চয়ই কিছু করেছি। নয়তো নৈহাটি থেকে আমেরিকা পৌঁছলাম কী করে?
খারাপ লাগার জায়গা কি নেই?
সময়ের সঙ্গে বন্ধু বদলায়। সহযোগিতা বদলায়। কিছু কিছু মানুষের কাছে খুব আঘাত পেয়েছি। কাজ করে যাচ্ছি। আর আমার মেয়েদের তৈরি করছি। এখন এমন একটা সময় যখন আমার দুই মেয়ের সুরে এ বার আমি গাইব। সঙ্গীতের এই বৃত্তায়ন নিয়েই আমার বেঁচে থাকা।